ছাতকের গোবিন্দগঞ্জ অনার্স কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের নিয়ে শুরু হওয়া ওরিয়েন্টেশন ক্লাস শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উত্তেজনায় পন্ড হয়েছে। এ ঘটনাটি রোববার দুপুরে কলেজ হল রুমে ঘটে। জানা যায়, রোববার দুপুরে কলেজ হল রুমে ডিগ্রি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ওরিয়েন্টেশন ক্লাস শুরু হয়। কলেজ অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিকের বক্তব্যের সময় একই কলেজের ডিগ্রি শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী তাজামুল হক রিপন, দ্বীনুল ইসলাম শ্যামল ও শায়েস্তা তালুকদার রবি এবং একাদশ শ্রেনীর হাবিবুর রহমান বাবলু ওই ক্লাসে প্রবেশ করে। এসময় কলেজ অধ্যক্ষসহ অন্যান্য শিক্ষকরা ওইসব শিক্ষার্থীদের বাহির হওয়ার জন্য বলা হলে বাক-বিতন্ডার মাধ্যমে এক পর্যায়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে ক্লাস পন্ড হয়ে পড়ে। কিছুক্ষন পর কলেজ ক্যাম্পাসে ওইসব শিক্ষার্থীরা অন্যান্য শিক্ষার্থীদের নিয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শ্লোগান দিয়ে কলেজ ত্যাগ করে বাহিরে বের হয়ে সিলেট-সুনামগঞ্জ ও ছাতক সড়কে মিছিল করে। এ ঘটনার পর অধ্যক্ষসহ কলেজ শিক্ষকবৃন্দ তাৎক্ষনিক এক জরুরী বৈঠকে বসেন। রিপন, শ্যামল, শায়েস্তা ও বাবলুকে স্থায়ী ভাবে বহিস্কারের বিষয়টি বৈঠকে আলোচনা হয় এবং বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেন শিক্ষকরা। কলেজের ডিগ্রি শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী অভিযুক্ত তাজামুল হক রিপন জানান, কলেজে ডিগ্রি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ওরিয়েন্টেশন ক্লাস চলছে এমন খবর পেয়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য একটি করে কলম উপহার দেয়ার উদ্দেশ্যে দ্বীনুল ইসলাম শ্যামল, শায়েস্তা তালুকদার রবি ও হাবিবুর রহমান বাবলুকে সাথে নিয়ে তিনি ওই হল রুমে প্রবেশ করেন। তাদের উপস্থিতি দেখে কলেজ অধ্যক্ষ তাদেরকে কটাক্ষ করে হল রুম ত্যাগ করতে বলেন। এসময় অধ্যক্ষের সাথে  শিক্ষার্থীরাদের ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে অধ্যক্ষের কলমের আঘাতে শায়েস্তা তালুকদার নামের ডিগ্রি শেষে বর্ষের শিক্ষার্থী আহত হয়। পরে তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মিছিল কলেজ ক্যাম্পাস থেকে শুরু হয়ে গোবিন্দগঞ্জের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। প্রতিবাদ মিছিল শেষে (আজ সোমবার) সকাল থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য ছাত্র ধর্মঘটের কর্মসূচি ঘোষণা দেয়া হয়। এ ব্যাপারে কলেজ অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিক বলেন, শান্তিপূর্ন এ কলেজের লেখা-পড়ার ব্যাঘাত সৃষ্টি করার জন্য কিছু দূষ্কৃতিকারিরা একের পর এক অঘটন ঘটিয়ে শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট করে যাচ্ছে। এর আগেও এদের মধ্যে বিভিন্ন অপরাধিদের সাময়িক বহিস্কারসহ শাস্তি দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কলেজে শান্তিপূর্নভাবে ডিগ্রি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ওরিয়েন্টেশন ক্লাস চলাকালে রিপন, শ্যামল, শায়েস্তা ও বাবলু অনাধিকারে প্রবেশ করে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে। এসময় তিনি ও অন্যান্য শিক্ষকরা তাদেরকে ক্লাস ত্যাগ করার জন্য বল্লে ওইসব দূষ্কৃতিকারিরা শিক্ষকদের সাথে অশালীন আচরণ করে এবং কলেজ ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষেধ থাকাসত্ত্বেও পবর্তীতে ওরা মিছিলসহকারে কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে শিক্ষকদের কটাক্ষ করে বিভিন্ন শ্লোগান দেয়। বিষয়টি তাৎক্ষনিক ভাবে গভনিং বডির কিছু সদস্য ও থানা পুলিশকে অবহিত করা হয়। কলেজের একাডেমিক কাউন্সিল ও স্টাফদের জরুরী সভায় (আজ সোমবার) সকাল থেকে সব ধরণের ক্লাস বর্জনসহ, কলেজ সংলগ্ন শহিদ মিনারে দুই ঘন্টা অবস্থান কর্মসূচির সিদ্ধান্ত হয়। শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থী শায়েস্তাকে কলম দ্বারা আঘাত করে আহতের বিষয়টি অস্বীকার করে অধ্যক্ষ বলেন, ৪/৫জন দূষ্কৃতিকারির কারণে ২৭শ’ শিক্ষার্থীর লেখা-পড়ার ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে দেয়া যাবে না। সভায় এসব দূষ্কৃতিকারিদের কলেজ থেকে স্থায়ী ভাবে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ছাতক থানার এস আই সফিকুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে তিনি তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
কলেজ গভনিং বডির সদস্য বিশিষ্ট সাংবাদিক তাপস দাশ পুরকায়স্থ জানান, খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। সেখানে আরো একাধিক গভনিং বডির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। গভনিং বডির সদস্যসহ কলেজ আশপাশ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ নিয়ে সোমবার সকাল ১০টায় কলেজে এক জরুরী বৈঠকের আহবান করা হয়েছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn