অহমিকায় নয়, অমায়িকতা যার স্বভাব
সুখেন্দু সেন(ফেসবুক থেকে)-ষাটের দশকের গোড়ার দিকে কচিকাঁচা বেলায় আমাদের স্বপ্নচোখে প্রজাপতি ডানার রং মাখিয়ে দিতেন যে নিপুণ রং কারিগর সেই শাহরিয়ার ভাই’ই ক্রমে হয়ে ওঠেন সংবাদ মাধ্যম আর সাংবাদিকতার বিশাল মহীরুহ। সংবাদ জগতের সোনার চাবি মুঠোয় পুরে একে একে খুলে নেন বিশ্বসংবাদ মাধ্যমের বিশাল সম্রাজ্যের একএকটি স্বর্ণদ্বার। লাভ করেন বিশ্বজোড়া সাংবাদিকতার অনবদ্য স্বীকৃতি। ইত্তেফাকের স্টাফ রিপোর্টার থেকে বিশেষ প্রতিনিধি, কূটনৈতিক প্রতিনিধি, করাচি প্রতিনিধি, নির্বাহী সম্পাদক। মর্নিং নিউজ, ডন, ইভনিং স্টার পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার, দুবাইয়ের খালিজ টাইমস্, ভারতের ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, এশিয়ান এজ, ডেকান হেরাল্ড পত্রিকার বাংলাদেশ প্রতিনিধি। মর্যাদাশীল আন্তর্জাতিক সংবাদ সাময়িকী নিউজ উইকের প্রতিনিধি, চট্টগ্রামের ডেইলি পিপল্ ভিউ এর প্রধান সম্পাদক, ঢাকার ডেইলি সান এর প্রথম সম্পাদক। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি, লন্ডন ভিত্তিক কমনওয়েলথ জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের দুইবারের নির্বাচিত সভাপতি এবং ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠনের ইন্টারন্যশনাল প্রেসিডেন্ট ইমেরিটাস। সাংবাদিকতার ষোলকলা পূর্ণ করে এখন অবসর যাপন করছেন সত্তরোর্ধ এ নিত্য তরুন।
এ বৎসর উৎস প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর বর্নাঢ্য জীবনের কতকথা, স্মৃতিকথার সংকলন গ্রন্থ–“হাসান শাহরিয়ার, সাংবাদিকতার জীবন্ত কিংবদন্তি”। এতে লিখেছেন বাংলাদেশের সাংবাদিকতা, শিল্প সাহিত্য জগতের তারকা মহাতারকারা। ড.মিজানুর রহমান শেলী, ড,আনিসুজ্জামান, শামসুজ্জামান, গোলাম সারোয়ার, হাশেম খান, মুনতাসির মামুন, আবেদ খান, ড.মোহাম্মদ সাদিক, মতিউর রহমান চৌধুরী, শওকত মাহমুদ, অজয় দাশগুপ্ত, শাকুর মজিদ, নূরুল কবির থেকে শুরু করে হালের ইলেকট্রনিক মিডিয়া তারকা জ,ই মামুন, মুন্নী সাহা। কানাডা, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা সহ বিভিন্ন দেশের খ্যাতিমান কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিক। আরোও লিখেছেন ভারতীয় হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা,শুভ দত্ত, শিক্ষাগুরু শ্রদ্ধাভাজন মু,আব্দুর রহিম। লিখেছেন জন্মশহর সুনামগজ্ঞের আরো কয়েকজন গুনীজন যে যেমন ভাবে দেখেছেন, সহপাঠি, প্রতিবেশী, সতীর্থ, আত্মীয়, গুনগ্রাহী, প্রিয়জন রূপে।
তেমন গুনীজন না হলেও শাহরিয়ার ভাইয়ের স্নেহবঞ্চিত না হওয়ায় আমার একটি নিবন্ধও জ্ঞানীগুনী মহাজনদের লেখার পাশে ঠাই করে নিয়েছে। এতে অবশ্য আমার সীমাবদ্ধতার অকপট স্বীকারোক্তি ছিলো এভাবেই– “হাসান শাহরিয়ারের এমন বর্ণাঢ্য জীবন সমারোহ হাতড়িয়ে বিচিত্র মণি মাণিক্যের সন্ধান লাভ আমার কর্ম নয়। এজন্য অনেক দক্ষ জহুরী, জ্ঞানী-গুনী মহাজনেরা রয়েছেন। আমি বরং দেখি একজন সহজ সরল আবেগী ভালবাসার কাদামাটি-মন হাসান শাহরিয়ার ভাইকে। পেশাগত সাফল্য আর খ্যাতির শীর্ষে আরোহন করেও যিনি আপন মানুষকে খাটো দেখেননি। অহংকার তাঁকে বশ করেনি। শৈশবের মতই মুগ্ধ হই তাঁর নিখাদ ভালবাসায়। অবাক হই যখন এই প্রচার বিমুখ অকৃতদার মানুষটি স্মিত মুখের আড়ালে এক ম্লান বেদনার করুণ সরলতায় বলেন–ঢাকায় তিনদিন আছো, একদিনও বাসায় আপ্যায়ন করতে পারিনি। আজ দুপুরে ঢাকা ক্লাবে লাঞ্চ, ভুলোনা কিন্তু। সে আহ্বান এড়াই কি করে। হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার হারানো সুরে সময়ের রুক্ষপথে হারিয়ে যাওয়া কচিকাঁচা মন দোলে উঠে। নীরবে অনুসরণ করি। বিস্মিত হই তাঁর আন্তরিকতায়। মুগ্ধ হই তাঁর অনুভবে অতীত, অতীত নয় রূপে জেগে থাকায়।। চেনা মুখগুলি দীর্ঘ অদর্শন আর সংস্পর্শ দূরত্বের পরেও যেন চেনা হয়ে থাকে আপন হাতের তালুর মত।” বরাবরের মতই প্রাপ্তিযোগের কৌশল প্রয়োগে অমনোযোগী শাহরিয়ার ভাই কোন অহমিকায় নয়, নিতান্ত অমায়িকতায় কর্মকীর্তির শ্রেষ্ঠত্ব ও তারকাগৌরব ধারণ করে আছেন এক বিস্ময়কর অনন্যতায়। আজকের দিনের অনেক বুদ্ধিবৃত্তিক খ্যাতিমানদের অন্তত এ বোধটুকু আত্মস্থ করার প্রয়োজন রয়েছে।