প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের পাশে দাঁড়ানোই আওয়ামী লীগের লক্ষ্য। এ দেশের কোনো মানুষ যেন একবেলাও না খেয়ে থাকে সেজন্যই বিভিন্ন ভাতার ব্যবস্থা করেছে বর্তমান সরকার।মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে ইলেকট্রনিক উপায়ে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বিভিন্ন ভাতা বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে ভাতা প্রদান কার্যক্রম চালু হবার ফলে এখন থেকে কোনো মধ্যস্বত্বভোগী কারও কাছ থেকে কমিশন নিতে পারবে না, কারণ ভাতাভোগীর টাকা তার নিজের অ্যাকাউন্টেই যাবে। তিনি বলেন, আগে ভাতার টাকা ব্যাংক ও পোস্ট অফিসের মাধ্যমে যেত। এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। আজ আমরা সেই ডিজিটাল পদ্ধতিতে যার যা প্রাপ্য তার কাছেই পৌঁছে দেব। কেউ আর কমিশন খেতে পারবে না। সরাসরি টাকা আপনার হাতে পৌঁছে যাবে। প্রতিটি জায়গায় নামের তালিকা করে ডাটাবেজ করে রাখব। ১ কোটি ৪০ লাখ মা এখন মোবাইল ফোনে টাকা পাচ্ছে। সে কারণে তাদের বাচ্চারা স্কুলে যাচ্ছে। তবে সক্ষম উপকারভোগীরা যেন সরকারি সহায়তার পাশাপাশি কাজকর্মে নিয়োজিত থাকেন সে বিষয়ে জোর দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, শুধু ভাতার ওপর নির্ভরশীল হলে চলবে না। যারা কর্মক্ষম তারা কাজ করবেন। শুধু ভাতার ওপর নির্ভরশীল হয়ে বসে থাকলে কর্মবিমুখ হয়ে পড়বেন। তিনি আরও বলেন, কারও সংসার চালানোর দায়িত্ব আমরা নেব না। তবে যে ভাতা দেব, সে ভাতায় আপনাদের খাবারের ব্যবস্থা হবে। বয়স্ক মানুষ যখন ভাতা পায় তখন ছেলে-মেয়েরাও তাকে গুরুত্ব দেয়। তার পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যা দূর হয়। তাকে সংসারে বোঝা না ভেবে গুরুত্ব দেয়া হয়। শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ চাইলে আগামীতে তার দল আবারও ক্ষমতায় আসবে, তবে বিভিন্ন প্রকার ভাতা, স্বাস্থ্যসেবা, আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহহীনদের ঘরবাড়ি করে দেওয়াসহ জনকল্যাণমূলক কাজগুলো চালিয়ে নেয়াই তার সরকারের লক্ষ্য। তিনি বলেন, মানুষের ওপর আস্থা আছে, ভরসা আছে আমার। মানুষের জন্যই কাজ করি, মানুষের জন্যই রাজনীতি করি। আর সে কথা চিন্তা করেই আমরা বয়স্ক ভাতা থেকে শুরু করে হিজড়া, বেদে, চা শ্রমিক ইত্যাদিদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আমরা কাজ করেছি। সমস্যার সমাধান করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি তখন দেখি ৪০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম খাদ্য ঘাটতি দূর করতে হবে। তখন বিএনপি ছিল সংসদে বিরোধী দল। সংসদে তারা বলতো খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া যাবে না। তাহলে বাইরে থেকে সাহায্য পাওয়া যাবে না অর্থাৎ ভিক্ষা পাওয়া যাবে না। তিনি বলেন, আমি সরকারে আসার পর প্রত্যেক এলাকায় কমিউনিটি করলাম। এর মাধ্যমে প্রতিটি মানুষের দোরগোড়ায় চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেই। বিএনপি সরকার এসে কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়। কারণ এ থেকে সেবা পেলে জনগণ নাকি নৌকা মার্কায় ভোট দেবে। এরপর ২০০৮ এ ক্ষমতায় এসে পুনরায় সবকিছু চালু করি। সব ধরনের ভাতা কার্যকর করি। তিনি আরও বলেন, বিএনপি-জামায়াতের আমলে দুঃস্থ মানুষ সেবার বদলে বারবার নিগৃহিত হয়েছে। তখন সামাজিক ভাতা ১০০ টাকা দিলে মাঝখান থেকে ৫/১০ টাকা নিয়ে নিতো। এখানেও দুর্নীতি ছিল। এমন ব্যবস্থা চালু করে যাচ্ছি যাতে মানুষকে আর ভোগান্তি পোহাতে না হয়। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জানান, বয়স্ক-বিধবা-স্বামী নিগৃহিতা এবং প্রতিবন্ধীসহ অসহায় মানুষকে দেয়া হচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তার সহায়তা। বর্তমানে ৬৬ লাখ ১৬ হাজার প্রান্তিক মানুষ সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় সেবা পাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

জানা গেছে, এদের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে মঙ্গলবার থেকে এক লাখ ১৫ হাজার উপকারভোগী তাদের গত এপ্রিল-জুন সময়কালের ভাতাসমূহ ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে সরাসরি তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাবেন। মধুমতি, এনআরবি ও ব্যাংক এশিয়ার মাধ্যমে এই টাকা তোলা যাবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, চলতি অর্থ বছরে আরও ১০টি জেলার উপকারভোগীদের মধ্যে ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার পদ্ধতিতে ভাতা বিতরণ কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হবে। পরবর্তীতে সরাসরি ভাতাপ্রাপ্ত উপকারভোগীর সংখ্যা ৬৬ লাখে উন্নীত হবে বলে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান। অনুষ্ঠানে নরসিংদী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, গোপালগঞ্জের প্রান্তিক এলাকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীদের সঙ্গে ভিডিও কন্ফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সমাজ কল্যাণ মন্ত্রাণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ডা. মোজাম্মেল হক, অর্থ প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নরুজ্জামান আহমেদ এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসময় গণভবনে উপস্থিত ছিলেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn