দিরাইয়ে সুরঞ্জিতের শোকসভা

আজ বুধবার সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্মরণে শোকসভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পৌর সদরের বিএডিসি মাঠে এর আয়োজন করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগও অঙ্গসংগঠন। এতে উপস্থিত থাকবেন দিরাই-শাল্লার উপনির্বাচনে দলীয় মনোনীত প্রার্থী ড. জয়া সেনগুপ্তসহ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ, বিভাগীয় ও সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ এবং স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।

শোক সভাকে ঘিরে দিরাই-শাল্লার শোকাহত আপমর জনতা হতাশাকে কাটিয়ে নেপথ্যের কারিগর জয়া সেনকে প্রার্থী হিসেবে পেয়ে উজ্জীবিত হয়ে উঠছে। বলা হয়ে থাকে, দিরাই-শাল্লার দুখু সেন (প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত) জাতীয় নেতা, বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান এবং ৮ বারের সংসদ সদস্য হওয়ার নেপথ্যের কারিগর তাঁর স্ত্রী ড. জয়া সেনগুপ্ত। নেতার আসনে জয়া সেনের মনোনয়ন লাভকে তৃণমূলের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বুধবার শোক সভার মধ্য দিয়ে সুঞ্জিতের রাজনৈতিক মন্ত্রে দীক্ষিত জয়া সেনের রাজনৈতিক  অভিষেক হতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। জয়া সেনকে প্রার্থী ঘোষণার সংবাদে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। শোকসভাকে জনসভায় পরিণত করে তুলতে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে।

দিরাই-শাল্লা আসনে মনোনয়ন পাওয়া সদ্য প্রয়াত জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী জয়া সেনগুপ্ত সদালাপী, শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাহিত্যসহ নানা ক্ষেত্রে এক আলোকিত নারী। বাবা-মা’র বড় সন্তান তিনি। শৈশব কৈশোর কেটেছে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার মালি গ্রামে। আইনবিদ বাবা ভাঙ্গা এলাকার এক বনেদি পরিবারের সন্তান হলেও তার আদিনিবাস ছিল কলকাতায়। প্রথম জীবনে অধ্যাপনাকে বেছে নিয়েছিলেন জয়া।

তিনি ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেছিলেন। পরবর্তীতে বিশ্বের বৃহত্তম বড় বেসরকারি সংগঠন ‘ব্রাক’ এর শিক্ষাবিভাগের প্রধান ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের রাজনৈতিক ছায়াসঙ্গী হিসেবে তিনি প্রতিটি নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

এছাড়াও তিনি ফরিদপুরের কে এম ডিগ্রি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষক ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে ঢাকা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, গ্রিন হেরাল্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলেও শিক্ষকতা করেছেন। কর্মজীবন শুরুতেই রাজেন্দ্র কলেজের প্রভাষক হিসেবে যোগদানের পরের বছর মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। তিনি ওই সময় মা বাবার সঙ্গে ভারতে চলে যান।

সেখানেই সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কলকাতাতেই সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন জয়া সেন। সুরঞ্জিত সেন তখন টেকের ঘাটের সাবসেক্টর কমান্ডার। মাত্র ছয়জন সহযাত্রী সহবর সেজে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত গিয়েছিলেন কলকাতায়।

জয়াসেনকে নিয়ে ফিরে আসেন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে। এরপর আজীবন ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন তারা। ব্যাক্তি জীবনে জয়া-সুরঞ্জিত দম্পতির একমাত্র সন্তান সৌমেন সেনগুপ্ত। তিনিও উচ্চশিক্ষিত। আশির দশকে এরশাদ সরকারের মার্শাল ল’ চলাকালে নির্যাতিত হয়ে কারাবরণ করেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। এই সময় জয়া সেনগুপ্ত চাকুরি নেন ব্র্যাকের শিক্ষা বিভাগে।

 তিনি অবসরে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এই বিভাগের প্রধান ছিলেন। ব্র্যাক শিক্ষায় বিশ্বব্যাপী যে সফলতা দেখিয়েছে তাতে জয়া সেনগুপ্তের অবদান বেশি। জয়া সেনগুপ্ত একজন সাহিত্যনুরাগীও। শত ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি মনসামঙ্গলের (পদ্মপুরান) উপর ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। ব্যক্তি জীবনে জয়াসেন সদালাপি, মুক্তমনা, বিজ্ঞানমনষ্ক এক আধুনিক নারী। দিরাই-শাল্লার তৃণমূল আওয়ামী লীগের সঙ্গে রয়েছে তার গভীর সম্পর্ক।

আওয়ামী লীগের সকল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে জয়া সেনগুপ্ত বলেন- আমার স্বামীকে সকল নেতাকর্মী মনে-প্রাণে শ্রদ্ধা করতেন। তারা হৃদয় উজার করে তাকে ভালোবাসতেন। তার স্ত্রী হিসেবেও আমাকে সব সময়ই তাদের চাওয়া-পাওয়ার কথা জানাতেন। আমার প্রয়াত স্বামীর প্রতি বিশ্বস্থ হাজার হাজার নেতাকর্মীকেও আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। তাদের সুখ দুঃখের সঙ্গেও আমার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। নেতা মারা যাবার পর শোকার্ত নেতাকর্মীরা আমাকে মানসিকভাবে অফুরান শক্তি দিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি আরো বলেন- দুর্গম হাওর এলাকার অবকাঠামো উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ সবধরনের উন্নয়নে আমার স্বামী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সম্পৃক্ত ছিলেন। তার অনেক স্বপ্ন ও উন্নয়ন তার মৃত্যুতে অসমাপ্ত রয়ে গেছে। দিরাই-শাল্লা আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের নিয়ে আমি সেই স্বপ্নপূরণে কাজ করতে চাই। আমৃত্যু আওয়ামী লীগের প্রতি বিশ্বস্ত আমার স্বামী আমাকেও আওয়ামী লীগের আদর্শ বাস্তবায়নে কাজ করার জন্য প্রভাবিত করেছেন।

এখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা, দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবক। আশা করি অভিভাবক হিসেবে তিনি আমাকে আমার স্বামীর অপূর্ণ স্বপ্ন পূরণে কাজ করার সুযোগ দিবেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn