জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলী ইউনিয়নের দুর্গম হাওর এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনও পিছিয়ে রয়েছে। চলাচলের কোন রাস্তা না থাকায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন হাওরবাসী। প্রতিদিন হাওরের বিস্তীর্ণ আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে আসতে হয় তাদের উপজেলা সদর ও সাচনা বাজারে। নানা দুর্ভোগের শিকার হতে হয় হাওর বেষ্টিত ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এলাকা হওয়ায়। উপজেলার বেহেলী ইউনিয়নের বদরপুর থেকে আছানপুর পর্যন্ত পাউবোর ফসলরক্ষা বাঁধই বদলে দিতে পারে এসব হাওর এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার চিত্র। জানা যায়, আছানপুর-হরিনাকান্দি ভায়া হাওরিয়া আলীপুর হয়ে শরীফপুর পর্যস্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তাকে সাবমারজিবল রাস্তা হিসাবে পাকাকরনের উদ্যোগ গ্রহণ করলে হাওর এলাকার জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন হবে। এলাকার মানুষ সহজে যাতায়াত করতে পারবে, চলাচলে সময় খরচ ও কষ্ট দুই-ই কমে আসবে। হাওরিয়া আলীপুর গ্রামের আলতাব মিয়া, আব্দুল গফুর, রুস্তুম আলী বলেন, এই রাস্তাটি হলে একদিকে হালির হাওরের বেড়ী বাঁধ স্থায়ী হবে অন্যদিকে লোকজন চলাচলের রাস্তা হবে। সরকারের পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবোর) প্রতি বছর এখানে হাওররক্ষা বাঁধ দিতে হবে না, খরচ কমে আসবে। আছানপুর গ্রামের আয়না মিয়া, রাসেল আহমদ বলেন, হাওরবেষ্টিত এই জনগোষ্ঠীকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে সাবমারজিবল রাস্তাকরনের বিকল্প নেই।

উপজেলার বেহেলী ইউনিয়নের হরিনাকান্দি গ্রামের ইউপি সদস্য মনু মিয়া বলেন, কেউ অসুস্থ হলে জামালগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালে যেতে অনেক সময় নৌকা বা গাড়ী না থাকায় সমস্যায় পড়তে হয়। তাই রাস্তাটি আমাদের প্রাণের দাবি। সারা বছর নৌকা দিয়ে চলাচল করতে হয় এলাকার বাসিন্দাদের। জরুরী প্রয়োজনে হেমন্তে হাওরের পথ দিয়ে মোটরসাইকেলযোগে যাতায়াত করলেও অধিক ভাড়া ও ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে আর একটু বৃষ্টি হলেই এসব রাস্তায় পায়ে হাটাও মুশকিল হয়ে পড়ে। তিনি আরো বলেন, বেহেলী বাজার থেকে আছানপুর পর্যন্ত যেতে নির্ধারিত কয়েকটি ইঞ্জিন চালিত নৌকা রয়েছে। কোন কারণে নৌকা চলে গেলে যাত্রীদের আর এইদিন বাড়ীতে পৌছা সম্ভব হয় না। অনেককেই বাধ্য হয়ে আত্মীয় স্বজনের বাড়ীতে-সাচনা বাজারে আবাসিক হোটেলে থাকতে হয়। এভাবেই কষ্টকর জীবনযাপন করছেন হাওর এলাকার এ সকল মানুষ। বর্ষাকালে হাওরের উত্তাল ঢেউ প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিলে অনেকটা পানিবন্দী অবস্থায় থাকতে হয় আমাদের এমনকি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা। বেহেলী ইউনিয়নের আছানপুর, হরিপুর, সুন্দরপুর, দুর্গাপুর, হিজলা, নোওয়া পাড়া, মদনাকান্দি, মাহমুদপুর, উমেদপুর, হরিনাকান্দি, হাওরিয়া আলীপুর, বদরপুরসহ ১৫টি গ্রামের লোকজন রাস্তার জন্য পিছিয়ে রয়েছেন। রাস্তার জন্য এলাকার শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অনেক কোমলমতি শিক্ষার্থী। এমন কি পিছিয়ে পড়েছে জীবনমান। উপজেলার বেহেলী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল হক তালুকদার বলেন, অবহেলিত জনপদের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন করতে হলে সাবমারজিবল রাস্তাটি নির্মাণ করা একান্ত আবশ্যক। সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দৃষ্টি দিলেই হালির হাওর বেড়ী বাঁধ শরীফপুর থেকে আছানপুর হয়ে উঠতে পারে হাওরাঞ্চলের বঞ্চিত মানুষের ভাগ্যন্নোয়নের চাবিকাঠি। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশল কর্মকর্তা শিপলু কর্মকার বলেন, রাস্তাটি বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। এ জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী প্রধান কার্যালয়ে সাবমারজিবল রাস্তা নির্মাণের জন্য প্রস্তাবনা পাঠিয়েছেন। জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজা আক্তার দিপু বলেন, জনগণের চলাচলের সুবিধার্থে এই রাস্তা নির্মাণ করা দরকার। রাস্তাটি বাস্তবায়ন করা এলাকার মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবি। এতে ১৫-২০টি গ্রামের ২৫ হাজার মানুষের উপকার হবে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn