সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে’র জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের এক ছাত্র আজ আত্মহত্যা করেছে। বছরের পর বছর এই নিয়ে লিখে যাচ্ছি! তবে এইসব শুনার সময় কোথায় আমাদের নীতি-নির্ধারক’দের! এই ছেলে আত্মহত্যা করার পর তার বড় বোন (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক) লিখেছে, “অনার্সে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হওয়া ছেলেটাকে বিভিন্ন ইস্যু বানিয়ে মাস্টার্সে সুপারভাইজার দেয়া হয়নি। বিভিন্ন কোর্সে নম্বর কম দিয়েছে শিক্ষকরা। আমার ভাইটা শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল। এটাই তার অপরাধ। ছয় মাস ধরে বিভাগে’র শিক্ষক’রা তিলে তিলে মেরে ফেলছে আমার ভাইকে!”ছেলেটার বোন এরপর লিখেছে, ‘আমার ভাইটারে গত মাসেও আমি জিজ্ঞেস করেছি, আমি কী তোর বিভাগের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মামলা করব? আমার ভাই বলেছিল, আপু আমি জিআরই দিয়েছি, আমি ইউকে চলে যাব, আমার তো রেফারেন্স লাগবে। শিক্ষকরা তাকে ভয় দেখিয়েছে, কিছু করলে রেফারেন্স লেটার দেবে না। আমার ভাইরে মেরে ফেলছে ওরা।’ আমি নিজে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছি। নিজ চোখে আমি দেখেছি শিক্ষকদের আচরণ!

আমি নিজে দেখেছি শিক্ষক’রা কিভাবে নিজদের পছন্দের ছেলে কিংবা মেয়ে’কে নাম্বার বেশি দিয়ে, নানান সুবিধা দিয়ে প্রথম, দ্বিতীয় বানায়! এরপর সেই প্রথম এবং দ্বিতীয় ছেলে’টা কিংবা মেয়ে’টা হয়ে যায় মেধাবী! যেহেতু তারা প্রথম কিংবা দ্বিতীয় হয়েছে, তাই শিক্ষক হওয়া তো তাদের’ই মানায়! এরপর এরা শিক্ষক’ও হয়ে যায়! কারো আর জানা হয় না- এরা প্রথম হলো কিভাবে! এরপর এরাও শিক্ষক হয়ে সেই এক’ই অবস্থা! নিজেদের পছন্দের ছাত্রদের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে! এ এক অনন্ত সাইকেল!আর ডিপার্টমেন্টে আপনার রেজাল্ট যদি একটু খারাপ হয়, তাহলে তো কথা’ই নেই, শিক্ষক’রা আপনাকে মানুষ’ই মনে করবে না! এই হচ্ছে অবস্থা!

এই যে ছেলেটা আত্মহত্যা করেছে; সে হয়ত এতসব অনিয়ম সহ্য করতে না পেরে’ই আত্মহত্যা করেছে। অনার্সে ফার্স্ট হয়েও ছেলেটা সুপারভাইজার পায়নি মাস্টার্সে’র থিসিসের জন্য। চিন্তা করা যায়! তবে আমার প্রশ্ন অন্য জায়গায়! শিক্ষক’ই হতে হবে কেন? জগতে কি অন্য কোন পেশা নেই? শিক্ষক হতে পারবে না, কারণ স্যার’রা ইচ্ছে করে রেজাল্ট খারাপ দিচ্ছে, সব’ই মানলাম। কিন্তু তাই বলে আত্মহত্যা করতে হবে কেন? আর শিক্ষক যদি হতেও হয়, তাহলে অন্য আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তো আছে। এই আমি নিজে’ই তো এখন ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছি। তাও একটা না, দুই দুটো বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমি তো ঠিক’ই এইসব বাঁধা জয় করেছি। নিজেকে স্রেফ সেইভাবে তৈরি করতে হবে। পৃথিবী এখন সবার জন্য উম্মুক্ত। তুমি যদি নিজেকে সেভাবে তৈরি করো, তাহলে তুমি তোমার যোগ্যতা অনুযায়ী একদিন না একদিন কোথাও না কোথাও জায়গা পাবে! এইসব দেশে রেজাল্ট দেখে না, দেখে তুমি কতটুকু জানো ও বুঝো এবং সেটা কি ছাত্রদের জানাতে পারবে কিনা! তারা তোমাকে যাচাই করছে, স্রেফ তোমার রেজাল্ট’কে না! রেজাল্ট দিয়ে এরা ধুয়ে মুছে পানি খায় না! সেটা কেবল আমাদের শিক্ষক’রাই খায়! পৃথিবী’র নানা দেশের বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর শিক্ষকরা তাদের ছাত্রদের ভবিষ্যতে’র স্বপ্ন দেখায়; আর আমাদের বেশিরভাগ ছেলে-মেয়েদের স্বপ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ভেঙে যায়! কেউ কেউ ভেঙে যাওয়া স্বপ্নের সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে আত্মহত্যাও করে! এতে অবশ্য আমাদের শিক্ষকদের কিছু যায় আসে না। দিন শেষে টেলিভিশনের টক’শো’তে এসে দেশ ও জাতি’র ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করে এরা! কারণ এরা হচ্ছে দেশের মেধাবী সন্তান। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে তো এরা’ই আলোচনা করবে! কারো আর জানাই হয়ে উঠে না- এই দেশে মেধাবী’রা অবহেলায় আত্মহত্যা করে আর মেধাহীন’রা টেলিভিশনে গিয়ে দেশ ও জাতি’র ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে বেড়ায়!

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn