নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের দাবিতে রাস্তায় অবস্থান নেয়া শিক্ষার্থীদের ওপর কোনো ধরনের বলপ্রয়োগ না করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ডাকা এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করছে পুলিশসহ সংশ্লিষ্টরা। তবে আন্দোলনে রাজনৈতিক অনুপ্রবেশ ঘটেছে বলে দাবি করেন তিনি। বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে একদল দুর্বৃত্ত। আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে বিএনপি।

গত ৯ বছরে তারা একদিনের জন্যও আন্দোলন করতে পারেনি। এখন শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ এ আন্দোলনে ভর করেছে। এদিকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি চলাকালে ধানমন্ডিতে ‘আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে হামলা’ সংঘর্ষ-ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়ায় ‘১৭ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন’ বলে জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, পাশেই জাপান ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে এরা ভর্তি রয়েছেন। গণমাধ্যমকর্মীরা চাইলেই তালিকায় থাকা নেতাকর্মীদের আহত হওয়ার বিষয়টি হাসপাতালে গিয়ে দেখতে পারেন। এ সময় আহত নেতাকর্মীদের তালিকা পড়ে শোনান ওবায়দুল কাদের। এর আগে সকালে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক শেষে আরেক দফা সংবাদ সম্মেলন করেন ওবায়দুল কাদের। সেখানে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে রাজনৈতিক অনুপ্রবেশ ঘটেছে। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনকে কেউ দলীয়ভাবে সমর্থন দিয়েছেন, এটাকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ দিতে চেয়েছেন। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে থেকে কেউ যাতে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে না পারে তার জন্য অনুপ্রবেশকারীদের গতি-বিধি গোয়েন্দা বাহিনী লক্ষ্য রাখছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, শিক্ষার্থীদের ৯টি দাবি আমলে নিয়ে বাস্তবায়ন শুরু হয়ে গেছে। মালিক-চালক-হেলপার বিচারের মুখোমুখি হয়েছে। আমার মনে হয়, এর মধ্য দিয়ে এ পরিস্থিতিতে সরকার তার জরুরি কাজটি করে ফেলেছে। দুই পরিবারকে ডেকে সান্ত্বনা দিয়েছে, সহায়তা করেছে। দুই পরিবারের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী নিয়েছেন। ওই দুই পরিবারও শিক্ষার্থীদের ঘরে ফেরার আহ্বান জানিয়েছে।

তিনি বলেন, এরমধ্যে দুর্ঘটনাকবলিত এলাকায় আন্ডারপাস করার কাজও করা হচ্ছে। এটি সেনাবাহিনী করছে। স্পিডব্রেকারের দাবির প্রেক্ষিতে সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে রাম্বলস্ট্রিটও করা হবে। ফিটনেসবিহীন সব গাড়ির রুট পারমিট বাতিল করা হবে। ইতিমধ্যে বিআরটিএ এই কাজও শুরু করেছে। মন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির যৌক্তিকতা খুঁজে পেয়েছি। এগুলোর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন। তাদের প্রতিবাদের কণ্ঠকে স্বাগত জানিয়েছি। এখানে কোনো গোপনীয়তা নেই। যারা শিক্ষার্থীদের ঘরে ফিরতে বলেছেন, তাদের শুভবোধকে স্বাগত জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, যারা কোমলমতিদের আন্দোলনে ঢুকে রাজনীতির বিষবাষ্প দিতে চেয়েছেন। নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চেয়েছেন, এদের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকতে হবে।

কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দমন না করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে পুলিশ  ধৈর্যধারণ করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। শান্তির স্বার্থে শিক্ষার্থীদের বাড়ি/ক্যাম্পাসে ফেরাতে অভিভাবকসহ সবার সহযোগিতা চেয়েছেন ওবায়দুল কাদের। বিএনপি ওবায়দুল কাদেরের পদত্যাগের যে দাবি করেছে তার জবাবে তিনি বলেন, বিএনপির মতো নালিশ পার্টির টপ টু বটম নেতারা পদত্যাগ করলে দেশের মানুষ স্বস্তি পাবে। বাসচালক ও শ্রমিকদের অঘোষিত আন্দোলনের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, শঙ্কায় চালকরা নামতে চাইছে না। আমরা নামাতে চেষ্টা করছি। এর আগে ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে দলের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, একেএম এনামুল হক শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ অংশ নেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn