- সুনামগঞ্জ বার্তা - http://sunamganjbarta.com -

নৌকার কার্ড গলায় ঝুলিয়ে ধানের শীষে ভোট?

তুহিনুল হক তুহিন- ২০১৩ সালের সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) তৃতীয় নির্বাচনে বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের পরাজয়কে ‘প্রার্থীর ব্যর্থতা’ হিসেবে দাঁড় করিয়েছিলেন সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা। কৌশলে পরাজয়ের দায়ভার কামানের ওপরই চাপিয়েছিলেন দলের অনেক নেতাকর্মী। তবে এবারের অনুষ্ঠিত চতুর্থ সিটি নির্বাচনে কামরান ছিলেন দলীয় প্রার্থী, প্রতীক ছিল নৌকা। স্থানীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি কেন্দ্রের অধর্শতাধিক নেতাও সিলেটে তার প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। এরপরও জয় রয়ে গেছে অধরা। কামরান ও ‘নৌকা’র এই অবস্থার জন্য কোন কারণ দায়ী, সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সবখানে। তবে খোদ আওয়ামী লীগের ভেতরেই আওয়াজ উঠেছে, সিলেট আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে কোন্দল ও সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণেই এবারও ভোটের এই সংকট। সিসিক নির্বাচনে ১৩৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৩২টি কেন্দ্র থেকে পাওয়া বেসরকারি ফলে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ৯০ হাজার ৪৯৬ হাজার ভোট। অপরদিকে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান পেয়েছেন ৮৫ হাজার ৮৭০ ভোট। এর ফলে কামরানের চেয়ে ৪ হাজার ৬২৬ ভোট বেশি পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন আরিফ। যে দুটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত রেখেছে নির্বাচন কমিশন সেখানে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ হাজার ৭৮৭। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ দু’টি কেন্দ্রে ফের নির্বাচন হলেও ফলাফলে খুব একটা প্রভাব পড়বে না। আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, এবার নির্বাচনি প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই খোদ দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুটি কারণে সিলেট সিটি করপোরেশনকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। এরমধ্যে একটি হলো গত নির্বাচনে কামরানের পরাজয় এবং আরকেটি হলো, বর্তমান সরকারের আমলে সিলেটের ব্যাপক উন্নয়ন। নৌকার জয় নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। তবে এখন দলের ভেতরের একাধিক সূত্র বলছে, সিলেট আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রতি দলের সভাপতির কড়া নির্দেশও উপেক্ষিত হয়েছে।

দলীয় সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ও আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানসহ দলের অনেক দায়িত্বশীল নেতাদের ভোটকেন্দ্রেই হেরেছে আওয়ামী লীগ। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, নেতারা ভোটের আগের দিন থেকে নিজ কেন্দ্রেগুলোতে যথাযথ তদারকিতে ছিলেন না। এমনকি যাদের সেন্টারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তারা ব্যস্ত ছিলেন কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে, সিলেট সিটি করপোরেশনের অর্ধশতাধিক কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাজে লাগিয়ে ‘ফায়দা’ হাসিল করেছেন জামায়াত ও বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীরা। সেন্টার কমিটির দায়িত্বে থাকা নেতাদের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে কাউন্সিলর প্রার্থীরা ব্যালটে শুধু নিজেদের প্রতীকের সিল মারার ব্যবস্তা করে নেন। এ ছাড়া, সিলেটে যেসব কেন্দ্রে বিএনপি ভোট বেশি রয়েছে, সেখানেও সেন্টার কমিটির নেতাদের কাছ থেকে নৌকা প্রতীকের পরিচয়পত্র গলায় ঝুলিয়ে কেন্দ্র দখল করে ধানের শীষ প্রতীক ও তাদের পছন্দের কাউন্সিলর, মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীদের ব্যালেট পেপারে সিল দিয়ে ভোট বাক্স ভরা হয়। অভিযোগ উঠেছে, সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের যারা জয়ী হয়েছেন তারা নির্বাচনের প্রথম দিকে নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করলেও নির্বাচনের দিন তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলেই ব্যস্ত ছিলেন।  সিলেট সিটি করপোরেশনের ১৯ নং ওয়ার্ডের এক কাউন্সিলর প্রার্থী জানান, ‘আমি আমার নিজের চোখে দেখেছি, নৌকার পরিচয়পত্র গলায় ঝুলিয়ে ধানের শীষে ও বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীকে ভোট দিচ্ছে। কিন্তু তাদের নৌকায় ভোট দিতে দেখিনি। এই ওয়ার্ডেই নৌকার প্রার্থী হেরেছেন। কিন্তু ওয়ার্ডে সেন্টার কমিটির নেতারা উপস্থিত থাকলেও তারা কোনও প্রতিবাদ করেননি।’ সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল এক নেতা জানান, ‘নির্বাচনের সময় সবাই একইসঙ্গে কাজ করলেও দলের মধ্যে গ্রুপিং ছিল। ওই গ্রুপিং ছিল যারা মেয়র পদে মনোনয়ন চেয়েছিলেন তাদের মধ্যে। যার কারণে সিলেটে হেরেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। এ ছাড়া, যাদের দিয়ে সেন্টার কমিটি গঠন করা হয়েছে তারা ছিল নিরব। আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে, এইসব সেন্টার কমিটির দায়িত্বে থাকা নেতারা টাকার বিনিময়ে বিক্রিও হয়েছে। নৌকার পরিচয়পত্র গলায় ঝুলিয়ে কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকরা কেন্দ্রে প্রবেশ করে নিজেদের ব্যালট পেপারের পাশাপাশি ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেয়। বিষয়টি আমরা কেন্দ্রীয় নেতাদের জানালেও তারা আমাদের দোষারোপ করছেন।’ এসব ব্যাপারে জানার জন্য সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কামরানের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক শফিকুর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে একাধিকবার তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on Facebook [১]Share on Google+ [২]Tweet about this on Twitter [৩]Email this to someone [৪]Share on LinkedIn [৫]