লন্ডন : ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের সদস্যপদ প্রত্যাহার করে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করার অনুমোদন চেয়ে সরকারের উত্থাপিত বিল আটকে দিয়েছে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ হাউস অব লর্ডস।

গতকাল বুধবার হাউস অব লর্ডসের ভোটাভুটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য বিলে একটি সংশোধনী যুক্ত করার পক্ষে ভোট দিয়েছেন। যে কারণে হোঁচট খেল ব্রেক্সিট বিল নামে পরিচিত ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন (উইথড্রোয়াল নোটিফিকেশন) বিল’।

সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ব্রেক্সিট কার্যকরের পরও যেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত ইইউভুক্ত দেশের ৩৩ লাখ নাগরিক স্থায়ী বসবাস করতে পারেন, বিলে সেই নিশ্চয়তার বিষয়টি যুক্ত করতে হবে।

ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের সাত জনসহ মোট ৩৫৮ জন সদস্য বিলে সংশোধনীর পক্ষে ভোট দিয়েছেন। সংশোধনীর বিপক্ষে ছিলেন ২৫৬ জন। আগামী মঙ্গলবার এই বিলে আরও একটি সংশোধনী প্রস্তাবের বিষয়ে হাউস অব লর্ডসে ভোটাভুটি হবে। ওই প্রস্তাবে ব্রেক্সিট কার্যকরের পর ইইউর সঙ্গে নতুন সম্পর্ক নিয়ে যে সমঝোতা হবে তার ওপর গণভোট আয়োজনের দাবি করা হয়েছে। ওই প্রস্তাবটিও পাস হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

এর আগে পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষ হাউস অব কমন্সে কোনো ধরনের সংশোধনী ছাড়াই বিলটি পাস হয়েছিল। এখন উচ্চ কক্ষ সংশোধনী চাওয়ায় বিলটি আবারও নিম্ন কক্ষে ফেরত আসবে। নিম্ন কক্ষ ওই সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণ না করলে বিলটি সংসদের এক কক্ষ থেকে আরেক কক্ষে বারবার চালাচালির ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টিকে হতাশাজনক মন্তব্য করে বলা হয়েছে, সরকার ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া শুরু করবে কী করবে না, সেটি জানতে চাওয়া হয়েছে, এখানে অন্য বিষয় যুক্ত করার সুযোগ নেই। সরকারের বক্তব্য হলো—ইইউ নাগরিকেরা যুক্তরাজ্যে থাকতে পারবে কি পারবে না, সেটি নির্ভর করবে ব্রিটিশ নাগরিকদের ক্ষেত্রে ইইউ কেমন সিদ্ধান্ত নেয় তার ওপর। কেননা ইইউভুক্ত দেশে লাখ লাখ ব্রিটিশ নাগরিক বসবাস করছেন। তবে সমালোচকেরা বলছেন, ইইউ নাগরিকদের ভবিষ্যতের বিষয়টিকে সরকার ইইউর সঙ্গে সমঝোতার হাতিয়ার (বারগেইনিং চিপ) হিসেবে ব্যবহার করছে।

সরকার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণ না করেই হাউস অব কমন্স থেকে বিলটি আবারও উচ্চ কক্ষে পাঠানোর চেষ্টা চালাবে সরকার। কেননা সরকারের কর্তা ব্যক্তিরা মনে করেন, অনির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে গঠিত হাউস অব লর্ডস পুনরায় বিলটির বিপক্ষে ভোট দিয়ে সরকারের পরিকল্পিত ব্রেক্সিট বাস্তবায়নে বাধার সৃষ্টি করবে না। ধারণা করা হয়েছিল, ৮ মার্চ বিলটি উচ্চ কক্ষে পাস হয়ে আইনে পরিণত হবে। আর ১৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া শুরু করার আনুষ্ঠানিক আবেদন জানাবেন। এখন বিলটি আইনে পরিণত হওয়ার সময় অন্তত এক সপ্তাহের জন্য পিছিয়ে গেল।

২০১৬ সালের ২৩ জুন অনুষ্ঠিত গণভোটে যুক্তরাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ইইউ ত্যাগের পক্ষে ভোট দেয়। এ রায় কার্যকর করতে শুরুতে এমপিদের অনুমতির তোয়াক্কা না করলেও শেষ পর্যন্ত আদালতের রায়ে সংসদে বিল উত্থাপনে বাধ্য হয় থেরেসা মের সরকার। নজিরবিহীন দ্রুততায় এই বিল পাস করিয়ে নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করে সরকার।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn