দক্ষিণ সুনামগঞ্জ :: গত কয়েকদিনের টানা ভারীবর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলের কারনে সৃষ্ট বন্যায় দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার ৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় পানিতে প্লাবিত হওয়ায় পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে । উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের ফলে উপজেলার আহমদাবাদ, লালুখালী, পার্বতীপুর, শ্রীরামপুর, শ্রীনাথপুর-২, ধনপুর, সর্দারপুর ও ডিগাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পানি প্রবেশ করায় শিক্ষা কার্যক্রম চালানো সম্ভব হচ্ছে না। শ্রেণিকক্ষসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চারপাশ পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পক্ষে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এদিকে টানা বর্ষনের দ্রুত গতিতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলা সদরের বিভিন্ন এলাকার প্রধান রাস্তাগুলো প্লাবিত হওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পানিবন্দি রয়েছেন হাজারো পরিবার। প্রতিদিনই বন্যার পানিতে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন গ্রাম। ফলে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মানুষদের। সবার মনে এখন বন্যা আতংক বিরাজ করছে।
উপজেলার বড়মোহা গ্রামের শুয়েব জায়গীরদার বলেন, আমরা তো অনেক আগেই ডুবে রয়েছি। আমাদের দুর্ভোগের কথা কে শুনে, আমাদের দুর্ভোগ কারো চোখে পড়েনা। উপজেলা পার্তীপুর গ্রামের আব্দুল হামিদ বলেন, গ্রামের একমাত্র রাস্তাতে এখন কোমর পানি। গ্রামের সব ঘরগুলো এখন আস্তে আস্তে প্লাবিত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের অবস্থা নাকাল হয়ে যাবে। পার্বতীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা দিপালি রানী চৌধুরী বলেন, আমরা অনেক কষ্ট করে গেলেও বিদ্যালয়ের চারপাশ পানিবন্দী থাকায় শিক্ষার্থীরা না আসায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক সহকারি শিক্ষক সমিতি সভাপতি সঞ্জয় কুমার তালুকদার বলেন, টানা বর্ষনের ফলে অনেকগুলো বিদ্যালয় পানিবন্দি থাকায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এভাবে বর্ষন চলতে থাকলে হয়ত আরও অনেক বিদ্যালয় প্লাবিত হবে। দক্ষিণ সুনামগঞ্জের তেঘরিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও উপজেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক দিলিপ তালুকদার বলেন, আমাদের গ্রামের প্রধান রাস্তাটি অপেক্ষাকৃত নিচু হওয়ায় টানা বর্ষনে প্লাবিত হওয়ায় আমরা পানিবন্ধী হয়ে ঘরে বসে আছি। আমাদের দুর্ভোগের কোন শেষ নাই। পরিকল্পনামন্ত্রীর নির্দেশ থাকার পরেও রাস্থার কাজ না হওয়ায় আমাদের এমন চরম দুর্ভোগে পোহাতে হচ্ছে। আমাদের যেন দেখার কেউ নেই।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: আব্দুল বারেক বলেন, এ পর্যন্ত ৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হওয়ার খবর পেয়েছি। প্লাবিত বিদ্যালয়গুলোর পাঠদান বন্ধ রয়েছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অশোক রঞ্জন পুরকায়স্থ বলেন, এখনও কোন মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। আমরা সবসময় যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: সফি উল্লাহ বলেন, সব ধরনের দূর্যোগ মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। উপজেলা বন্যা পরিস্থিতির খবরাখবরের জন্য কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ইউনিয়ন পর্যায়ে ত্রানের চাউল বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামীকাল থেকে শুকনো খাবার বিতরণ কার্যক্রম শুরু হবে। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রভাষক নূর হোসেন বলেন, বন্যা পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করেছে। আমরা সার্বক্ষণিক খবর রাখছি। এই মুহুর্তে সবার উচিত বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানো। বন্যা মোকাবেলায় আমরা উপজেলা প্রশাসন যা প্রয়োজন করতে প্রস্তুত আছি।