জগন্নাথপুর প্রতিনিধি : প্রবাসী অধ্যুষিত জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বেশ জমে উঠেছে। আগামী ৬ মার্চ এই উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ভোট সংখ্যা এক লাখ ৬৭ হাজার ৪৯৯ জন। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তিনজন রাজনৈতিক ব্যক্তি লড়াই করছেন। এদিকে, প্রতিদিন প্রার্থীদের পক্ষে চলছে নানা ধরনের প্রচার। পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার, ফেস্টুন ছাড়াও প্রতিদিন চলছে মাইকিং, উঠান বৈঠক ও ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ভোট ভিক্ষা।

আওয়ামী লীগ প্রার্থী আকমল হোসেনের পক্ষে এ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কোনো নেতাকে গণসংযোগে দেখা না গেলেও বিএনপি প্রার্থী আতাউর রহমানের পক্ষে গত দুইদিন ধরে জগন্নাথপুরে অবস্থান করে নির্বাচনী গণসংযোগ, পথসভা ও প্রচারণায় যোগ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক, সাবেক এমপি কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন, কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য সাবেক এমপি সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং স্বতন্ত্র ৩ প্রার্থীই স্থানীয় অঙ্গনে পরিচিত রাজনৈতিক নেতা। ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ বড় দলের দলীয় প্রার্থীসহ অন্যরাও রাজনৈতিক কর্মী। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরাও রাজনীতি সচেতন। উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে জগন্নাথপুরে। প্রথা অনুযায়ী শেষ মুহূর্তে প্রবাসীরাও আসছেন নিজ নিজ সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিতে। তবে এবার টাকা উড়ছে কম।

ভোটাররা বলেছেন, বিগত ইউপি নির্বাচনেও উপজেলার ৭ জন বিজয়ী চেয়ারম্যানের ৬ জন ছিলেন লন্ডন প্রবাসী। কিন্তু এবার জগন্নাথপুরের সব প্রার্থীই স্থানীয় অঙ্গনের সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী। এর মধ্য থেকে সৎ, যোগ্য এবং যাকে দিয়ে উন্নয়ন হবে তাকেই ভোট দেবেন তারা।

জগন্নাথপুর পৌরসভার পশ্চিম ভবানীপুরের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বললেন, ‘ইবার কোন লন্ডনী প্রার্থী নাই। টাকা ছড়ানোরও প্রতিযোগিতা নাই। সবাই রাজনৈতিক কর্মী। বক্তব্যও দিচ্ছেন রাজনৈতিক। ভোটাররা যাকেই গ্রহণ করবে, তিনিই হয়তো নির্বাচিত হবেন।’

উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নের মজিদপুরের বাসিন্দা আঙ্গুর মিয়া জানান, জগন্নাথপুরের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সচরাচর যা হয় এবার তা কম হচ্ছে। প্রবাসীরা প্রচারণার জন্য নিজ নিজ সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে আসা শুরু করেছেন। তবে প্রচারণায় টাকা ছড়ানোর প্রবণতা এখনো লক্ষ্য করা যায়নি।’

নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৩, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির একক প্রার্থী থাকলেও সরকারি দল আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনীত প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ করে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের আরও দুই নেতা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। এ নিয়ে কোথাও কোথাও দলীয় কর্মী-সমর্থকরা বেকায়দায় পড়েছেন।

অবশ্য উপজেলা আওয়ামী লীগ দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে সংগঠনের উপজেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তাদীর আহমদ মুক্তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার এবং স্বতন্ত্র ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি কামাল উদ্দিনকে বহিষ্কার করার জন্য জেলা ও কেন্দ্রীয় যুবলীগকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানিয়েছে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী ৩ চেয়ারম্যান প্রার্থীই জয়ের আশাবাদ ব্যক্ত করে জানান, অতীতের কার্যক্রম বিবেচনায় এনে ভোট দেবেন জগন্নাথপুরের ভোটাররা।

বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আকমল হোসেন বলেন, ‘আমি ৫ বছর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ছিলাম। সততার সঙ্গে সাধ্য অনুযায়ী উন্নয়ন কার্যক্রম চালিয়েছি। এখন দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে রয়েছে। আমি জগন্নাথপুর উপজেলাকে এই উন্নয়ন অভিযাত্রায় যুক্ত রাখতে চাই। জগন্নাথপুর উপজেলাকে একটি মডেল উপজেলায় রূপান্তর করতে চাই।’

জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আতাউর রহমান বলেন, ‘আমি সৈয়দপুর-শাহারপাড়া  ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলাম। আমি ওই ইউনিয়নের সেতু, কালভার্ট, সড়ক যোগাযোগের উন্নয়নসহ ইউনিয়নকে শতভাগ স্যানিটেশনের আওতায় এনেছি। আমি একজন মানবাধিকার কর্মী, যেখানেই দুর্বল মানুষ নির্যাতনের শিকার হন, আইনি সহযোগিতার জন্য আর্থিক সহায়তাসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে আসছি। বিগত উপজেলা নির্বাচনে জগন্নাথপুরবাসী আমাকে ভোটের মাধ্যমে ব্যাপক সমর্থন দিয়েছিলেন। এবারও তারা আমাকে সমর্থন করবেন বলে আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী।

স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ও জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তাদীর আহমদ মুক্তা বলেন, ‘২ বছর উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ ৭ বছর আমি দায়িত্ব পালন করেছি। উপজেলা পরিষদকে সম্মানজনক এবং গতিশীল প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে আমার ভূমিকা রয়েছে। অগ্রসর উপজেলা নির্মাণের লক্ষ্যে প্রার্থী হয়েছি। আমার বিশ্বাস ভোটাররা তাদের সুচিন্তিত রায় আমাকে দেবেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn