বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে সরকার ছিনিমিনি খেলছে বলে অভিযোগ করেছে দলটি। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, কুমিল্লার মামলায় খালেদা জিয়া কারাগারে থাকতে পারেন না। এটা মিথ্যা-বানোয়াট মামলা। তিনি নির্দোষ। এখানেই প্রমাণিত হয়, এটা সাজানো নথি। এ নথি সাজানো হয়েছে খালেদা জিয়াকে কষ্ট দেয়ার জন্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অন্তরের জ্বালা-বিদ্বেষ মেটানোর জন্য। রিজভী মনে করেন, খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে যে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে- এটা কারও নির্দেশে নয়, একমাত্র সরকারপ্রধান যিনি তারই নির্দেশে সবকিছু হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সহ-দফতর সম্পাদক মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ প্রমুখ। দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত তোফায়েল আহমেদ জোসেফ রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় মুক্তি পাওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফকে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। শুধু জোসেফ নয়, আরও অনেককেই এভাবে মুক্তি দেয়া হয়েছে। জোসেফকে মুক্তি দেয়ার পর গোপনে বিদেশে পার করে দেয়া হয়েছে। কী অদ্ভুত ব্যাপার? আর গণতন্ত্রের লড়াইয়ের নেত্রী খালেদা জিয়া থাকেন কারাগারে। এ সরকার সন্ত্রাসী আর গডফাদারদের সরকার। বেআইনি কর্মকাণ্ড যারা করে তাদের সরকার। এ সরকার আইনের শাসনের শত্র“, ন্যায়বিচারের শত্র“। ভারত সফর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি ভারতকে সব দিয়ে দিয়েছেন, যা চেয়েছে সব দিয়ে দিয়েছেন। অদ্ভুত কথা। এত প্রেম আমরা এর আগে দেখিনি। আমরা লাইলী-মজনু প্রেমের কথা শুনেছি, শিরি-ফরহাদ প্রেমের কথা শুনেছি। আমরা দেবদাস-পার্বতীর প্রেমের কথাও শুনেছি। আওয়ামী লীগপ্রধান শেখ হাসিনা আর ভারতের প্রেম ইতিপূর্বের সব প্রেমকে হার মানিয়েছে। কারণ না চাইতে তিনি সব দিয়ে দেন, উজাড় করে দিয়ে দেন। তার প্রেম-ভালোবাসা এত গভীর।

চট্টগ্রামে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর গুডহিলের বাসায় ছাত্রলীগের নেতৃত্বে হামলা হয়েছে বলে দাবি করেন রিজভী। তিনি বলেন, বুধবার ইফতারের পর গিয়াস কাদের চৌধুরীর চট্টগ্রামের পৈতৃক নিবাসে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে ২০টি গাড়ি ভেঙেছে। বাড়ির দরজা-জানালা ও আসবাবপত্র ভাংচুর করেছে। এ হামলা চট্টগ্রাম ছাত্রলীগ সভাপতি আবু সাদেক মো. সায়েমের নেতৃত্বে চালানো হয়। এতে অংশ নেয় চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ, হাজী মো. মহসিন কলেজ ও দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মী। সন্ত্রাসীরা বাসার চারদিকের সিসি ক্যামেরাও ভেঙে ফেলেছে। রিজভী বলেন, হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলেও তারা সেখানে দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। অন্যের বাড়িতে যারা হামলা চালায় তারা ভদ্রলোক? অন্যের বাড়িতে যারা হামলা করে তারাই তো সন্ত্রাসী। তাদের কর্মকাণ্ডই জঙ্গিদের মতো। এদের প্রশ্রয় দেন সরকারের সর্বোচ্চ জায়গা থেকে। রিজভী দাবি করেন, গিয়াস কাদের চৌধুরী যে বক্তব্যটি দেননি, তা টুইস্ট করে ছাপানো হয়েছে চট্টগ্রামের পূর্বকোণ পত্রিকায়। এ ব্যাপারে স্থানীয় উত্তর নেতারাও বলেছেন, গিয়াস কাদের চৌধুরী এ রকম বক্তব্য রাখেননি। টুইস্ট করে ছাপানোর জন্য স্থানীয় নেতারা প্রতিবাদ করেছেন। এ পত্রিকাটি এর আগেও বিএনপি চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা ছাপিয়েছিল। এজন্য ১০০ কোটি টাকার মানহানি মামলা করা হয়েছিল। এরাই সমাজের মধ্যে একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার জন্য চেষ্টা করে। পূর্বকোণ পত্রিকাটি এ কাজটি করেছে। বারবার করায় প্রমাণিত হয় যে, বিশেষ উদ্দেশ্যে তারা এ কাজটি করছে। দিলকুশায় দৈনিক দেশ জনতা অফিস উচ্ছেদ করে দেয়ার ঘটনার নিন্দাও জানান রিজভী। তিনি বলেন, দৈনিক দেশ জনতা পত্রিকা প্রকাশে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে অফিসের জন্য ৭৪নং দিলকুশা ভবনটি ভাড়া নেয়া হয়েছিল ও নিয়মিত ভাড়া পরিশোধও ছিল। কিন্তু কোনো নোটিশ ছাড়াই শিল্প মন্ত্রণালয়ের ম্যাজিস্ট্রেট পত্রিকাটি উচ্ছেদ করে। যা শুধু বেআইনি নয়, এটা বিরোধী দলের মালিকের হওয়ার কারণে তা দখল করা হল। বিরোধী দলের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে চূড়ান্তভাবে দাফন করার জন্য এ কাজটি করা হয়েছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn