বাংলাদেশে অনিয়মের নানা অভিযোগ, ভোট বর্জন এবং বিক্ষিপ্ত গোলযোগের মধ্য দিয়ে বরিশাল, রাজশাহী এবং সিলেট এই তিনটি সিটি কর্পোরেশনে ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। ভোটকেন্দ্র দখল এবং কেন্দ্রে এজেন্ট থাকতে না দেয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে বরিশালে বিএনপির মেয়র প্রার্থীসহ মোট চারজন প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেন। তিনটি সিটি কর্পোরেশনেই বিরোধীরা কারচুপির নানান অভিযোগ তুললেও ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা সুষ্ঠুভাবে ভোট হয়েছে বলে দাবি করেছেন। রাজশাহী এবং সিলেটে বিরোধী দল বিএনপির প্রার্থীরা অনিয়মের নানা অভিযোগ তুললেও তারা শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে ছিলেন। কিন্তু বরিশালে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মজিবুর রহমান সরোয়ার ভোটের মাঝপথে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।

বরিশালে নির্বাচন বর্জন

সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, প্রশাসনের সামনে যে ঘটনা ঘটলো, বরিশালবাসী যা প্রত্যক্ষ করলো, এরপর আমরা আর বসে থাকতে পারি না। এই নির্বাচনকে আমরা প্রত্যাখ্যান করছি”- বলেন মি. সরোয়ার। এরপর বরিশালের আরও তিনজন মেয়র প্রার্থী – বাসদের মনীষা চক্রবর্তী, ইসলামী আন্দোলনের ওবাইদুর রহমান এবং জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন নির্বাচন বর্জন করেন। তারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পর একতরফা নির্বাচন হয়েছে বলে স্থানীয় সাংবাদিকরা বলছেন। কিন্তু সেখানে কী পরিস্থিতি হয়েছিল যে চারজন মেয়র প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেন? বরিশালের সাংবাদিক শাহিনা আজমিন বলছেন, “ভালোভাবেই সবকিছু শুরু হয়েছিল কিন্তু কিছুক্ষণ যেতে না যেতেই দেখা গেল ভোটারদের ভোট দিতে দেওয়া হচ্ছে না, প্রার্থীদের এজেন্টদের আসতে দেওয়া হচ্ছে না, তাদেরকে বের করে দেওয়া হচ্ছে- এধরনের অভিযোগ আসতে শুরু করে। এই পরিস্থিতিতে দুপুরের দিকে বিএনপির প্রার্থী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। তারপর ভোট কেন্দ্রগুলোতে আমরা নির্বাচনের পরিবেশ আর দেখিনি।”

রাজশাহীতে অনিয়মের অভিযোগ

রাজশাহীতে ভোট দিতে না পেরে একটি কেন্দ্রের সামনে অনেক ভোটার বিক্ষোভ করেছেন। আরেকটি কেন্দ্রে দুপুরেই মেয়র পদের ব্যালট পেপার শেষ হয়ে যাওয়ার প্রতিবাদে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ঐ কেন্দ্রের সামনে ভোট শেষ হওয়া পর্যন্ত অবস্থান নিয়েছিলেন। ভোট কেন্দ্রে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর এজেন্টকে থাকতে না দেয়া এবং জোর করে ব্যালট নিয়ে সিল মারাসহ নানান অনিয়মের অভিযোগ এসেছে। স্থানীয় সাংবাদিক আনোয়ার আলী বলেছেন, সকাল থেকেই নারী এবং পুরুষ ভোটারদের ভিড় তিনি দেখেছেন। কিন্তু কেন্দ্রের ভেতরে ও বাইরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থকদেরই নিয়ন্ত্রণ তার চোখে পড়েছে। “এজেন্ট না থাকা, ব্যালট পেপার ফুরিয়ে যাওয়া এসব তো ছিলই। নৌকা মার্কার পক্ষেই বেশি জনসমাগম দেখা গেছে। কিন্তু অন্য কোন প্রার্থীর সমর্থকদের সেভাবে দেখা যায় নি,” বলেন তিনি।

সিলেটেও একতরফা সিল

সিলেট থেকেও নির্বাচনের একই চিত্র পাওয়া গেছে। স্থানীয় সাংবাদিক আহমেদ নূর জানিয়েছেন, একটি কেন্দ্রের ভিতরে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থনে ব্যালট পেপারে একতরফা সিল মারার ঘটনার সময় পুলিশ সেখানে ফাঁকা গুলি ছুঁড়েছে। তিনি বিভিন্ন কেন্দ্র বিএনপির মেয়র প্রার্থীর এজেন্টদেরও দেখতে পাননি বলে জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, ভোট কেন্দ্রগুলোতে সকালে নারী পুরুষের ভিড় থাকলেও বিভিন্ন অভিযোগ ওঠার পরে তাদের সংখ্যা একেবারেই কম ছিল। সিলেট থেকে একজন নির্বাচন পর্যবেক্ষক শাহ শাহেদা আকতারও বলেছেন, বিভিন্ন দলের প্রার্থী থাকলেও একতরফা নির্বাচন হয়েছে বলে তার মনে হয়েছে। তিনি বলেন, “দুপুরের পর থেকেই কোন কোন কেন্দ্র একটি দলের এজেন্টদের পক্ষে চলে গেছে। আবার কোথাও কোথাও ভালো নির্বাচন হয়েছে। তবে বেশিরভাগ জায়গাতেই ছিল বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি।” তবে তিনটি সিটি কর্পোরেশনেই আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীরা নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে দাবি করেছেন। সকালে ভোট শুরু হওয়ার পরপরই শহরের কেন্দ্রস্থলে অশ্বিনীকুমার হলে অনেক ভোটার ছিল। ভোট সুষ্ঠুভাবেই চলছিল এবং যথেষ্ট ভিড় ছিল। সেখানে আমরা যখন অবস্থান করছিলাম,দশ মিনিটের মধ্যেই খবর আসে, অন্যান্য কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে দেয়া হচ্ছে। আবার অনেককে ঢুকতেও দেয়া হয়নি, এরকম অভিযোগ আসতে থাকে। সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট নেয়া হচ্ছে। সেখানে দেখা গেছে, ইভিএমে যখন কোন ভোটার তার বাটন পুশ করবেন, তখন সরকার দলীয় মেয়র ও কাউন্সিলরের কর্মীরা ভোটারদের বাটনে পুশ করতে না দিয়ে নিজেরাই বাটন চেপে ভোট দিচ্ছেন বলে আমরা দেখতে পাই। দুই একটি কেন্দ্র ছাড়া সবগুলোতেই আওয়ামী লীগের মেয়র বা কাউন্সিলরের কর্মীদেরই দেখা গেছে। এমনকি কেন্দ্রের ভেতরেও শুধুমাত্র নৌকার ব্যাজ লাগানো কর্মীদেরই দেখা গেছে। অনেক কেন্দ্রে বিরোধী পোলিং এজেন্টদের দেখা যায়নি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn