বিজ্ঞানীরা আট ধরনের ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়েই শনাক্ত করা সম্ভব এমন একটি সাধারণ রক্ত পরীক্ষা পদ্ধতির সফল পরীক্ষা চালিয়েছেন। এই পরীক্ষার নাম ক্যানসারসিক। এতে ক্যানসারের চিকিৎসায় বিজ্ঞান এক ধাপ এগিয়ে গেল। কেননা, ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে চিকিৎসায় নিরাময়ের সুযোগ অনেক বেশি। ওই আট ধরনের ক্যানসারের মধ্যে পাঁচটির ক্ষেত্রেই আগে শনাক্ত করার কোনো পদ্ধতি চালু নেই। এর মধ্যে অন্যতম হলো অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার। আগে থেকে এর লক্ষণ তেমন বোঝা যায় না। এই ক্যানসার শনাক্ত হয় অনেক দেরিতে। দেরিতে শনাক্ত হওয়ায় এই ক্যানসারে আক্রান্ত পাঁচজনের মধ্যে চারজনই মারা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীদের একটি দল আট ধরনের ক্যানসার আগে শনাক্ত করতে সক্ষম একটি সাধারণ পদ্ধতির পরীক্ষা চালিয়ে সফল হন। সফলতার হার ৭০ শতাংশ। যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীরা একে ‘অত্যন্ত আগ্রহ-উদ্দীপক’ বলে উল্লেখ করেছেন। বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য হলো, প্রতিবছর একবার এই পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যানসার আগেই শনাক্ত করে জীবন বাঁচানো। টিউমারগুলো পরিবর্তিত ডিএনএ ও প্রোটিনের ক্ষুদ্র নমুনা ছড়িয়ে দেয় যা রক্তপ্রবাহে সঞ্চারিত হয়। এই পরীক্ষায় ১৬টি পরিবর্তিত জিন এবং আট ধরনের প্রোটিন শনাক্তের মাধ্যমে ক্যানসার নির্ণয় করা যাবে।
ডিম্বাশয়, যকৃৎ, পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয়, কণ্ঠনালি, মলাশয়, ফুসফুস ও স্তন ক্যানসার—এই আট ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত এক হাজার পাঁচজন রোগীকে নিয়ে ক্যানসারসিক পরীক্ষাটি চালানো হয়, যাদের ক্যানসার অন্য টিস্যুতে ছড়ায়নি। পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে এই পরীক্ষা সফল। জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের চিকিৎসক ক্রিস্টিয়ান টোমাসেটি বলেন, ‘ক্যানসার আগে শনাক্ত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি এই পদ্ধতি ক্যানসারে মৃত্যুর হার ঠেকাতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।’ ক্যানসার যত আগে ধরা পড়বে, চিকিৎসায় নিরাময়ের সুযোগ তত বেশি। আট ধরনের ক্যানসারের মধ্যে পাঁচটির ক্ষেত্রেই আগে শনাক্তকরণের কোনো স্ক্রিনিং পদ্ধতি নেই। অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারে এত কম উপসর্গ দেখা দেয় যে তা শনাক্ত করতে অনেক দেরি হয়ে যায়। এই ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের পাঁচজনের চারজনই শনাক্ত হওয়ার বছরেই মারা যায়। এখন থেকে যাদের ক্যানসার শনাক্ত হয়নি, তাদের ক্যানসারসিক পরীক্ষাটি করা হবে। এটাই হবে ক্যানসারসিকের মূল কার্যকারিতার পরীক্ষা। অন্য স্ক্রিনিং পদ্ধতি যেমন স্তন ক্যানসারের জন্য ম্যামোগ্রামস ও মলাশয়ের ক্যানসারে কোলোনস্কপিজের ক্ষেত্রে এই ক্যানসারসিক পরিপূরক হিসেবে কাজ করতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। টমাসেটি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো বছরে একটিবার এই রক্ত পরীক্ষা করা।’ ক্যানসারসিক পরীক্ষার বিষয়ে সায়েন্স সাময়িকীর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটা অভিনব, কারণ এই পরীক্ষায় পরিবর্তিত ডিএনএ ও প্রোটিন দুটোই খুঁজে বের করা হয়। লন্ডনের ইনস্টিটিউট অব ক্যানসার রিসার্চের সেন্টার ফর ইভল্যুশন অ্যান্ড ক্যানসারের দলনেতা ও রয়্যাল মার্সডেন এনএইচএস ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের অনকোলজিস্ট কনসালট্যান্ট গার্ট অ্যাটার্ড বলেন, ‘এটা বিরাট সম্ভাবনা। আমি অত্যন্ত উদ্দীপ্ত। একটি রক্ত পরীক্ষাই শনাক্ত করবে ক্যানসার। ক্যানসার শনাক্ত করতে আমরা এই রক্ত পরীক্ষা চালু করার দ্বারপ্রান্তে।’