তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলায় গ্রেফতার কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবর কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন স্বজনরা। বুধবার ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম কেশব রায় চৌধুরী আসিফের জামিন ও রিমান্ড নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়ার পর থেকে এ শিল্পী কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। কারাসূত্রে জানা গেছে, কারাগারে আসিফকে সাধারণ সেলে রাখা হয়েছে। সেখানে তিনি উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন। তবে তাকে কারা মেডিকেল থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে। আসিফের স্ত্রী সালমা আসিফ মিতু তার স্বামীর শারীরিক অবস্থা নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আসিফের অসুস্থতার চিকিৎসা সনদ আইনজীবীরা আদালতে উপস্থাপন করেছেন। নিয়মিত ওষুধ না খেলে তার উচ্চ রক্তচাপ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়বে। আসিফকে নিয়ে আমি চিন্তিত। মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টায় তেজগাঁওয়ের এফডিসি এলাকায় নিজ স্টুডিও থেকে আসিফ আকবরকে গ্রেফতার করে সিআইডির একটি টিম। পরে সিআইডি জানায়, তথ্যপ্রযুক্তি আইনে তেজগাঁও থানায় সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী শফিক তুহিনের করা একটি মামলায় আসিফকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ মামলার বিষয়ে আসিফের স্ত্রী মিতু জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলেকে বলেন, শফিক তুহিনের অভিযোগ একেবারেই ঠিক নয়৷ এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি৷ আসিফ আগে থেকে কিছুই জানতেন না৷

শফিক তুহিন মামলার এজাহারে অভিযোগ করেছেন, গত ১ জুন রাত ৯টার দিকে চ্যানেল ২৪-এর সার্চলাইট নামে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, আসিফ আকবর অনুমতি ছাড়াই তার সংগীতকর্মসহ অন্যান্য গীতিকার, সুরকার ও শিল্পীর ৬১৭টি গান সবার অজান্তে বিক্রি করেছেন। পরে তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করে জানতে পারেন, আসিফ আকবর আর্ব এন্টারটেইনমেন্টের চেয়ারম্যান হিসেবে অন মোবাইল (প্রা.) লিমিটেড কনট্যান্ট প্রোভাইডার, নেক্সনেট লিমিটেড গাক মিডিয়া বাংলাদেশ লিমিটেড ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গানগুলো ডিজিটাল রূপান্তরে ট্রু-টিউন, ওয়াপ-২, রিংটোন, পিআরবিটি, ফুলট্রেক, ওয়াল পেপার, অ্যানিমেশন, থ্রিজি কনট্যান্ট ইত্যাদি হিসেবে বাণিজ্যিক ব্যবহার করে অসাধুভাবে ও প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অর্থ উপার্জন করেছে। এজাহারে তিনি আরও উল্লেখ করেন, এ ঘটনা জানার পর তিনি গত ২ জুন রাত ২টা ২২ মিনিটে তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে অনুমোদন ছাড়া গান বিক্রির এ ঘটনা উল্লেখ করে একটি পোস্ট দেন। তার ওই পোস্টের নিচে আসিফ আকবর নিজের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে অশালীন মন্তব্য ও হুমকি দেন। পরের দিন রাত ৯টা ৫৯ মিনিটে আসিফ আকবর তার প্রায় ৩২ লাখ লাইকার সমৃদ্ধ ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে লাইভে আসেন। ৫৪ মিনিট ৩৪ সেকেন্ড লাইভ ভিডিওর ২২ মিনিট থেকে তার বিরুদ্ধে অবমাননাকর, অশালীন ও মিথ্যা-বানোয়াট বক্তব্য দেন। ভিডিওতে আসিফ আকবর তাকে (শফিক তুহিন) শায়েস্তা করবেন এ কথা বলার পাশাপাশি ভক্তদের উদ্দেশে বলেন, তাকে যেখানেই পাবেন সেখানেই প্রতিহত করবেন।

এ নির্দেশনা পেয়ে আসিফ আকবরের ভক্তরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে হত্যার হুমকি দেন। আসিফ আকবরের এ বক্তব্য লাখ লাখ মানুষ দেখেছে। তিনি উসকানি দিয়েছেন। এতে তার (শফিক তুহিন) মানহানি হয়েছে বলে দাবি করেন। এ বিষয়টি সংগীতাঙ্গনের সুপরিচিত শিল্পী, সুরকার ও গীতিকার প্রীতম আহমেদসহ অনেকেই জানেন বলে এজাহারে শফিক তুহিন উল্লেখ করেছেন। এদিকে গ্রেফতারের পর বুধবার আদালতে হাজির করা হলে আসিফ বলেন, ২০০৮ সালে একটি চুক্তি হয়েছিল। এর পর ২০১৪ সালে নতুন আইন হওয়ায় আগের চুক্তি মোতাবেক কেউ-ই লাভবান হয়নি। আমার বিরুদ্ধে যারা মামলা করেছেন, তারাই আমার আগে ফেসবুকে কমেন্ট (কটূক্তি) করেছে। তারাই আমার মানহানি করেছে। কিন্তু আমি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করিনি। গত তিন বছর ধরে তারা এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করছে। বিষয়টি নিয়ে দুবার মোহাম্মদপুর থানায় গিয়েছিলাম। তিনি আরও বলেন, ২০১৪ সালে গ্রামীণফোন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হই। এ অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। ফেসবুকে আমি কোনো হুমকি দিইনি। আমার ভক্তরা দিতে পারেন। আদালতের ডকে (আসামি রাখার নির্ধারিত স্থান) দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় সব সময়ই আসিফের মুখে হাসি ছিল। এদিকে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারার এক শিল্পীর করা মামলায় আরেক শিল্পী আসিফের গ্রেফতারের বিষয়টি নিয়ে সংগীতাঙ্গনে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে শিল্পী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি আলাউদ্দীন আলী ডয়েচে ভেলেকে বলেন, যে ঘটনা ঘটে গেছে সেটি দুঃখজনক৷ আমি নিজে ক্যান্সারের রোগী৷ ফলে তেমন কোনো উদ্যোগ নিতে পারিনি৷ তবে অনেক সিনিয়র শিল্পী উদ্যোগ নিয়েছেন৷ আশা করি, সমাধান হয়ে যাবে৷ যা ঘটে গেছে, এটি কাম্য ছিল না৷ আগেই উদ্যোগ নেয়া উচিত ছিল৷

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn