লেখক-প্রকাশক শাহজাহান বাচ্চুকে হত্যার পর পুলিশকে লক্ষ্য করেও গুলি ও ককটেল ছুঁড়ে ঘাতকরা। এসময় পুলিশ পিছিয়ে গেলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। এমনটাই জানিয়েছেন সেই সময় ঘটনাস্থল দিয়ে যাওয়া সিরাজদিখান থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মাসুম আলী। বাচ্চু হত্যার বর্ণনা দিয়ে মাসুম বলেন, আমি মোটরসাইকেলে করে ওই পথে যাচ্ছিলাম। ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগে একটি বিকট আওয়াজ শুনতে পান। প্রথমে মনে করেছিলাম গাড়ির টায়ার বাস্ট মেরেছে। কিন্তু সামনে এসে দেখি একজন লোক পড়ে আছে। মাসুম বলেন, এসময় পাশের রাস্তা থেকে আমাকে উদ্দেশ্য করে একদল যুবক বলে- ‘শালাকে গুলি কর’। এমন সময় একজন ব্যাগ থেকে একটি ককটেল ছোঁড়ে আমার দিকে।  মাসুম জানান, তিনি পিস্তল বের করতেই আরেকজন তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। তিনি বসে গুলি করার চেষ্টা করলে বিপরীত রাস্তায় চারজন সন্ত্রাসীরা দৌড়ে দুই মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। শাহজাহান বাচ্চুর মেয়ে ব্লগার দূর্বা জাহান জানান, তার বাবাকে বুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঢাকার বিশাখা প্রকাশনীর সত্ত্বাধিকারী শাহজাহান বাচ্চুর গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার মধ্যপাড়া ইউনিয়নের কাকালদি গ্রামে। লেখালেখির কারণে তাকে ধর্মীয় উগ্রবাদীরা বিভিন্ন সময় হুমকি প্রদান করে বলে জানিয়েছেন বাচ্চুর স্বজনরা। এছাড়া ২০১৫ সালে একাধিক সংবাদ মধ্যমেও তাকে হত্যার হুমকির বিষয়েও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল।

নিজ গ্রামেও মৌলবাদীদের রোষানলে ছিলেন বাচ্চু। মুক্তচিন্তার বই দিয়ে সাজানো ‘শুদ্ধচর্চা কেন্দ্র’ নামে একটি পাঠাগারও স্থাপন করেছিলেন সেই গ্রামে। পরবর্তীতে সেটাও স্থানীয় মৌলবাদীদের হস্তক্ষেপে বন্ধ করে দিতে হয়েছিল তাকে। ৯০ দশকের প্রকাশক শাহজাহান বাচ্চু, যিনি শুধু কবিতার বই প্রকাশ করতেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) মুন্সিগঞ্জ জেলা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শাহজাহান বাচ্চুকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। সিরাজদিখান উপজেলার মধ্যাপাড়া ইউনিয়নের পূর্ব কাকালদী গ্রামের তিন রাস্তার মোড়ে শাহজাহানের বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার পূর্ব দিকে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। শাহজাহান বাচ্চুর এক বন্ধু ফেসবুক পোস্টে জানান, উনি দোকানে বসে ছিলেন। মোটরসাইকেলে করে দুইজন এসে গুলি করে পালিয়ে যায়। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জঙ্গিদের কোনো সংশ্নিষ্টতা রয়েছে কি-না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) একটি টিম রাতেই ঢাকা থেকে ঘটনাস্থলে গেছে বলে জানা যায়।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn