ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) প্রকাশ করা দুর্নীতির ধারণা সূচকে বাংলাদেশের চার ধাপ অবনতি হয়েছে। বিশ্বের শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্থ দেশগুলোর তালিকায় গতবছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৭, চলতি বছরের প্রকাশিত তালিকায় ১৩ নম্বরে নেমে এসেছে বাংলাদেশ। সূচক অনুযায়ী দুর্নীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অধঃপতন ঘটেছে৷জার্মানির বার্লিনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান টিআইয়ের প্রকাশ করা দুর্নীতির ধারণাসূচক বাংলাদেশের স্কোর হল ২৬, গতবছর এই স্কোর ছিল ২৮। সমান স্কোর পেয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ১৩ তম রয়েছে আফিকার উগান্ডা ও সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে স্বীকৃত এই সূচকে যেসব দেশ ৪৩ বা তার বেশি স্কোর পায় সেসব দেশদুর্নীতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু এই সূচকে দেখা যাাচ্ছে, ৬২ শতাংশের বেশি দেশের স্কোর ৪৩ বা তার নিচে। বিশ্বব্যাপী দুর্নীতির বিস্তারে লাগাম পড়ানো যায়নি।
মঙ্গলবার (২৯ জানুয়ারি) রাজধানীর মাইডাস সেন্টারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে টিআই বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এ তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বাংলাদেশে দুর্নীতি বাড়ার কয়েকটি সম্ভাব্য কারণও তুলে ধরেন।  ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশানালে মতে দেশে দূর্নীতি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাব্য কারণগুলো হলো- দুর্নীতির বিরুদ্ধে অঙ্গীকারের সঙ্গে বাস্তবায়নের মিল না থাকা, হাইপ্রোফাইলদের দুর্নীতি চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় না আনা, সরকার ও রাজনৈতিক দল এক হয়ে যাওয়ায় স্বার্থের দ্বন্দ্ব তৈরি হওয়া, আর্থিক ও ব্যাংকিং খাতে ঋণ খেলাপি ও জালিয়াতি বৃদ্ধি, ভূমি-নদী-খালবিল দখল, টেন্ডার ও নিয়োগে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ না কমা, অবৈধ অর্থের লেনদেন বন্ধ না হওয়া, দুর্বল জবাবদিহিতা, দুদকের কার্যকারিতা ও স্বাধীনতার অভাব, অস্বীকারের সংস্কৃতি, দায়মুক্তি ও দুর্বল আইনের শাসন, গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের ক্ষেত্র সংকুচিত করা। ২০০১ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে টানা পাঁচবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে৷ অর্থাৎ বিশ্বের সবচেয়ে দূর্নীতিগ্রস্ত দেশ ছিল বাংলাদেশ। ২০০৬ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ১৪ নম্বরে ঘুরপাক খেয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৭ সালে পরিনস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়। দূর্নীতিগ্রস্থ দেশের তালিকায় ১৭ তম অবস্থানে নেমে আসে বাংলাদেশ। কিন্তু ২০১৮ সালে তালিকায় সেই পুরনো পথ ১৩ নম্বরে নেমে এল বাংলাদেশ। টিআই-এর দুর্নীতির ধারণা সূচকে ১ নম্বর হলো সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ। এরপর নীচের দিকে যত নামা যায়, দুর্নীতি তত কম হয়েছে বলে ধরা হয়।
এ বছর ১৮০টি দেশের ওপর টিআই এই জরিপ চালিয়েছে। জরিপে ০ থেকে ১০০ নম্বরের স্কেলে দেশগুলোকে নম্বর দেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে কম নম্বর (১০ স্কোর) পেয়ে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হয়েছে সোমালিয়া। তার পরেই রয়েছে (১৩ স্কোর) সিরিয়া ও দক্ষিণ সুদান। তৃতীয় অবস্থানে (১৪ স্কোর) রয়েছে ইয়েমেন ও উত্তর কোরিয়া। ১৮০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৯ নম্বরে। এর আগে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ছিল ১৪৩ নম্বর অবস্থানে। আর সবচেয়ে বেশি (৮৮ স্কোর) পেয়ে সবেচয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ বিবেচিত হয়েছে ডেনমার্ক। কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে এরপরেই রয়েছে (৮৭ স্কোর) নিউজিলল্যান্ড। তৃতীয় অবস্থানে (৮৫ স্কোর) রয়েছে ফিনল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, সুইডেন ও সুজারল্যান্ড। টিআই-এর এই দুর্নীতির ধারণা সূচক মূলত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি পলিসি অ্যান্ড ইনস্টিটিউশনাল অ্যাসেসমেন্ট, ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম এক্সিউকিউটিভ ওপিনিয়ন সার্ভে , বার্টেলসম্যান ফাউন্ডেশন ট্রান্সপরমেশন ইনডেক্স, ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্ট ‘রুল অফ ল’ ইনডেক্স, পলিটিক্যাল রিস্ক সার্ভিসেস ইন্টারন্যাশনাল কান্ট্রি রিস্ক গাইড, ইকোনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট কান্ট্রি রিস্ক রেটিংস এবং গ্লোবাল ইনসাইট কান্ট্রি রিস্ক রেটিংস রিপোর্ট-এর ওপর ভিত্তি করে এই সূচক তৈরি করা হয় বলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এটি স্বীকৃত।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn