কিবরিয়া চৌধুরী-

নবীগঞ্জে জন্ম নেওয়া আল কায়েদার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ভারতে প্রেফতারকৃত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বৃটিশ নাগরিক সামিউন রহমান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়ে ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (এনআইএ) কাছে লিখিত আবেদন করেছে বাংলাদেশ। গত মাসে সামিউনকে নয়া দিল্লি থেকে গ্রেফতার করে সেখানের পুলিশ। অভিযোগ আছে, আল কায়েদার অঙ্গ সংগঠন ইসলামিক স্টেট অ্যানই দ্য আল কায়েদার মতো জঙ্গি সংগঠনের জন্য সদস্য সংগ্রহ করে সামিউন। পেশায় সে মধ্য লন্ডনের একজন মিনি-ক্যাব কন্ট্রোলার। একই অভিযোগে তাকে ঢাকায় বিগত ২০১৪ সালের ২৯শে সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। ওই সময়ে সে পারিবারিক বিরোধ মিটাতে সিলেট সফরে এসেছিল। তখন পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, সামিউনকে তুলে নিয়ে গেছে পুলিশ। এ খবর দিয়েছে ভারতের অনলাইন দ্য হিন্দু। এতে বলা হয়েছে, এনআইএ ও বাংলাদেশের র‌্যাবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, নিয়মিত ভিত্তিতে সন্ত্রাসী মামলার বিষয়ে তথ্য বিনিময় করে তারা। ওদিকে গত সপ্তাহে সামিউনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল ভারতে নিযুক্ত বৃটিশ হাইকমিশনকে। কমিশনের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, সামিউনের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি চেয়েছিল বৃটিশ হাইকমিশন। এরপর ভারত কনস্যুলার সুবিধা দেয় এবং কর্মকর্তারা সামিউনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তবে তাদের মধ্যে কি কথা হয়েছে তা জানা যায়নি। দ্য হিন্দু লিখেছে, ঢাকার জেলখানা থেকে এর আগে সামিউনের মুক্তি দাবিতে বৃটেনের একটি মানবাধিকার বিষয়ক প্রুপ কেজ (সিএজিই) প্রচারণা চালায়। তারা ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে এক বিবৃতিতে বলে, সামিউনকে গ্রেফতারের প্রেক্ষিতে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দেয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, সে আল নুসরা ফ্রন্ট সদস্য। আবার বলা হচ্ছে এ গ্রুপের ঘোর বিরোধী ইসলামিক স্টেটের সদস্য। এক পর্যায়ে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ঢাকার জেল থেকে মুক্তি দেয়া হয় সামিউনকে। তবে তারপর সে কিভাবে ভারতে প্রবেশ করেছে তা জানা যায় নি। তবে সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, জুলাই মাসে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে সে। দিল্লি পুলিশের দেয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০১৩ সালে আল কায়েদার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয় সামিউন। সিরিয়ায় গিয়ে তিন সপ্তাহের প্রশিক্ষণ নেয়। সেখানে এক বছর যুদ্ধ করে। পুলিশ আরো বলেছে, একটি যোদ্ধা গোষ্ঠী গড়ে তোলার জন্য তাকে পাঠানো হয় বাংলাদেশে। ২০১৪ সালে সে সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ, ঢাকা ও অন্যান্য স্থান সফর করে। এ সময় সে বেশ কিছু যুবককে উগ্রপন্থায় আকর্ষণ করে। তাকে গ্রেফারের পর তিন বছর রাখা হয় জেলে। এরপর এপ্রিলে জামিনে মুক্তি দেয়া হয়। এদিকে দিল্লি পুলিশ এক বিবৃতিতে বলেছে, মিজোরাম ও মণিপুরে রোহিঙ্গাদের পক্ষে লড়াই করার লক্ষ্য নিয়ে ঘাঁটি গড়ে তুলতে সে ভারতে প্রবেশ করে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে। সুত্রে আরো জানা গেছে, সম্প্রতি সময়ে সামিউনের মামার বাড়ি নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের মিঠাপুর গ্রামে সিলেট ও হবিগঞ্জের সিআইডি তথ্য সংগ্রহ করে। ওই এলাকায় সচেতন মহলে খুব বলাবলি করছেন এখানেকি সৃষ্টি হয়েছে কি আরেক সামিউন? নেশাখোর থেকে ভয়ঙ্কর জঙ্গি সামিউন ঃ ২৭ বছর বয়সী জঙ্গি সামিউন রহমানের বাড়ি নবীগঞ্জ উপজেলার দেবপাড়া ইউনিয়নের ফুটারচর গ্রামে। সে মৃত হামদু মিয়ার ২য় ছেলে। সামিউনের বড় ভাই সেলিম আহমেদসহ ৪ বোন ও মা লন্ডনে বসবাস করছেন। গ্রামের বাড়িতে গেলে তার সম্পর্কে অনেক তথ্য দেন আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা। জানা যায়, ২০১১ সালে সামিউনকে মাতাল অবস্থায় গ্রেফতার করে ইংল্যান্ডের পুলিশ। আদালত তাকে দেড় বছরের সাজাও দেন। সেখানে ৬ মাস কারাবাসের পর জামিনে বেরিয়ে আসেন সামিউন। ২০১২ সালের শেষের দিকে ফের বাংলাদেশে আসেন তিনি। দেশে ফেরার পর মাদকাসক্ত বখাটে সামিউনের মধ্যে অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করেন প্রতিবেশীরা। তারা জানান, মাদকসেবী সামিউনকে মদ, গাঁজা, হেরোইন ছেড়ে ধর্মীয় আচার-আচরণে ব্যস্ত দেখা যায়। মাথায় টুপি, পরনে পাঞ্জাবি ৫ ওয়াক্ত নামাজসহ ধর্মীয় কাজে ব্যস্ত থাকতেন সারাদিন। হঠাৎ এমন পরিবর্তন দেখে হতবাক হয়ে যান প্রতিবেশীরা। তখন প্রায় ১ মাস বাংলাদেশে থাকার পর আবারও তিনি লন্ডন চলে যান। সর্বশেষ তিনি ২০১৪ সালে বাংলাদেশে আসেন। তখন আর আগের মতো চাচা আব্দুল মান্নানের বাড়িতে থাকেননি। অবস্থান করেন এএসএনডেফ মিনি স্টোর নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পেছনে। এ সময় তিনি তাবলিগ জামাতেও অংশ নিতেন। স্থানীয় লোকজনকে ইসলামের দাওয়াত, নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত করার জন্য আহ্বান জানাতেন। ওই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে আইনশৃংখলা বাহিনী সামিউনকে আটক করে নিয়ে যান। তার কক্ষ থেকে উদ্ধার হয় জিহাদি বই, বিভিন্ন দেশের সিম কার্ড ও কয়েকটি মোবাইল সেট। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তিনজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট প্রদান করেন। চার্জশিটে দাবি করা হয়, ব্রিটিশ নাগরিক সামিউন রহমান সিরিয়া ফ্রন্টে সশস্ত্র জিহাদি কার্যক্রম পরিচালনা করতে আইএস ও নুসরা ব্রিগেডের জন্য মুজাহিদ সংগ্রহ করতে বাংলাদেশে এসেছিলেন। আল-কায়েদা নেতা আইমান আল জাওয়াহারী ঘোষিত একিউআইএস বা আল-কায়েদা অব ইন্ডিয়ান সাব কন্টিনেন্টের বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে জঙ্গি নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যও ছিল তাঁর।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn