- সুনামগঞ্জ বার্তা - http://sunamganjbarta.com -

যে পাঁচ কারণে সিলেটের মেয়র হবেন কামরান !

হাসান মো. শামীম :: সন ২০১১। সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে চলছে মেয়র কাপ ক্রিকেটের ফাইনাল। গ্যালারি ভর্তি দর্শক। হঠাৎ করেই অজানা কারণে অশান্ত হয়ে উঠেন পুর্ব দিক গ্যালারির দর্শকগন। খোজ নিয়ে জানা যায় ফাইনাল ম্যাচের জন্য মাঠের ভেতরে বাউন্ডারি লাইন ঘেষে করা উচু ডায়াসের জন্য, এবং তাতে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের জন্য গ্যালারির দর্শকরা খেলা দেখতে পারছেননা। শুরু হয় চিৎকার চেচামেচি হট্টগোল। একসময় উত্তেজিত দর্শকের একটি অংশ পানির বোতল,ইট হাতের কাছে পাওয়া সব কিছু দিয়ে ঢিল ছুড়তে থাকেন মঞ্চের দিকে। তৈরি হয় ভীতিকর পরিবেশ। ফলে নিরাপত্তাহীনতায় ডায়াস থেকে ভয়ে নেমে যান এর উপরে থাকা মানুষজন। বন্ধ হয়ে পরে খেলা । বিক্ষুব্ধ এক পরিবেশ, ইটের আক্রমনের তোড়ে পুলিশও ওইপাশে যেতে বিলম্ব করছিলো তখন। ফ্লাডলাইটের কৃত্রিম আলোয় এসময় একজন মানুষ এক হাত উপরে তুলে সালামের ভংগিমায় অনায়াসে উঠে পরেন মঞ্চে। এরপর ডায়াসে বসে নিজ হাতে উড়ে আসা পানির বোতল ইট সরাতে থাকেন। ডায়াস পরিষ্কার করার এক পর্যায়ে উঠে দাড়ান। ক্ষোভে জ্বলতে থাকা দর্শকদের দিকে ফিরে দুই হাত জোড় করে শান্ত থাকার আহবান জানান। হতভম্ব দর্শকগণ লজ্জা পেয়েও মানুষটির কান্ডে অভিভুত হয়ে পরেন। মুহুর্তেই গ্যালারি ফেটে পরে মুহুর্মুহু করতালিতে । সকল দর্শক হাত তুলে জানান তারা শান্ত আছেন। আর কোন জটিলতা তারা করবেন না! মুহুর্তের ম্যাজিকে জটিল একটি পরিস্থিতি ঠাণ্ডা করে দেওয়া সেই মানুষটি কে ছিলেন জানেন? বদর উদ্দিন আহমদ কামরান! এই কাজটি যখন তিনি করেছিলেন তখন তিনি সিলেটের মেয়র। প্রবল জনপ্রিয়তায় আকাশ ছোঁয়া এই মানুষটি সিলেট সিটি কর্পোরেশন এর প্রথম মেয়র। তার জনপ্রিয়তা এত প্রবল ছিল যে নিজে স্বশরীরে কোন ক্যাম্পেইন না করেও জেলে বসেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন পুন্যভুমির কান্ডারি। দীর্ঘদিন মেয়র থাকায় এই শহরের অলিগলি যেন তার কাছে খোলা এক বইয়ের মত। আরিফুল হকের কাছে জীবনে প্রথমবার কোন নির্বাচনে হারা কামরান এবার অনেক কষ্টে পেয়েছেন নৌকার সমর্থন। নৌকার মনোনয়ন পেতে নির্বাচনের আগে তাকে খেলতে হয়েছে আরেক নির্বাচন। সে খেলায় তিনি জিতে এসেছেন। নিয়ে এসেছেন প্রবল ভরসা। এবার তাকে জিততেই হবে। হয় এস্পার নাহয় ওস্পার। আসুন জেনে নেই সেই পাঁচটি কারন যা অনুকুলে থাকলে বদর উদ্দীন কামরানই হবেন সিলেট সিটি কর্পোরেশন এর চতুর্থ মেয়াদের মেয়র।

১. জনপ্রিয়তা পুনরুদ্ধার 

বদর উদ্দিন কামরানের দুরন্ত জনপ্রিয়তার দুটি টার্ম আছে। ২০১৩ পুর্ববর্তি ও ২০১৩ পরবর্তি। ২০১৩ সালের নির্বাচনের আগ পর্যন্ত কামরান ছিলেন সিলেট শহরের অপ্রতিদ্বন্দ্বী এক জনপ্রিয় নেতা।কামরানের প্রতি নগরীর মানুষের ভালবাসার রকম ছিল প্রবল। উদাহরন স্বরুপ বলা যায় শহরে হওয়া যে কোন অফিসিয়াল পোগ্রামে তার স্বকন্ঠে গাওয়া গানের জন্য অপেক্ষা করতেন মানুষ। গান শুরু হলে আনন্দে মেতে উঠতেন সবাই। মেয়র থাকাকালীন নগরীর যেকোন ব্যবসায়ীক অনুষ্টান, দোকান-শোরুম তা যতই ছোট হোকনা কেন উদ্ভোধনে কামরান ছিলেন নিয়মিত মুখ। যে কোন পর্যায়ের মানুষের বিয়েতেও কামরান যেতেন অনায়াসে। দারুন স্মৃতিশক্তিও কামরানের একটি প্লাস পয়েন্ট। কাউকে একবারের পরিচয়ে তিনি পরবর্তিতে বাই নেমে আইডেন্টিফাই করতে পারেন। ব্যক্তি কামরান ছিলেন ভয়াবহ রকম জনপ্রিয়। তবে নির্বাচনে হারার পর তার জনপ্রিয়তায় কিছুটা ভাটা পরে। যদিও গত পাচ বছরে নিজেকে বেশ ভাল ভাবেই একটিভ রেখেছেন কামরান। হারিয়ে যাননি লোকচক্ষুর অন্তরালে। বলা চলে আবার যদি ২০১৩ পুর্ববর্তি জনপ্রিয়তার লন্ঠনে আরেকবার আগুন ধরাতে পারেন তাহলে কামরানই হবেন সিলেটের মেয়র।

২. মানবিক কামরান

বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান মোটামোটি একজন অহিংস মতবাদের মানুষ। তার বিরুদ্ধে গত নির্বাচনে ও এর পুর্ববর্তি সময়ে অনেক মিডিয়া হাউজ ও সংবাদকর্মী তাকে নিয়ে অনেক নেগেটিভ নিউজ করেছেন। লিখেছেন অনেক কেচ্ছা কাহিনী। গত নির্বাচনের ঠিক আগে জাতীয় একটি দৈনিকে কামরানের পারিবারিক একটি গোপন খবর প্রকাশিত হয়। বলা হয় এই সংবাদের কারনে অনেক ভোটার তার প্রতি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। নির্বাচনের হারার যা অন্যতম একটি কারন হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু কামরান কখনোই এসব ব্যাপারে সহিংস হননি। বরঞ্চ সেই সব সমালোচনাকারী মিডিয়া হাউজের যেকোন পোগ্রামে থেকেছেন সবার আগে। স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথেও তার সখ্যতা দারুন। সে কারনে এবার ভাল মিডিয়া সাপোর্ট পাবেন কামরান। যদি নির্বাচন পর্যন্ত মিডিয়া তার অনুকুলে থাকে তাহলে কামরানই হবেন সিলেটের মেয়র।

৩. উদ্দাম নতুন প্রজন্ম..

গত নির্বাচনে খুব বাজে অবস্থায় থেকেও ৭০ হাজারের মত ভোট টেনেছিলেন কামরান। বাংলাদেশে হওয়া প্রতিটি নির্বাচনেই অনেকটা পার্থক্য টেনে দেন একেবারে নতুন হওয়া ভোটারগন। সিলেটেও এবার তার ব্যতিক্রম হবেনা। গতবার কামরানের পরাজয়ের একটি অন্যতম কারন ছিল নতুন ভোটারদের তার প্রতি বিমুখতা। এবার সে বিষয়টি একটু কম। এ প্রজন্মের যারা নতুন ভোটার হয়েছেন তারা বেশির ভাগই এখনকার সরকার দলীয় সংঘটনের কর্মী। সে কারনে এই তরুন ভোটারদের ভোট বেশিরভাগই পরতে পারে কামরানের বাক্সে। সেরকম হলে কামরানই হবেন সিলেটের মেয়র।

৪. শ্রমজীবির বন্ধু কামরান…

কামরান পাশ করলে শহরে আবার চার্জার রিকসা, টমটম চলবে এরকম ক্ষীণ একটি আশা কাজ করছে অনেক ভুক্তভোগীর মনে। কামরানের আমলে সাড়ম্বরে অনুমোদন পেলেও পরবর্তিতে নগরীতে নিষিদ্ধ করা এই বাহনগুলোকে। যদিও এখনো বিভিন্ন গলি উপগলি তে চলছে এসব বাহন। সে সময় হুজুগে অনেকে গরীব রিকশাচালক নিজেদের সর্বশেষ সম্বল দিয়ে চার্জার রিকশা, টমটম গাড়ি কেনেন। আশা ছিল প্যাডেল চালিত রিকশা থেকে উত্তরন হয়ে ভাল জীবন যাপন করবেন। কিন্তু নিষিদ্ধ হওয়াতে এই বাহন তাদের কাজে আসেনি। তবে কামরানের অপেক্ষায় দীর্ঘদিন থেকে এরা এসব বাহন রক্ষনাবেক্ষন করে রাস্তায় নামার অপেক্ষা করছেন। তাছাড়া জনশ্রুতি আছে কামরান ফুটপাত ব্যবসা বান্ধব মেয়র। তিনি পাস করলে গুরুত্বপুর্ন ফুটপাতে ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারবেন এমনটাই ভাবছেন গরীব ফুটপাত ব্যবসায়িরা। নিঃসন্দেহে এই শ্রেনী পেশার মানুষজন সমর্থন দেবেন কামরান কে।

এছাড়া সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা কর্মচারী বৃন্দ আরিফের উপর নাখোশ। আরিফের আমলে তাদের অন শিডিউল দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। অনেক সময় দায়িত্ব পালনে অবহেলার দরুন অনেকে ওএসডিও পেয়েছেন, করা হয়েছে শোকজ। জনশ্রুতি আছে কামরান কর্মচারী বান্ধব। তার শাসনামলে দায়িত্বে সুখী ছিলেন বলে অনেক সিসিক কর্মকর্তা বিভিন্ন সময় মন্তব্য করেছেন। এদের বেশির ভাগই নিয়োগ পেয়েছেন সেই আমলে কামরানের সাইনে। তাদের সাপোর্ট তাই থাকবে কামরানের দিকে। এই বিষয়গুলো অনুকুলে থাকলে কামরানই হবেন সিলেটের মেয়র।

৫.কামরানের কান্না, জামায়াত এবং নৌকা

গত নির্বাচনে কামরানের মার্কা ছিল আনারস। এবার নৌকা। বিশ্লেষকদের মতে এই নৌকা প্রতিকই হচ্ছে কামরানের নির্বাচনে পাসের প্রধান অস্ত্র। তাদের মতে কামরান ভাগ্যবান যে স্থানীয় সরকার পর্যায়ে নৌকার মত ঐতিহ্যবাহী একটি প্রতীক তিনি পেয়েছেন। বর্তমান সরকার যে প্রতীক নিয়ে পাশ করে বাংলাদেশে সরকার গঠন করেছে সেখানে কামরানের ব্যর্থ হওয়ার কথা নয়। শুধু মাত্র নৌকা প্রতিকের কারনে আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ,যুবলিগসহ সরকারী দলের সকল অংগ-সংঘটনের নেতা কর্মীরা এবার ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকার জন্য রাত দিন ক্যাম্পেইন করছেন। যা কামরানের জন্য দারুন প্লাস পয়েন্ট। এছাড়া এবার জামায়াত থেকে আলাদা প্রতিদ্বন্দ্বী আছেন সিসিক নির্বাচনে। দীর্ঘদিন পর খোলা হাওয়ায় আসা জামায়াতের এবারের নির্বাচনে ভাল রকম ভোট পাবে বলেও ধারনা করছেন অনেকে। এতে করে আরিফুল হকের ভোট কমে আদতে লাভ হচ্ছে কামরানের। জামায়াত নিজেরা পাস করতে না পারলেও কামরান কে জেতাতে সাহায্য করছে। তাছাড়া ইশতেহার ঘোষনার দিনে নিজের শেষ নির্বাচন বলে কেঁদেছেন কামরান। সিলেটের মানুষ প্রকৃতিগতভাবে একটু আবেগপ্রবন। কামরানের কান্না ও জীবনের শেষ নির্বাচন বলাতে অনেকেই তার প্রতি ভালবাসায় আর্দ্র হয়ে উঠেছেন। তারাও ভাবছেন কামরানের আরেকটি সুযোগ দেওয়া নিয়ে। এই আবেগপ্রবন মানুষের বেশিরভাগই নিরপেক্ষ ভোটার। বলা চলে এই বিষয়গুলো অনুকুলে এলেই বদর উদ্দীন আহমদ কামরানই হচ্ছেন সিলেটের আগামী মেয়র।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on Facebook [১]Share on Google+ [২]Tweet about this on Twitter [৩]Email this to someone [৪]Share on LinkedIn [৫]