কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বতর্মানে একটি নতুন চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই ব্যবহার মানুষের প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। অন্যপাশ থেকে আসা কল রিসিভকারী হয়ত জানেনই না যে তিনি একটি রোবটের সঙ্গে কথা বলছেন। গেল মঙ্গলবার গুগল একজন কম্পিউটার সহকারীকে উপস্থাপন করে; যা স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানুষের মতো অবিকল শব্দ করে ফোন কল করতে পারে, অন্ততপক্ষে তার পূর্ব রেকর্ডকৃত কথা প্রদর্শন করতে পারে। কিন্তু এই কলগুলোর রিসিভকারী আসল মানুষেরা সচেতনভাবে বুঝতে পারে না যে তারা মেশিনের সঙ্গে কথা বলছেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই ব্যবহার ভবিষ্যতে কণ্টকাকীর্ণ সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এআই সিস্টেম, যেটি কার্যকরভাবে তার সব কথোপকথন রেকর্ড করে, এর সঙ্গে মানুষকে ধোঁকা দিয়ে কথা বলানোটা কতটা ন্যায্য? গুগলের কর্তাব্যক্তিরা রোবটের কথোপকথনের সদয় ব্যবহারের দিকটি হাইলাইট করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এই কথোপকথনটি যখন স্প্যামার (যারা ম্যালওয়ার ছড়িয়ে দেয়) এবং স্ক্যামারদের হাতে পড়বে তখন এর পরিনাম কি হবে?

মঙ্গলবার বিকেলে সফটওয়্যার ডেভেলপার কোম্পানির বার্ষিক কনফারেন্সের সময় গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই তার ‘ডুপ্লেক্স’ নামে নতুন এই প্রযুক্তিটি প্রদর্শিত করতে পেরে উল্লাস প্রকাশ করেছেন। কিন্তু এটি নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, সেসম্পর্ক এড়িয়ে গেছেন। মানুষ যেমন কথা বলার সময় সামান্য বিরতি নিয়ে ‘হুম’ জাতীয় শব্দ উচ্চারণ করে। স্যালন বা রেস্টুরেন্টের বাস্তব কর্মীদের মতো কথা বলার সময়ে আরো বেশি মানবিক শব্দ করতে সহকর্মী এই রোবটটিতে এই ধরনের সিস্টেম সংযোজন করা হয়েছে। ম্যাথু ফেন্চ নামে একজন গবেষক বলেন, ‘এটা খুবই চিত্তাকর্ষক। কিন্তু পরিষ্কারভাবে এই ধরনের প্রযুক্তি আরো খারাপ ব্যবহারের দিকে পরিচালিত হতে পারে।’ লন্ডন ভিত্তিক সংস্থা ‘ফিউচার অ্যাডভোকেসি’র কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই’র নীতিগত প্রভাব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করেছেন তিনি। তিনি আরো বলেন, ‘মানুষ যেমন কথা বলার সময় অতিরিক্ত ছোট শব্দের ব্যবহার করে থাকে, সূক্ষ্মতার জন্য তেমনি করে রোবটিতেও তা সংযোজন করা হয়েছে। কেননা এই ধরনের ইঙ্গিত খুবই মানবকি এবং স্পষ্টভাবে অন্য প্রান্তের ব্যক্তিটি বুঝতে পারে না, তিনি রোবটের সঙ্গে কথা বলছেন।’ ফেন্চ বলেছিলেন যে, একই ধরনের চ্যাটবটের (কথা বলতে পারা রোবট) অসাধু ব্যবহারগুলি কল্পনা করা কঠিন নয়। যেমন- স্প্যামিং ব্যবসা, সিনিয়রদের স্ক্যামিং করা বা রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত শত্রুদের কণ্ঠ ব্যবহার করে বিদ্বেষপূর্ণ কল করা।

তিনি বলেন, ‘আপনি সম্ভবত এমন পরিস্থিতিগুলোকে খুব অস্থিতিশীল করে তুলতে পারেন; যেখানে লোকেরা অভিযোগ করেন যে, এমন কিছু তারা কখনও বলেনি।’ সুন্দর পিচাই এবং গুগল অন্যান্য এক্সিকিউটিভরা জোর দেয়ার চেষ্টা করেছেন যে, প্রযুক্তিটি এখনো পরীক্ষামূলক অবস্থায় আছে এবং সতর্কতা অবলম্বন করা হবে এবং এটি এখনো ভোক্তাদের ডিভাইসগুলিতে সহজলভ্য নয়। নতুন এই প্রযুক্তি ডিজাইনিংয়ে সাহায্য করেছে গুগলের ইঞ্জিনিয়ার ইয়েনিভ লেভিয়াথন এবং ইয়োসি ম্যাটিয়াস। মঙ্গলবার একটি ব্লগ পোস্টে তারা লিখেছেন, ‘এটি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যে ব্যবহারকারী এবং ব্যবসার এই পরিষেবাটির সঙ্গে ভাল অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং স্বচ্ছতা হচ্ছে এর একটি প্রধান অংশ। আমরা ফোনকলের অভিপ্রায় সম্পর্কে পরিষ্কার হতে চাই; যাতে ব্যবসায়ীরা প্রসঙ্গটি বুঝতে পারেন। আমরা আগামী মাসগুলোতে সঠিক পদ্ধতির সঙ্গে এটির পরীক্ষা করা হবে।’ এটা অস্পষ্ট যে, বর্তমান টেলিযোগাযোগ আইনসমূহ কোম্পানি কিভাবে নেভিগেট করবে, যা রাষ্ট্র বা দেশ দ্বারা আলাদা হতে পারে। ক্যালিফোর্নিয়ার ‘এন্টি-ওয়ারল্যাপিং’ আইন এবং বেশ কয়েকটি রাজ্যে ইতোমধ্যে কলার এবং রিসিভকারী উভয়ের সম্মতি ছাড়াই ফোন কলগুলি রেকর্ড করাকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। ফেডারেল কমিউনিকেশনস কমিশন রোবটের অযাচিত এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডায়ালকৃত কল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।

 

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn