রাজনীতি যেখানে ছিল সেখানেই আছে। ৪ বছর পরও কোনো কিছুই বদলায়নি। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের আগে সমঝোতার বহু উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। মধ্যস্থতায় ছিল জাতিসংঘ। কিন্তু সব প্রচেষ্টাই ভেস্তে যায়। বহু সত্য এখনো আলোর মুখ দেখেনি। তবে নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে আওয়ামী লীগ-বিএনপির অনড় অবস্থানের কারণেই মূলত ভেস্তে যায় সব উদ্যোগ। এতদিন পরে এসেও একই অবস্থানে আওয়ামী লীগ-বিএনপি, পরস্পরবিরোধী ও অনড়। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে দল দুটির পরস্পরবিরোধী অবস্থান একেবারেই স্পষ্ট হয়ে গেছে। ম্যাসেজ লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার। রাজনীতিতে সমঝোতার সম্ভাবনা সুদূর পরাহত। মূল বিরোধ নির্বাচনকালীন সরকার নিয়েই। যদিও এখন ডালপালা আরো বেশ গজিয়েছে। নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে আগের অবস্থানেই রয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন চায়। অন্যদিকে, বিএনপির অবস্থানে কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। তবে তা ভাষাগত। সে সময় বিএনপি অনড় ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে। এখন দলটি বলছে, সহায়ক সরকারের কথা। কিন্তু এই সরকার দেখতে কেমন হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। বিএনপি চায় সংসদ ভেঙে নির্বাচন। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের অবস্থান বিপরীত। সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়েও পরস্পরবিরোধী অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। আওয়ামী লীগ বর্তমান সীমানায় নির্বাচন করতে চায়। অন্যদিকে, বিএনপি চায় পরিবর্তন। ইভিএম চালুর পক্ষে অবস্থান ব্যক্ত করেছে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে, এতে ষড়যন্ত্র দেখছে বিএনপি। সেনা মোতায়েন প্রশ্নেও আওয়ামী লীগ-বিএনপির অবস্থান আলাদা। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ গতকালও বলেছেন, নির্বাচন কমিশনে আওয়ামী লীগ যে ১১ দফা প্রস্তাব পেশ করেছে তা গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহায়ক নয়। কিভাবে নির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, কিভাবে নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, কিভাবে ভোটের ফল পাল্টে দেয়া যায় সেই কৌশল আছে ওইসব প্রস্তাবনায়। যা সম্পূর্ণরূপে জনমতের বিপরীত।
প্রসঙ্গত, সংলাপে ৪০টি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে ৫৩১টি সুপারিশ পেয়েছে নির্বাচন কমিশন। ঢাকার পর্যবেক্ষকরা এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের একটি মন্তব্যের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। অতীতের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে সময় অস্থিতিশীলতার শঙ্কা রয়েছে বলে গত বুধবার মত দেন তিনি। ওইদিন বিজিএমএইএ নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে অস্থিতিশীলতার সম্ভাব্য প্রভাবের বিষয়ে সতর্কবার্তা দেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন অনেক পর্যবেক্ষক। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে কেন্দ্র করে এরইমধ্যে নানা নাটকীয় ঘটনা ঘটে গেছে। তিনি অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। তার মেয়াদ রয়েছে তিনমাসের সামান্য বেশি। ঢাকায় ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, তার আর দায়িত্বে ফেরার সুযোগ নেই। পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত কোনদিকে গড়ায় তাই হবে দেখার বিষয়।
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বিএনপি এখনো কোনো প্রস্তাব পরিষ্কার করেনি। বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এরইমধ্যে তিনমাসের লম্বা লন্ডন সফর শেষে দেশে ফিরেছেন। দেশে ফেরার পরদিনই আদালতে হাজির হতে হয়েছে তাকে। দুটি মামলায় আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেছে। একটি মামলায় আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে তিনি বক্তব্য রেখেছেন। দাবি করেছেন, ট্রাস্টের একটি টাকাও তছরুফ হয়নি। বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে দুই ডজনের বেশি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে দুটি মামলা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এসব মামলার রায় কী হয় তা নিয়ে বিএনপিতে এক ধরনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা রয়েছে। তবে সহসাই খালেদা জিয়া তার নির্বাচনকালীন সরকারের ফর্মুলা হাজির করতে পারেন। ফর্মুলা যাইহোক সমঝোতার মাধ্যমে সে দাবি পূরণের সম্ভাবনা কম। পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে বলে অনেক পর্যবেক্ষকই ধারণা করেন। তবে পরিস্থিতি কেমন হবে সে ব্যাপারে বেশকিছু ধারণা এখনই পাওয়া যাচ্ছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn