কায়রানকে বিস্ময় বালক বলাটা বাড়াবাড়ি হবে না মোটেই। যুক্তরাষ্ট্রের কলেজগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তির গড় বয়স যেখানে ১৭ থেকে ১৯, খুব মেধাবী হলেও ১৫ বা ১৪ বছরের নিচে ভর্তির রেকর্ডও যৎসামান্য; সেখানে বাংলাদেশের কায়রান কলেজে ভর্তি হয়েছে মাত্র ৯ বছর বয়সে! তাও যেনতেন কোনো বিষয় নয়, রীতিমতো গণিত ও রসায়ন নিয়ে পড়ছে সে। ক্যালিফোর্নিয়ার লাস পজিটাস কলেজে ভর্তি হওয়া কায়রানের এমন অভাবিত প্রতিভাকে প্রথম সবার সামনে তুলে ধরে হাফিংটন পোস্ট। জানা যায়, কায়রানের মা কাজী জু‌লিয়‌া চৌধুরী কাজী ও বাবা মোস্তা‌হিদ কাজী। তাদের পূর্বপুরুষ সিলেটের বাসিন্দা। হাফিংটন পোস্টে খবর প্রকাশের পরই আমেরিকায় কায়রানকে ঘিরে আলোচনার শুরু। তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল আমেরিকার জনপ্রিয় টিভি শো গুড মর্নিং আমেরিকাতেও। পরে ডেইলি মেইল, আইরিশ টাইমস ও অন্যান্য পশ্চিমা গণমাধ্যমও কায়রানকে নিয়ে সংবাদ ছেপেছে। হাফিংটন পোস্টে নিজের সম্পর্কে কায়রান লিখেছে, তৃতীয় গ্রেডে থাকা অবস্থায় ডাক্তাররা পরীক্ষা করে জানায়, আমার আইকিউ ৯৯.৯ শতাংশ। আমার ইকিউ বা ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্সও অনেক বেশি। অভিভাবকরাও আমার যত্ন নিতেন। ধরে নেওয়া হয়, আমার কাছে প্রকৃতি প্রদত্ত কিছু রয়েছে। আমি ভর্তি হলাম মিনেসা ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে। অধিক বুদ্ধিসম্পন্ন শিশুদের সাহায্য করার ব্যাপারে আমার মা-বাবাও শিখছিলেন। আমি ডেভিডসন ইনস্টিটিউটের ইয়ং স্কলার নির্বাচিত হই। আমাকে ভর্তি করা হয় বিশেষায়িত স্কুলে। এখন আমি চতুর্থ গ্রেড ও কলেজ— দু’টোতেই পড়ছি।

প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা বিষয়ে কায়রানের বক্তব্য, কলেজে শিক্ষাজীবন শুরুর আগে আমার যেসব বিষয় ভালো লাগত, আমি সেসব বিষয়ে আগ্রহ দেখাতাম ও চেষ্টা করতাম। কলেজের প্রথম কোর্স হিসেবে তারা আমাকে অ্যালজেবরা-১ কোর্সটি নিতে বলে, যেন আমি কলেজের পড়ালেখায় অভ্যস্ত হই। কিন্তু আমি বিরক্ত হতাম ও ক্লাসে ভিডিও গেমস খেলতাম। তবে আমিই মা-বাবাকে পীড়াপীড়ি করি, যেন আমাকে আরও কঠিন কোর্স দেওয়া হয়। যোগ্যতা যাচাই পরীক্ষায় দেখা গেল, আমি ক্যালকুলাস নিতে সক্ষম, যা আমার বর্তমান ধাপেরও চার ধাপ পরের কোর্স। তখন তারা বিশ্বাস করতে শুরু করল, আমি আসলে জানি আমার কী করা প্রয়োজন। কায়রান আরও বলে, কলেজে শিক্ষকরা আমাকে আর দশটা শিক্ষার্থীর মতোই দেখেন। আমি অন্যদের মতো একই নিয়ম মেনে চলি। শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের ক্ষেত্রেও আমার জন্য বিশেষ কোনো পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় না। এটাও বাকি সবার মতো করেই করা হয়। কায়রান জানায়, খুব মিশুক হওয়ায় কলেজে তার অনেক বন্ধু। এমনকি তারা কায়রানের কাছে শিখতে চায়। যদিও ক্যাম্পাসে প্রথম প্রথম অন্যরা তার দিকে অদ্ভুতভাবে তাকাত ও আড়ালে ছবি তুলত। ‘তারা আমাকে কিউট ও স্মার্ট বলে। আমি তাদের সঙ্গে পরিচিত হই ও বন্ধু হতে চাই,’— মন্তব্য কায়রানের। কায়রান বলে, সবাই জানতে চায় আমি অসাধারণ মেধাবী কি না। আমার মা-বাবা বিষয়টিকে দেখেন, মানুষের ওপর প্রভাব ফেলে— এমন বড় বড় সমস্যার সমাধান আমি করতে পারছি কি না, সেই হিসাবে। আমি ৯ বছর বয়সে বেশকিছু বিষয়ের ওপর ভালো দক্ষতা অর্জন করেছি। এদিকে আমার মা বলেন, তিনিই একমাত্র জিনিয়াস, কারণ ঘরের সবকিছু তিনিই সামলে রাখেন। মা আরও বলেন, আইকিউ বা বুদ্ধি সন্তানরা পায় মায়ের এক্স ক্রোমোজোম থেকে। বাবা তখন চোখ পাকায়। মা-বাবার এই খুনসুটিতে পরিবারের আমার সময়টা কাটে বেশ আনন্দেই। কায়রান মনে করে, যদি কারও মনে হয় যে তার অর্জন স্রেফ খোদা প্রদত্ত, তবে তা আংশিক সত্য। কারণ কিছু অর্জন করতে হলে নিজেরও কিছু না কিছু তো করতেই হবে। যে কারণে কায়রান নিজেও বইয়ে মুখ গুঁজে পড়ে থাকে না। বরং আর দশটা ৯ বছরের বালকের সব দুরন্তপনাতেও সে সিদ্ধহস্ত। কম্পিউটার বিজ্ঞানে পারদর্শী কায়রান পাইথন ল্যাঙ্গুয়েজ ও মেশিন লার্নিংয়ে দক্ষতা অর্জন করে মাত্র সাত বছর বয়সে। রাজনীতি নিয়েও প্রবল আগ্রহ রয়েছে তার। কায়রান জানায়, মাত্র তিন বছর বয়স থেকে সে নিয়মিত টেলিভিশনে রাজনৈতিক বিতর্ক দেখত।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn