- সুনামগঞ্জ বার্তা - http://sunamganjbarta.com -

ভারতের বন্দরেও ভিড়তে পারেনি মার্কিন নিষেধাজ্ঞাভুক্ত সেই রুশ জাহাজ!

মিজানুর রহমান-  পণ্য খালাস না করেই ভারতের জলসীমা ত্যাগ করেছে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত সেই রুশ জাহাজ। পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া বন্দরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালামাল খালাসে ১৪ দিন অপেক্ষা করেছে জাহাজটি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দিল্লির অনুমতি না পাওয়ায় ফিরে গেছে। সেগুনবাগিচা বলছে, ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার কারণে হয়ত নিষেধাজ্ঞাভুক্ত জাহাজটিকে ভারত তাদের বন্দরে ভিড়তে দেয়নি। যদিও হলদিয়ায় ভিড়তে দিবে এমন সিগন্যাল ছিল। এক কর্মকর্তা অবশ্য বলেন, ধারণা অমূলক হবে না, মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর সফরের পর দিল্লি হয়ত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে। বহুল আলোচিত ওই জাহাজকে গ্রহণে বাংলাদেশ এবং ভারত উভয়ের প্রতি অনুরোধ ছিল রাশিয়ার। এটি না হলে ঢাকার সঙ্গে মস্কোর সম্পর্ক নষ্টের হুমকি ছিল।

দিল্লির সঙ্গে মস্কোর বোঝাপড়া অবশ্য স্বতন্ত্র। কিন্তু এতদসত্ত্বেও জাহাজটিকে পণ্য খালাস না করেই ফিরতে হচ্ছে! নিশ্চিতভাবে এখানে নয়াদিল্লি এবং ওয়াশিংটনের নতুন সমঝোতার ইঙ্গিত রয়েছে। উল্লেখ্য, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশের মোংলা বন্দরে ভিড়তে না দেয়া রুশ জাহাজ রূপপুরের সরঞ্জাম নিয়ে ভারতের হলদিয়া বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে মর্মে খবর দেয় বিবিসি বাংলা।

৪ঠা জানুয়ারি প্রচারিত খবরে বলা হয়, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা রাশিয়ার জাহাজে করে আনা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল খালাস হবে ভারতের হলদিয়া বন্দরে। পরে সেখান থেকে সেই পণ্য সড়কপথে বাংলাদেশে পাঠাবে এজেন্ট। মূলত নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তির কারণে বাংলাদেশ সরকার নাম ও রং বদলে ফেলা রুশ জাহাজটিকে মোংলা বন্দরে ভিড়তে দেয়নি। রুশ জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে ভারত যেহেতু মার্কিন নিষেধাজ্ঞা মানছে না (এটা আগের অবস্থান), তাই ভারতের হলদিয়া বন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল ঘুরপথে দেশে নেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। গ্লোবাল শিপ ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট মেরিন ট্র্যাফিকের তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার পতাকাবাহী ওই জাহাজ ৩রা জানুয়ারি সকালে বঙ্গোপসাগরের লোয়ার অকল্যান্ড চ্যানেলে অবস্থান করছিল। এর আগে কয়েক দিন ধরে জাহাজটিকে বঙ্গোপসাগরের গভীরে ভাসতে দেখা গেছে। হলদিয়া পোর্ট ট্রাস্টের একটি সূত্র (সে সময়) বিবিসিকে জানায়, চ্যানেলে কুয়াশার অবস্থা কেমন থাকে তার ওপর নির্ভর করে পরবর্তী ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জাহাজটি বন্দরে ভিড়তে পারবে বলে ধারণা দেয়া হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে উদ্বৃত করে বিবিসি জানায়, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা কোনো রুশ জাহাজ ভারতের বন্দরে ভিড়লে তাতে সরকারের আপত্তি থাকবে না।

এর আগে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেন, ‘মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে আমাদের অবস্থান আগেও যা ছিল, এখনো তা–ই। ভারতের সেই নীতিতে কোনো পরিবর্তন হয়নি। রুশ জাহাজটি যদি ভারতের কোনো বন্দরে ভিড়ে থাকে বা ভিড়তে আসে, তাহলে তা–ই।’ তবে হলদিয়া বন্দরে

জাহাজটির পণ্য খালাসের বিষয়ে জানতে সে সময় দিল্লির বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিবিসি, তারা অবশ্য তখন কোনো (সে সময়) সাড়া পায়নি। স্মরণ করা যায়, রাশিয়ার পতাকাবাহী জাহাজটির ২৪ ডিসেম্বর মোংলা বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। তার আগে ২০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানতে পারে যে উরসা মেজর নামধারী জাহাজটি আসলে মার্কিন নিষেধাজ্ঞাভুক্ত জাহাজ ‘স্পার্টা ৩’। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস এক কূটনৈতিক পত্রে বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানায়। তাতে বলা হয়, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা ওই জাহাজে পণ্য ওঠানো-নামানো, জ্বালানি সরবরাহ, জাহাজের নাবিকদের যেকোনো ধরনের সহযোগিতায় যুক্ত হলে ওই দেশের মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া বা বড় আর্থিক দণ্ডের মুখে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হবে। এরপর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তথ্যটি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে জানায়। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় জাহাজটিকে বাংলাদেশের কোনো বন্দরে ভিড়তে দিতে রাজি হয়নি। তারা পূর্বের অনুমতি বাতিল করে। যদিও এ নিয়ে রাশিয়া কূটনৈতিক চিঠির মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে। এমনকি জাহাজটিকে বন্দরে ভিড়তে দিতে বাংলাদেশের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে মস্কো। কিন্তু ঢাকা তাতেও রাজি হয়নি বরং জাহাজটিকে ফিরে যেতে বাধ্য করে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on Facebook [১]Share on Google+ [২]Tweet about this on Twitter [৩]Email this to someone [৪]Share on LinkedIn [৫]