সুনামগঞ্জ পৌর কলেজের তিন শিক্ষককে বিদায় সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে। এ উপলক্ষে শনিবার সকালে কলেজ কর্তৃপক্ষের আয়োজনে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন তালুকদার, প্রাক্তন অধ্যক্ষ আজহারুল ইসলাম ও প্রাক্তন অধ্যক্ষ আব্দুল বারীকে সংবর্ধনা জানানো হয়েছে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কলেজের অধ্যক্ষ শেরগুল আহমদ। প্রভাষক শেখ ফারজানা সুমা ও প্রণয় চন্দ্র সরকারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রফেসর দিলীপ কুমার মজুমদার, সিলেটের সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যাপক নীলিমা চন্দ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফ জেপি, সাবেক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মকবুল হোসেন।
সংবর্ধিত অতিথি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ আজহারুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন তালুকদারও বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন কলেজের সহকারী অধ্যাপক শাহ্ আবু নাসের, সহকারী অধ্যাপক শুভঙ্কর তালুকদার মান্না, প্রভাষক নোয়াজ উদ্দিন, প্রভাষক তাছলিমা আক্তার শান্তা, শিক্ষক আলমগীর আহমেদ তালুকদার। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন কলেজের শিক্ষার্থী সাজিদ হাসান ও সৈয়দুর রহমান। অনুষ্ঠানের শুরুতে সংবর্ধিত অতিথিদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো। পরে কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন এবং মানপত্র পাঠ করেন শিক্ষার্থী জায়েদ হোসেন এবং গীতাপাঠ করেন স্বপন রায়। আলোচনা সভা শেষে দুই সংবর্ধিত অতিথিকে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ‘সরকারি ও বেসরকারি কলেজের মধ্যে তফাৎ রয়েছে। যাঁরা সরকারি কলেজে শিক্ষকতা করেন, তাঁরা বেশি দিন একই প্রতিষ্ঠানে অবস্থান করতে পারেন না। যাঁরা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেন তাঁরা বেশিদিন অবস্থান করতে পারেন। চিত্তরঞ্জন তালুকদার এই প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন অবস্থান করায় প্রতিষ্ঠানের প্রতি আবেগ সৃষ্টি হয়েছে বেশি। প্রতিষ্ঠানের জন্ম থেকে তিনি শিক্ষকতার সাথে যুক্ত ছিলেন। তাঁর মধ্যে একনিষ্ঠ প্রতিবাদী ব্যক্তিত্ব ছিল।’ বক্তারা আরও বলেন, ‘শহরের আমরা কয়েকজন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মিলে এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলতে পৌর চেয়ারম্যান দেওয়ান মমিনুল মউজদীনের দ্বারস্থ হই। তৎক্ষণাৎ তিনিও আমাদের সাথে একমত পোষণ করে উদ্যোগ নেন কলেজ প্রতিষ্ঠা করতে। অতি অল্প সময়ে এই কলেজ প্রতিষ্ঠা করে পেরেছি আমরা। এই পৌর কলেজ প্রতিষ্ঠায় অ্যাড. হুমায়ূন কবীর জাহানূরেরও অবদান রয়েছে।’
সংবর্ধনার জবাবে সহকারী অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, ‘সুনামগঞ্জ পৌর কলেজ এক অনন্য ইতিহাসের নাম। যে শিক্ষার্থীর অধ্যয়নের সময় প্রশ্ন জাগে না মনে, সে শিক্ষার্থী ভাল শিক্ষার্থী হতে পারে না। এই কলেজের শিক্ষার্থীদের মনে প্রশ্ন জাগানোর জন্য প্রায় সময় তাদেরকে অনেক রূঢ় কথা বলেছি। আমি প্রায়ই বলতাম আমি যা পড়াই তোমাদের কোনো প্রশ্ন থাকলে অবশ্য লজ্জা বা ভয় ছেড়ে প্রশ্ন করবে। আগে তারা কোনো প্রশ্ন করতো না। বিশেষ করে মেয়েদের বলতাম বেশি। কারণ মেয়েদের বিয়ে হবে, তাদের সন্তান হবে, তাদের সন্তানদের শিক্ষিত করে তোলতে হবে। এই জন্য আরও বেশি ভাল করে লেখাপড়া করতে হবে তাদের। মনে রাখতে হবে তোমাদের এই শিক্ষাজীবনের দিনগুলি আর ফিরে পাবে না। আজ আমার বিদায়লগ্নেও সকল শিক্ষার্থীদের ভাল লেখাপড়া করে যেন বড় হয়, এই কামনা করছি।’
সংবর্ধিত অতিথি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ আজহারুল ইসলাম, ‘দেখতে দেখতে অনেক বছর কেটে গেল। আমার কলেজ থেকে যাবার প্রায় পনের বছর পেরিয়ে গেল, কিন্তু টের পেলাম না। অবসর জীবন একাকীত্ব জীবন। জনবিচ্ছিন্ন জীবন বলা চলে। এই জীবন এক নতুন যাত্রার জীবন। এই অবসর জীবনে আমরা যেন নতুন কিছুর সন্ধান পাই। ব্যক্তি জীবন যেন সুন্দর হয়। সকলের জন্য শুভ কামনা রইল।’

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn