জগন্নাথপুর উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নে চুরির অভিযোগ এনে দুই শিশুকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে শারীরিক নির্যাতনের খবর পাওয়া গেছে। নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে না নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।  ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি সুন্দর আলীর ছেলে শানুর মিয়া ও জামায়াত নেতা আবুল কাশেম এর বিরুদ্ধে নির্যাতনের এ অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় নির্যাতিত শিশুর পিতা সফিক আলী বাদী হয়ে জগন্নাথপুর থানায় লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন। বুধবার (১৩ জুন) জগন্নাথপুর থানায় ১১জনের নাম উল্লেখপূর্বক অভিযোগ প্রদান করা হয়। লিখিত এজাহারে অজ্ঞাতনামা হিসেবে আরো ২৫/৩০ জনের নামও উল্লেখ করা হয়েছে। নির্যাতনের শিকার শিশুদের পরিবার ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, রানীগঞ্জ ইউনিয়ন বাগময়না গ্রামের এখলাছুর রহমানের ছেলে জামায়াত নেতা আবুল কাশেম ও একই গ্রামের বাসিন্দা রানীগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি সুন্দর আলীর ছেলে শানুর মিয়া গত ৪ জুন রানীগঞ্জ বাজারে চুরির সাথে জড়িত থাকার মিথ্যে অভিযোগ এনে তাঁর ছেলে সুলেমান মিয়া (১২) ও পাইলগাঁও ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের লেবু মিয়ার ছেলে লেচু মিয়া (১০) কে বাড়ি থেকে ডেকে এনে শারীরিক নির্যাতন চালায়। পরদিন ৫ জুন জগন্নাথপুর থানায় তাদেরকে হস্তান্তর করলে পুলিশ কোন অভিযোগ না থাকায় শিশুদের ছেড়ে দেওয়া হয়।  পরবর্তীতে সফিক আলী তার ছেলের চিকিৎসা শেষে গতকাল ন্যায় বিচার চেয়ে থানায় এজাহার দাখিল করেছেন।

এ ব্যাপারে সফিক মিয়া জানান, ছেলের চিকিৎসা ও ঘটনার পরপর প্রত্যক্ষসাক্ষী না থাকায় প্রভাবশালী নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিতে দেরি হয়। এখন ভিডিও ফুটেজ পেয়ে ছেলেকে চিকিৎসা করিয়ে আইনের আশ্রয় নিলাম। রানীগঞ্জ বাজার তদারক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আজমল হোসেন মিঠু জানান, ৪ জুন ফ্যামিলি শপ নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চুরির ঘটনা ঘটে। দোকান মালিক সাজু মিয়া কাউকে চোর সনাক্ত করেননি। দুই শিশুর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট চুরির অভিযোগ নেই। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আওয়ামীলীগ সভাপতি সুন্দর আলীর ছেলে শানুর মিয়া ও জামায়াত নেতা আবুল কাশেমের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কেউই ফোন ধরেননি।  জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার (ওসি) হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, রানীগঞ্জে দুই শিশু নির্যাতনের একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ পদক্ষেপ নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ৮ই জুলাই একই ভাবে চুরির অভিযোগ এনে সিলেটের কুমারগাও এলাকার ১৩ বছর বয়সী শিশু রাজনকে খুঁটির সাথে বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। সে সময় সেই নির্যাতনের দৃশ্যটি ক্যামেরা বন্দি করা হয়। পরে মোবাইলে ধারণ করা সেই ভিডিওটি ফেসবুকসহ ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশে আলোড়নের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় করা মামলার রায়ে সিলেটের মহানগর দায়রা জজ আদালত ২০১৫ সালের ৮ নভেম্বর চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এছাড়া একজনের যাবজ্জীবন এবং পাঁচজনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। পরে ২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলায় সৌদি প্রবাসী কামরুল ইসলামসহ চার আসামিকে নিম্ন আদালতের দেওয়া ফাঁসির রায় বহাল রাখেন হাইকোর্ট।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn