শামীম আজাদ-

কাঁঠাল খেয়ে বুদ হয়ে আছি। কাঁঠাল যে একটি যৌনাবেদন ভরপুর, মাথা খারাপ করা ফল এ আবার বুঝলাম। স্বাদ তার এখনো অটুট। সেই সাঁতাশ বছর আগের মতন। প্রতিবার একেকটি কোয়া মুখে পুড়েছি আর কি সব্বনাশ! দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে লেগে গেছে রসের তুফান। সুমিষ্ট ও ক্রাঞ্চি এ কাঁঠাল এসেছে সিলেট থেকে। আমার অনুজ শোয়েবের নাসারাবাদের নৈসর্গিক বাড়ি থেকে। এ কাঁঠাল বড় হয়েছে দোয়েল ও শালিকের মৈথুন তৃপ্ত কাকলীতে। এর নির্যাস তার গুণগত মান বৃদ্ধি করেছে ঐ অদূরে আভঙ্গীর পীরের জিকিরের শব্দে চা বাগানের ঝর্নার সুমিষ্ট শব্দে। এ কাঁঠাল অপেক্ষায় ছিলো আমি বিলেত থেকে এলে আমার দাঁতের সঙ্গে রসকথা করবে বলে।

আমি তাই করছি। তীব্র ফুর্তিতে তুরুৎ তুরুৎ করে গুলাইল মারার মত ফেলে দিচ্ছি পিচ্ছিল বীজ।  রোদে শুকালে পরে এ বীজে ভর্তা হবে, হালুয়া হবে, চ্যাপা শুটকীতে ডাট শাক ও মূলার শিকড়ে হবে এক মারাত্মক ঝোল।  লিপ্সটিক লাগানো ছিলোনা বলে ঠোঁটজোড়া এখন আঠাময় সুধা হয়ে আছে। এখন আর  আমি মির্জাপুর চা খাবোনা। এর মৌজে থেকেই লিখছি।

বাইরে বানানী গুলশানের আশমানী ধারা। হাওয়া নেই। বজ্রের শব্দও নেই। শুধু গুনগুন গানের মত বৃষ্টি। কাঁঠাল এলেই বুঝি তিনি পুরাই দশ মাস।
ফাঁটা ধরে থাবা দিয়ে  টান মেরে অবাক হয়ে যাই।  খুলে গেছে সোনালী দরোজা। দেয়ালের গা থেকে উন্মুখ হয়ে আছে যুথবদ্ধ স্বর্ণালী রসের ছোট ছোট মট্‌কা।  তেল মাখিয়ে ধরতেই হাতের মুঠোর শুয়ে গেল।  চোখ বন্ধ করে পুরোটাই একেক একেক বারে মুখে পুড়ে, মনে হচ্ছিল চক চক রসটাই মুখে মেখে আমিও  সোনালী হয়ে যাই। মনে হচ্ছিল এখন বালিশ চাই বালিশ! আমি এখন এর সাথে না ঘুমালে আর বাঁচবো না।

এতযে ভাল লাগছে তার কারণো হতে পারে দীর্ঘ দিন তা না খাওয়া।  দেশে আসার ঠিক দুদিন আগে লন্ডনের উন্মাদ গরমে স্যান্ডেল পরে, ছাতা মাথায় বেরিয়ে দেখি সবাই আমার দিকে তাকাচ্ছে। এখানের মানুষ গা খুলে গায়ে রোদের মাখন গলায়। আমি ভাই বাংলাদেশের মেয়ে।  এমন গরমে আমরা মাথায় নূরজাহান ছাতা দিই। আমি ফুলেল ছাতা মাথায় দিয়ে ব্রিকলেনে পাড়া দিয়েই দেখি কাঁঠাল এসে গেছে!

দোকান দোরে পেট ছেড়ে দিয়ে তাকিয়ে আছে। মানে দেশেও চলছে কাঁঠাল পাকানো গরম। তা হলে কি এখন মধুমাস!

তাকিয়ে দেখি ফড়ফড়ে সাদা কাগজের মোড়কে খোপে খোপে বাক্সে শুয়ে আছে জর্দা রঙা আম।  সেখান থেকেই ম ম গন্ধে ডুবে গেছে গ্রসারীর তাজা ভেরী মাংসের গন্ধ।  কলপ দেয়া দাড়িতে হাত বুলিয়ে এক ভদ্রলোক প্রায় কুস্তি করে কুঁতিয়ে কাঁতিয়ে একেকটা কাঁঠাল কাউন্টারে এনে ওজন যাচাই করছেন। বাংলা টাকায় তার দাম পড়ছে আড়াই থেকে তিন হাজারের মত।  ওজন নেয়া শেষ হলেই বলছেন, বাই ই কাটোল চাউল্লা না ল্যাটল্যাটা?

আফনে কুনটা বালা ফাইন? লযাটল্যাটা।। ইটা বাংলাদেশোর মুড়ি দিয়া দুধ দিয়া খাইতে যে মজা। ইটা ল্যাটলেটা। তো আমার পছন্দ চাইল্লাটা। কচকচে হবে। মিঠা কম হলেও ক্ষতি নাই। কিন্তু যেটা খেয়ে লিখছি সেটার গুনছিল ঊভয়বিদ।

লেখক: কবি 

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn