কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে গত পাঁচ মাসে চালের বাজার থেকে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা পকেটস্থ করেছে চালের বাজারের নিয়ন্ত্রক বিশেষ সিন্ডিকেটের সদস্যরা। অথচ এই সময়ে দেশে চালের মজুদ এক কোটি টনের বেশি ছিল বলে নিশ্চিত করেছেন খোদ খাদ্যমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা। এমনকি বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর মজুদদারদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু রহস্যজনক কারণে এই অভিযানে গুটিকয়েকজন চুনোপুঁটি ব্যবসায়ী ধরা পড়লেও এখনও অধরা নেপথ্যের নায়করা। যদিও সরকারের নীতিনির্ধারকদের দাবি, এই মজুদদাররা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে চাল নিয়ে চালবাজি ও ষড়যন্ত্র করেছে। তাই সংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন এই ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। সরকারের সংশ্লিষ্টরা জানান, চালের এই কৃত্রিম সংকটে সরকারের ভাবমূর্তির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ খাদ্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনও বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া চালের দাম অতিরিক্ত হওয়ায় চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন ভোক্তারা। যদিও চাল ব্যবসায়ীদের নানা ছাড় দেয়ায় এই মুহূর্তে কোনো কোনো স্থানে চালের বাজার স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। তবে এখন পর্যন্ত খুচরা বাজারে পড়েনি তেমন কোনো প্রভাব। প্রায় জায়গায় আগের বাড়তি দামে অথবা সামান্য কিছু কমিয়ে চাল বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা। এমন পরিস্থিতিতে সিন্ডিকেট সদস্যরা সরকারের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা বাগিয়ে নিয়ে নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের রমরমা ব্যবসা। আর সাধারণ জনগণকে জিম্মি করে ইতিমধ্যেই ২২ হাজার কোটি টাকা নিজের পকেটে ঢুকিয়েছেন সিন্ডিকেট সদস্যরা।

ভোক্তাদের অভিযোগ, এই কারসাজির নেপথ্যের নায়কদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হলেও তা কার্যকর করা যায়নি। উল্টো বাজার স্বাভাবিক করতে অভিযুক্ত সেই সিন্ডিকেটের হোতাদের নিয়েই ১৯ সেপ্টেম্বর বৈঠকে বসতে হয়েছে সরকারের সংশ্লিষ্টদের। এরপরই শর্ত সাপেক্ষে পরিস্থিতি বদলে যায়। চালের দাম কেজিতে কয়েক টাকা কমবে। আর বাড়বে না। এমন নিশ্চয়তা দিয়ে তারা আরও কিছু দাবি মানতে বাধ্য করে সরকারকে। দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দূরের কথা, উল্টো সিন্ডিকেটের একাধিক দাবি মানতে হয়। চাল ব্যবসায়ীদের হয়রানি না করতে স্থানীয় প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয় বৈঠক থেকেই। বন্ধ হয়ে যায় রাঘব বোয়ালদের চালের গুদামে তল্লাশি। ছোটখাটো অভিযানের মাধ্যমে দু’চারজন চুনোপুঁটি ধরা হলেও চাল কারসাজির নেপথ্যের নায়কদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি আড়ালেই থেকে যায়। এজন্য তাদের কোনো জবাবদিহিতা করতে হয়নি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জানান, চালের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে সরকার খুব সতর্ক দৃষ্টি রাখছে। একই সঙ্গে ঠাণ্ডা মাথায় ও গভীর বিচার-বিশ্লেষণ করে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে সরকারকে অনেক কিছুতেই নমনীয়তা দেখাতে হয়। খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামও বলেন, ‘বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এছাড়া আর কিছু করার নেই।’ এ বিষয়ে কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, আসলে দেশে চালের কোনো সংকট নেই। সংকট সরকার ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে। যদি চালেই সংকট হতো, তাহলে মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের পর বন্দরে এবং মিলগেটে চালের দাম কেজিতে ২-৫ টাকা পর্যন্ত কমত না। অর্থাৎ বুঝতে হবে এখানে একটা বড় কারসাজি হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চলতি বছর হাওর অঞ্চলে অকাল বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এর সঙ্গে যোগ হয় ব্লাস্টরোগ। এই দুই বিপর্যয়ে সারা দেশে বোরোর ফলন অনেক কম হয়। অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে চাল সংগ্রহেও সংশ্লিষ্টরা ব্যর্থতার পরিচয় দেয়। সামান্য কয়েক টাকা দাম বাড়াতে রাজি না হওয়ায় উত্তরাঞ্চলের চাল ব্যবসায়ীরা এক জোট হয়ে সরকারের কাছে চাল বিক্রি বন্ধ করে দেয়। অথচ দ্রুত কমতে থাকে সরকারের চালের নিরাপত্তা মজুদ। যে পরিমাণ চাল সরকারিভাবে প্রতি মাসে বিতরণ হচ্ছে তা অব্যাহত রাখতে গিয়ে সরকারের মজুদ তলানিতে নেমে যায়। খাদ্য অধিদফতরের অদূরদর্শিতায় চালের মজুদ গড়তে পরিকল্পিত এবং যথাযথ সময়োপযোগী পদক্ষেপ ছিল না। এমন দাবি করে সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারের মজুদ কমে যাওয়ায় বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের ভূমিকা রাখার সুযোগ নষ্ট হয়। বিশেষ করে ১০ টাকা কেজি দরে সাড়ে ৭ লাখ টন চাল বিতরণের ফলে এবার চালের মজুদ তলানিতে ঠেকে। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো চালের মজুদ দেড় লাখ টনে নেমে আসে। আর এই সুযোগে একশ্রেণীর ব্যবসায়ী অতি মুনাফার লক্ষ্যে চালের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। তাদের কারসাজিতে মোটা চালের দাম প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৫৪ টাকায় ওঠে।

আরও জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে চাল সংগ্রহে সরকারের মূল্য সঠিক ছিল না। সরকারি সংগ্রহ মূল্য কেজিপ্রতি ৩৪ টাকা নির্ধারণ করায় বোরো সংগ্রহ ব্যর্থ হয়। ৮ লাখ টন কেনার টার্গেট থাকলেও মিলারদের সঙ্গে সরকারের চুক্তি হয় মাত্র আড়াই লাখ টনের। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বাজারের চালের সরবরাহ বাড়াতে এপ্রিলের শুরুতেই চালের আমদানি শুল্ক তুলে দেয়ার প্রস্তাব দেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু কৃষকের স্বার্থ চিন্তা করে এই প্রস্তাব নাকচ করে সরকারের নীতিনির্ধারকরা। এই সুযোগে সিন্ডিকেট দফায় দফায় বাড়াতে থাকে চালের দাম। পরিস্থিতি সামাল দিতে আমদানি শুল্ক ২৮ থেকে কমিয়ে দুই শতাংশ নামিয়ে এনেও চাল বাজারের লাগাম টানা যায়নি।বিষয়টি স্বীকার করে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ১৯ সেপ্টেম্বর বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীদের চাল মজুদই বাজারে চালের দাম বৃদ্ধির একমাত্র কারণ। হাওর অঞ্চলে বন্যা হওয়ার পর থেকেই তারা মজুদ শুরু করেছিল। আমরা যে (বোরোর) ক্রয় মূল্য ৩৪ টাকা দিয়েছিলাম, বাজারের দামের সঙ্গে এর বিরাট ফারাক ছিল। ফলে আমরা (বোরো) সংগ্রহ করতে পারিনি।এর আগে খাদ্যমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, একশ্রেণির ব্যবসায়ী ও মিল মালিক চাল নিয়ে চালবাজি ও ষড়যন্ত্র করছেন। তিনি ওই সিন্ডিকেট সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমরা চালবাজি ও ষড়যন্ত্রের মধ্যে আছি। কারণ বাংলাদেশেই এক কোটি টন চাল আছে। তারপরও এ অবস্থা। আমি মজুদদার, আড়তদার, মিল মালিকসহ সবার প্রতি আহ্বান জানাব, এখনই ভালো হয়ে যান, সময় আছে। আপনারা যেভাবে (চালের) দাম বাড়াচ্ছেন, যেভাবে সিন্ডিকেট করে দেশে চালবাজি শুরু করেছেন, বিভ্রাট সৃষ্টির চেষ্টা করছেন, তা কোনো অবস্থাতেই বরদাশত করা হবে না।’

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোসহ (বিবিএস) সরকারি-বেসরকারি একাধিক সংস্থার তথ্যমতে, দেশে দৈনিক জনপ্রতি ৫৬২ গ্রাম চালের চাহিদা রয়েছে। সে হিসাবে দেশের ১৬ কোটি মানুষের জন্য প্রতিদিনের চালের চাহিদা ৮৯ হাজার ৯২০ টন বা ৯০ হাজার টন। ওই হিসাবে এক মাসে চালের প্রয়োজন হয় ২৭ লাখ টন। ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার দরের তথ্যানুযায়ী, গত এক বছরে সরু চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ১৫ থেকে ১৭ টাকা। মিনিকেট চালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১৮-১৯, নাজিরশাইল ১৫-১৬ টাকা, মাঝারি চাল ১২-১৩, পাইজাম/লতা (সাধারণ মানের) ১২-১৩, পাইজাম/লতা (উন্নত মানের) ১২-১৩ এবং মোটা চাল ১৮-২০ টাকা। খাদ্য অধিদফতর সংশ্লিষ্টদের দাবি, বোরো সংগ্রহে সরকারের টার্গেট ছিল ৮ লাখ টন চাল। কিন্তু মিল মালিকরা সরকারকে মাত্র আড়াই লাখ টন চাল দিতে চুক্তি করেছেন। সরকার মোটা চাল কেজিপ্রতি ৩৪ টাকা নির্ধারণ করেছে, যা বাজারে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে বাকি সাড়ে ৫ লাখ টন চাল মিলাররা সরকারকে না দিয়ে প্রতি কেজিতে ১৬ টাকা বেশি মূল্যে বাজারে বিক্রি করেছে। এতে মিলাররা অতিরিক্ত মুনাফা করেছে ৮৮০ কোটি টাকা। তবে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে প্রতি মাসে কমবেশি ২৭ লাখ টন চালের চাহিদা রয়েছে। মূলত এই চালের ওপরই অতিরিক্ত মুনাফা করেছে চক্রটি। মোটা ও চিকন চালে গড়ে প্রতি কেজিতে ১৬ টাকা মুনাফা ধরে হিসাব করলে প্রতি টনে ১৬ হাজার টাকা বাড়তি মুনাফা করেছে সিন্ডিকেট সদস্যরা। সে হিসাবে এক লাখ টন চালে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে ১৬০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ২৭ লাখ টনে প্রতি মাসে চার হাজার ৩২০ কোটি টাকা হিসাবে গত পাঁচ মাসে এই চক্রের পকেটে গেছে ২১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ জনগণের পকেট থেকে হাতিয়ে নেয়া এই টাকার পরিমাণ ২২ হাজার কোটি টাকার কম নয় বলে দাবি বাজার সংশ্লিষ্টদের।

চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে ১৭ সেপ্টেম্বর গুদামে অতিরিক্ত চাল মজুদ রাখার অভিযোগে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাস্কিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক কেএম লায়েক আলীকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হয়। তাদের মিলেও অভিযান চালানো হয়। এতে চালের কেজিপ্রতি আরও ৩-৫ টাকা বৃদ্ধি পায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে চালকল মালিকের সঙ্গে ১৯ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে বৈঠক করেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক। বৈঠকে রীতিমতো তর্কে জড়ান মন্ত্রী-ব্যবসায়ীরা। চালের মজুদ নিয়ে সরকারের দাবি ও অভিযোগ পাত্তা না দিয়ে ব্যবসায়ীরা চালের দাম নির্ধারণ, সময়মতো শুল্ক তুলে না নেয়াসহ সরকারের বিভিন্ন পলিসির কঠোর সমালোচনা করেন। এমনকি চালের অবৈধ মজুদ প্রমাণ করতে মন্ত্রীদের পাল্টা চ্যালেঞ্জ দেন তারা। এরপরই সরকারের নীতিনির্ধারকরা পিছু হটেন। এক পর্যায়ে চালের দাম কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা কমানোর আশ্বাস দেন ব্যবসায়ীরা। এজন্য তারা সরকারের কাছে চাল আমদানি ও পরিবহনে পাটের বস্তার পরিবর্তে প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহারের অনুমতি বাগিয়ে নেন। পাশাপাশি স্থলবন্দর দিয়ে চালবাহী ট্রাক দ্রুত পার ও রেলপথে চাল আনার ব্যবস্থা করার নিশ্চয়তা চান। এছাড়া তাদের কোনো ধরনের হয়রানি যাতে না করা হয় সে নিশ্চয়তাও বাগিয়ে নেন ব্যবসায়ীরা। ওই বৈঠকের পর থেকে কমতে শুরু করে চালের দাম।

এ প্রসঙ্গে সাবেক খাদ্য সচিব আবদুল লতিফ মণ্ডল বলেন, চালের বাজার অস্থিরতার পেছনে চাল ব্যবসায়ীদের কারসাজি ও সরকারের ভুল নীতি দায়ী। সরকারের দাবি অসাধু ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে চালের বাজার অস্থির করেছে। এ কারণে কাউকে কাউকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আবার তাদের সঙ্গেই বৈঠক করে হয়রানি না করার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ চাল কারসাজির দায়ে অভিযুক্তরা পার পেল। শেয়ারবাজারেও তাই হয়েছে। চাল কারসাজির অভিযোগ অস্বীকার করে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাস্কিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কেএম লায়েক আলী বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল আমরা অবৈধ মজুদ করে চালের দাম বাড়িয়েছি। এজন্য আমাদের গুদামে অভিযানও চালানো হয়েছিল। তিন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে আমরা সরকারকে এ নিয়ে চ্যালেঞ্জও দিয়েছিলাম। কিন্তু এর কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি সরকার।’ এখন আমরা চাল বিক্রি করতে পারছি না ক্রেতার অভাবে। আমাদের চাল বিক্রি হচ্ছে না অথচ বাজারে চালের কোনো সংকটও নেই। তাহলে এখন কোথা থেকে চাল আসছে? সরকার খুঁজে বের করুক কারা চাল ছাড়ছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn