অমর সাহা- পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেসের বড়ই দুর্দিন চলছে। দল ছেড়ে তৃণমূলে চলে যাচ্ছেন কংগ্রেসের বিধায়কেরা। তাই পশ্চিমবঙ্গে শক্তি কমছে জাতীয় কংগ্রেসের। শক্তি বাড়ছে তৃণমূল কংগ্রেসের। অন্যদিকে, শক্তি বাড়ছে রাজ্য বিজেপিরও। আবার শক্তি কমছে সিপিএমের। রাজনীতির এই ভাঙা-গড়ার খেলায় কংগ্রেসের ঘরে এখন শুধু ভাঙনের শব্দ। তৃণমূল আগেই ঘোষণা দিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ থেকে কংগ্রেসকে সাইনবোর্ডের দলে পরিণত করা হবে। সে লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে তৃণমূল। ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে কংগ্রেসের সাজানো বাগান। জনপ্রিয়তা কমে গেছে কংগ্রেসের। বাম দলের জনপ্রিয়তাও কমেছে। বিজেপির জনপ্রিয়তা বেড়ে যাচ্ছে। তৃণমূল গঠনের পর কংগ্রেসকে ভাঙার খেলা চলছে ২০ বছর ধরে। তিল তিল করে পশ্চিমবঙ্গ থেকে কংগ্রেসের শক্তি শুষে নিচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। এবার আবার আরেকটি ধাক্কা খেল কংগ্রেস। ২১ জুলাই কলকাতার ধর্মতলায় আয়োজিত শহীদ দিবসের মঞ্চে ওঠে কংগ্রেসের চার বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। এদিন বিজেপির সাবেক সাংসদ চন্দন মিত্রও দল ছেড়ে উঠেছেন তৃণমূলের ঘরে। ফলে কংগ্রেসের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে পড়েছে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভার সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৬ সালে। নির্বাচনে রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা আসনের মধ্যে তৃণমূল ছিনিয়ে নিয়েছিল ২১১টি আসন। কংগ্রেস ৪৪টি আর বাম দল ৩২টি। বিজেপি পেয়েছিল ৩টি আসন। ফলে এ নির্বাচনের পর বাম দল হারায় বিধানসভায় বিরোধীদলীয় নেতার পদ। সেখানে বিরোধী দলের নেতা হন কংগ্রেস বিধায়ক আবদুল মান্নান। কিন্তু যে ৪৪ জন বিধায়ককে সঙ্গী করে কংগ্রেসের যাত্রা শুরু হয়েছিল, সেখানেও ফাটল দেখা দিয়েছে।

কংগ্রেসের একদল বিধায়ক ঝুঁকে পড়েছে তৃণমূলের দিকে। কংগ্রেসের অভিযোগ, পদ, শক্তি ও অর্থের টোপে ওই বিধায়কেরা তৃণমূল কংগ্রেসে পা দিয়েছেন। এরই মধ্যে আবার দুটি উপনির্বাচনে কংগ্রেস দুটি বিধায়ক পদ খুইয়েছে। ফলে তাদের আসনসংখ্যা কমে এসেছে ৪২-এ। এ ৪২ বিধায়কের মধ্যে ইতিমধ্যে ১৭ জন পা রেখেছেন তৃণমূলের ঘরে। বাকি রয়েছে কংগ্রেসের ২৫ বিধায়ক। তাঁদেরও আবার কেউ কেউ তৃণমূলের দিকে ঝুঁকছেন। তবে দলত্যাগী এসব বিধায়ক রাজ্য বিধানসভায় স্বীকার করছেন না যে তাঁরা কংগ্রেস ছেড়েছেন। বলেছেন, তাঁরা এখনো কংগ্রেসেই আছেন। নিয়ম হলো কোনো বিধায়ক দল বদল করলে হারাবেন বিধায়ক পদ। স্পিকার খারিজ করবেন বিধায়ক পদ। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। কংগ্রেস নেতারা দলত্যাগী বিধায়কদের পদ খারিজ করার দাবি জানালে দলত্যাগী বিধায়কেরা বিধানসভার স্পিকারের প্রশ্নের মুখে জানিয়ে দেন, তাঁরা কংগ্রেসেই আছেন। অথচ তাঁরা বয়ে বেড়াচ্ছেন তৃণমূলের পতাকা। অংশ নিচ্ছেন তৃণমূলের সভা সমিতিতে।

২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর কংগ্রেস ছেড়ে অনেকেই ছুটে গেছেন তৃণমূলে। তাঁদের চাওয়া-পাওয়া পূরণ করে নানা সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে তৃণমূল। তৃণমূলের শামিল হওয়া নেতারা হলেন দুলাল বর (বাগদা), বিশ্বনাথ পাড়িয়াল (দুর্গাপুর পশ্চিম), কানাইলাল আগরওয়াল (ইসলামপুর), গৌতম দাস (গঙ্গারামপুর), সমর মুখোপাধ্যায় (রতুয়া), সাবিনা ইয়াসমিন (মোথাবাড়ি), আখতারুজ্জামান (রঘুনাথগঞ্জ), আশিস মারজিৎ (খড়গ্রাম), শাওনি সিংহ রায় (মুর্শিদাবাদ), অপূর্ব সরকার (কান্দি), আবু তাহের খান (নওদা), রবিউল আলম চৌধুরী (রেজিনগর), হাসানুজ্জামান শেখ (কালীগঞ্জ), অরিন্দম ভট্টাচার্য (শান্তিপুর), শংকর সিংহ (রানাঘাট উত্তর-পশ্চিম), তুষারকান্তি ভট্টাচার্য (বিষ্ণুপুর) ও শম্পা দরিপা (বাঁকুড়া)। কংগ্রেসে কি কোনো প্রভাব পড়ছে না? দলত্যাগের ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের প্রদেশ কংগ্রেস উদ্বেগে পড়েছে। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার বিরোধীদলীয় নেতা কংগ্রেস বিধায়ক আবদুল মান্নানের সঙ্গে এ নিয়ে কথাও বলেছেন। আবদুল মান্নান কংগ্রেস নেতৃত্বকে দলের বিধায়কদের দল ছাড়ার কথা জানিয়ে প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। রাজ্য কংগ্রেসের মুখপাত্র ওমপ্রকাশ মিশ্র অভিযোগ করে বলেছেন, কংগ্রেস বিধায়কদের বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে, হুমকি দিয়ে, এমনকি মামলা দায়ের করে দল ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn