আবুধাবির যুবরাজ শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নায়হান, বাহরাইনের বাদশা বিন ইসা ও মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসির সাথে বিন সালমানের ছবিটি ছড়িয়ে পড়েছে টুইটারে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান তিন সপ্তাহ ধরে জনসমক্ষে না আসার কারণেই প্রশ্ন উঠেছে তাকে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না কেন? তাকে কি হত্যা করা হয়েছে? ইরান ও রাশিয়ার গণমাধ্যম বলছে, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান হয়তো আর বেঁচে নেই। তবে এসব খবরকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে সৌদি রাজপরিবার। তারা জানিয়েছে সৌদি যুবরাজ নিরাপদে ও সুস্থ আছেন এবং মিসরে ছুটি কাটাচ্ছেন। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদুল ফাত্তাহ আল সিসির বিশেষ আমন্ত্রণে সৌদি যুবরাজ সপরিবারে সেখানে গিয়েছেন। তার সাথে আবুধাবি ও বাহরাইনের নেতারাও রয়েছেন। তার জনসমক্ষে না আসার সুযোগ নিয়ে ইরানি ও রুশ মিডিয়া এ মর্মে খবর ছড়িয়েছে যে, গত মাসের কথিত অভ্যুত্থান চেষ্টার সময় তিনি হয়তো মারা গেছেন। কিন্তু কয়েক দিন আগে সৌদি আরব সফর থেকে আসা পাকিস্তান উলামা পরিষদের চেয়ারম্যান তাহির মাহমুদ আশরাফি ডেইলি পাকিস্তানকে নিশ্চিত করেছেন সৌদি যুবরাজ নিরাপদ ও সুস্থ আছেন। তিনি বলেন, ২১ এপ্রিলের পরেও মোহাম্মদ বিন সালমান দুইটি কেবিনেট মিটিংয়ে যোগ দিয়েছেন এবং বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি আরো বলেন, সৌদি আরব ভুয়া খবরকে গুরুত্ব দেয়নি। এ জন্য এ সম্পর্কে কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। বিন সালমানের অবস্থান নিয়ে রহস্য কাটেনি, শনিবার স্পুটনিক নিউজ জানায়, সৌদি আরবের প্রভাবশালী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের অবস্থান নিয়ে ধোয়াশা কাটছে না। বেশ কিছুদিন ধরেই প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না তাকে; আর এই সুযোগে রটছে বিভিন্ন খবর। ইরানি গণমাধ্যমগুলো তো তার মৃত্যুর খবরই দিয়ে দিয়েছে! এ ব্যাপারে ইরানের কাইহান পত্রিকা ‘আরব রাষ্ট্রের একজন ঊর্ধ্বতন কর্তকর্তার’ বরাত দিয়ে দাবি করছে, সৌদির রাজপ্রাসাদে হামলার সময় যুবরাজ বিন সালমানের শরীরে দু’টি বুলেট আঘাত হানে। তিনি হয়তো মারা গেছেন। কারণ ওই ঘটনার পর যুবরাজকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।

তবে পাকিস্তান টুডের খবরে বলা হয়েছে, সৌদি দূতাবাসের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এই গুঞ্জনকে ‘ভুয়া খবর’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘জনগণের মধ্যে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে শত্রুপক্ষ এ প্রচার চালিয়েছে।’গত ২৭ এপ্রিল তোলা একটি ছবি দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘২১ এপ্রিল যদি কোনো হামলা হয়ে থাকত, তাহলে ২৭ এপ্রিল এই অনুষ্ঠানে হাজির হওয়া এটি কীভাবে সম্ভব? তাই এই মিথ্যাকে প্রত্যাখ্যান করলাম।’ ছবিতে দেখা যাচ্ছে চেয়ারে বসে অন্যান্য কর্মকর্তাদের সাথে একটি অনুষ্ঠান উপভোগ করছেন বিন সালমান। এছাড়া আরেকটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে টুইটারে যাতে দেখা যাচ্ছে আবুধাবির যুবরাজ শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নায়হান, বাহরাইনের বাদশা বিন ইসা ও মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসির সাথে বিন সালমানকে। গত শুক্রবার ছবিটি পোস্ট করেছেন যুবরাজের ব্যক্তিগত দপ্তরের পরিচালক বাদের আল-আসাকার। তিনি লিখেছেন, কয়েক দিন আগে মিসরের প্রেসিডেন্ট ফাত্তাহ আল সিসি এক বন্ধুত্বপূর্ণ বৈঠকের আয়োজন করেছিলেন।

বিন সালমান প্রায়শ মিডিয়াতে তার সরব উপস্থিতি জানান দেন। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে জনসম্মুখে তার অনুপস্থিতি সবাইকে অবাক করেছে। এপ্রিলের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও সৌদি আরব সফরে গেলে তখনও যুবরাজ বিন সালমানকে কোনো অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি। এরপর থেকেই তার বিষয়ে চারদিকে গুজব ছড়াচ্ছে। আর এ কারণেই বিষয়টি নিয়ে কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে। ইরানের বেশ কিছু গণমাধ্যম বিন সালমানের জনসম্মুক্ষে অনুপস্থিতি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বর্ণনা করছে। অনেকেই বিষয়টিকে দুই প্রতিবেশী দেশের শীতল সম্পর্কের ফসল হিসেবে দেখছেন। রাশিয়ার স্পুটনিক নিউজ বলেছে, ইরান মিডিয়ার ধারণা, গত মাসে এক অভ্যুত্থান চেষ্টার সময় মোহাম্মদ বিন সালমান নিহত হন। ইরানের গণমাধ্যমগুলোর দাবি, গত ২১ এপ্রিল রিয়াদের রাজপ্রাসাদে এক হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় গোলাগুলিতে সৌদি যুবরাজ বিন সালমান নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে সৌদি আরবের পক্ষ থেকে ও কোন আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়া হয় নি। দেশটির কোন পর্যায়ের কর্মকর্তাই এ বিষয়ে কোথাও কিছু বলছেন না। ইরানের প্রেস টিভি জানিয়েছে, ২১ এপ্রিল এর ঘটনার পর থেকে সৌদি কর্তৃপক্ষ যুবরাজ বিন সালমানের কোনো ছবি বা ভিডিও প্রকাশ করেনি। প্রেস টিভির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গণমাধ্যমে যুবরাজ বিন সালমানকে প্রায়ই দেখা যায়; কিন্তু রিয়াদে ওই গোলাগুলির পর মাস খানেক তাকে আর গণমাধ্যম দেখা যাচ্ছে না। ফলে দীর্ঘ সময় যুবরাজ বিন সালমানের এমন অনুপস্থিতি তার বেঁচে থাকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। গত বছর জুন মাসে নিজের চাচাতো ভাইকে যুবরাজের পদ থেকে সরিয়ে দিলে আলোচনায় আসেন ৩২ বছর বয়সী মোহাম্মদ বিন সালমান। এর পর থেকেই রক্ষণশীল সৌদি আরবে অথনৈতিক ও সামাজিক সংস্কারমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। একই সঙ্গে দুনীর্তিবিরোধী অভিযান চালিয়ে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক আলোচনায় আসেন। দেশের তরুণ সমাজের মধ্যেও তার গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে। দুনীর্তিবিরোধী অভিযানে দুই শতাধিক ক্ষমতাধর ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেন। এরমধ্যে রয়েছে প্রিন্স,বতমান ও সাবেক মন্ত্রী ও ধনকুবের ব্যবসায়ী।আবার প্রতিবেশি ইয়েমেনে হামলা ও ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব প্রকাশ করার কারণে তিনি মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn