- সুনামগঞ্জ বার্তা - http://sunamganjbarta.com -

অশ্রুসিক্ত জানাযায় রক্তিম বিদায় দিপু ভাই০০০

শাহরীয়ার বিপ্লব(ফেসবুক স্টেটাস থেকে)

কিছুই লিখতে পারছি না। কোন কিছুই আসছে না। শুধুই স্মৃতি। কিছু স্পষ্ট। কিছু অস্পষ্ট। এলোমেলো। অগোছালো। রাতেই খবরটা পেয়ে হাসপাতালে যাই। বিছানায় শুয়ে আছেন। সবাই ব্যস্ত। ডাক্তার, নার্স, পুলিশ, আর্মি, দলীয় নেতা, কর্মী জনগণ। এর ভিতরেই দীপু ভাই কি ঘুমাচ্ছেন? ডাকবো? ওমা নাকে তূলা। চোখের নীচে কানের কাছে লাল লাল রক্তের ছোপ ছোপ দাগ। গভীর ঘুম। মহা ঘুম। চিরতরের ঘুম। দুপুরে যখন শিব বাড়ীতে গিয়েছিলাম পেশাগত কৌতূহল থেকে। আমাকেই দেখেই বলে উঠলেন, ভিতরে যাইও না, ওখানে যাওয়া নিষেধ। তবু আমাকে যেতে দেখে আমার এক সাংবাদিক বন্ধু কে বললেন, হারা জীবন খালি বিপদ ডাইক্কা আনে। যাও গিয়া মর গিয়া। উনাদের ক্রস করে একটি বাসার উপরে গেলাম যেখানে পরিচিত বড়ভাইরা নিরাপদে অভিযান দেখছিলেন। সেখান থেকে দেখছিলাম সাংবাদিক বন্ধুদের এক্টিভিটিজ। দীপু ভাইকেও দেখছি সাংবাদিকদের সাথে কাজ করছেন । একজনকে দেখলাম দীপু ভাইয়ের কাঁধে ক্যমেরা রেখে ছবি তুলছেন।

বিকালে চলে আসি বালুচরে একটি বাসায় দাওয়াত খেতে। সন্ধায় মুসলিম হলে অন্য একটি অনুষ্ঠানে। বন্ধু মানোয়ার যখন সংবাদটি দিল বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। দৌড়ে যাই ওসমানীতে। আমাকে সাবধান করে নিজেই মরে গেলেন? কিভাবে বিশ্বাস করি দিপু ভাই? আপনি তো বোম্ব ডিস্পোজালের ট্রেনিংপ্রাপ্ত। এই বোমায় আপনাকে মরতে হলো। দুপুরের কথাগুল্য কানে বাজছে এখনো। কত লাশ টেনেছি জীবনে। আপনার সাথেও বহুবার।হবিগঞ্জে থাকার সময় প্রায় প্রতিটি দুর্ঘটনায় আপনি আমায় ডাকতেন। আমার ডিউটি না থাকলেও আপনার কারনে আমাকে যেতে হতো। রাতের পর রাত আপনার টহল গাড়িতে আমি ডিউটি করেছি। আমার রুটিন মাফিক অন্য ডিউটি থাকার পরেও এসপি সাহেবকে বলে আমাকে হাইওয়ে পেট্রোলিংয়ের নাইট ডিওটিতে লাগিয়ে দিয়েছিলেন শুধু আপনাকে সংগ দেয়ার জন্যে। আপনি বলতেন নিজের মানুষ পেলে বুকে সাহস বেশি পাই। আমিও ক্রাইম কন্ট্রোলের কাজ পেয়ে এনজয় করছিলাম নিজেকে। বড় ভাই থেকে পড়ে বন্ধুর মতো হয়ে গিয়েছিলাম।

সেই সময়কার আনন্দ সুখের দিনগুলু দ্রুত মনে পড়ছিল।  আমি সিলেটে আসার কিছু দিন পর আপনিও চলে আসেন। সিলেটের অনেক ঘটনার স্বাক্ষী আপনি। বার বার আমাকে বড়ভাই সুলভ শাসন করেছেন। আমার বিয়েতেও বড় ভাইয়ের মত দায়িত্ব পালন করেছিলেন। আপনার কোন কিছুই ঠিক ছিল না। দু:খের কথাগুলু আমায় বলতেন। আপনার আমার পরিচিত অপজিশনের ছেলেগুলি নেতাদের তেল মেরে মেরে ভালো ভালো পদে বসে আছে কিন্ত আপনি পজিশনের পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেও গুরুত্বহীন পদে বসে আছেন এ নিয়ে ভিতরে ভিতরে ক্ষোভ থাকলেও কারো কাছে যাননি তদ্বির করতে। এ নিয়ে আপনাকে কিছু বললে আপনি আমাকে উলটা ঝাড়ি দিতেন। কিন্তু আজকে শাসন করে আজকেই চলে গেলেন। কিভাবে মেনে নেই। আমেরিকাথেকে আসার পরে আপনাকে বলেছিলাম চলে যান। শুধু আমি না। সারোয়ার ভাই, বিজিত দা সহ পরিচিত অনেকেই। আপনি রাগ করে বললেন, তুমার ব্যবস্থা করে দেই তুমি যাও। গিয়া দেখ কেমন লাগে। দীপু ভাই, অকালে মৃত্যুর স্বাদ পেতেই বুঝি এসেছিলেন? বুকটা ভার হয়ে আসছে। মুখে দলা আসে। বমি বমি লাগছে। কেন দীপু ভাই। কত সংগী সাথিকেই তো হারালাম। একসাথে ডিউটি করা অবস্থায় বন্ধু সার্জেন্ট করিমকেও হারিয়েছিলাম। ওর লাশ নিয়ে রাজার বাগে মিছিল করেছিলাম। লাশ নিয়ে রাজার বাগ থেকে আরিচা পর্যন্ত গিয়েছিলাম ইমোশনাল হয়ে।

আজ কেনই বা সিলেটে এলাম। আমার তো এখানে আসার কথা না। তবে কি আপনাকে এভাবে বিদায় দিতেই আসা। কফিন টানার জন্যেই কি ঢাকা থেকে আসা? আপনাকে কি চিরবিদায় দিতে দিলাম? বুকের ভার কমছে না দীপু ভাই। আপনি তো নাইওরপুল মসজিদে প্রতিদিন নামাজ আদায় করতেন। আপনি না বলতেন আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে তদবির করবেন না। তবে কি মৃত্যুর তদবির করেছিলেন? কিভাবে মেনে নেই? যদি কাঁদতে পারতাম। জোরে জোরে কান্না। গগন বিদারী কান্না। কিংবা চিৎকার। জোরে যদি চিৎকার দিয়ে একটি শ্লোগান দিতে পারতাম। আকাশ বাতাস ফাটিয়ে যদি বলতে পারতাম, জংগীবাদ মৌলবাদ -ধ্বংস হোক নিপাত যাক।। দীপু ভাই, বিশ্বাস করুন আপনারা আমাদের ঋণী করে গেলেন। লাল সবুজের এই মানচিত্রকে আরো গাঢ় লাল করে দিয়ে গেলেন। সবুজ মাটিকে আরেকটু ভিজিয়ে দিয়ে গেলেন। এ ঋন আমরা শোধ করবোই। এ দেশকে আফগানিস্থান সিরিয়া হতে দেবো না। এ আমার দেশ। বাংলাদেশ। এ আমার মা। মায়ের আঁচলে যতই খামছে ধরুক জংগীবাদের বিষাক্ত শকুন। শকুনের এ ডানা ভাংগবোই। এ আমাদের অংগীকার।।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on Facebook [১]Share on Google+ [২]Tweet about this on Twitter [৩]Email this to someone [৪]Share on LinkedIn [৫]