অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন, জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে আমি সন্তুষ্টি পেয়ে সফল হয়েছি। সোমবার রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতকে সংবর্ধনা দেয় বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)। এতে উপস্থিত হয়েই তিনি এ কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি খুব সৌভাগ্যবান। জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে আমি সন্তুষ্টি পেয়ে সফল হয়েছি। ৮৪ বছরে পদার্পণ করেছি। যেকোনো মুহূর্তে বিদায় নিতে হবে। ‘গত মঙ্গলবার থেকে শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। ডাক্তার এক সপ্তাহের জন্য বিছানা থেকে না ওঠার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু মানতে পারিনি। একটু একটু বেরুতে হয়। ঘরে থাকলেই মনে হয় বিছানায় যাই। আজ প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে গেলেন, তাই বের হয়ে আবার বাসায় এসে বিছানায় গেলাম।’

মুহিত বলেন, ২০০১ সালের একটা নির্বাচনে অংশ নিয়ে হেরেছি। খারাপ লাগে, সেটা আমার ব্যর্থতা। এর আগে কখনো ব্যর্থ হইনি। এজন্য খুব খারাপ লেগেছে। নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীকে বললাম, আমি তো ব্যর্থ হলাম। তাই আমার জীবনে ফিরে যেতে পারি। উনি বললেন-ফিরে যান। তবে কিছুদিন আমার সঙ্গে থাকেন। একটা কাজ করে দিয়ে মুক্ত হতে পারেন। ‘আর কাজটি হলো- নির্বাচনে কারচুপি নিয়ে একটা সত্যিকার গবেষণা চালিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেন। বললাম- চ্যালেঞ্জটা ভালোই। এটা নিয়েই পরে কাজ করতে লাগলাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন সহযোগিতা করতে লাগলেন। একটা জায়গায় গেলাম, সেটা বন্ধ করে দেওয়া হলো। আরেকটা জায়গায় গেলাম, সেখানে আক্রমণের শঙ্কা। পরে তার বাসাতেই একটা জায়গা করে দিলেন। সেখানে ২০০২ সাল থেকে শুরু করে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সিআরই (সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন)-এ কাজ করি। সেটা এখন আরো বিশাল হয়েছে।’

তিনি বলেন, এ কাজ কঠোর ছিলো। কিন্তু খুবই আনন্দ পাই। ছয় বছর এখানে আমরা শুধু নিজেরা গবেষণা করিনি, অনেকের কাজ থেকে গবেষণা আদায় করে নিয়েছি। ছোট বেলা থেকে দেশের স্বপ্ন দেখা, সেটাই একটা ছকে আনতে সক্ষম হই ২০০৯ সালে। পিএম মাঝেমাঝেই বলেন ছকের আর কতটুকু বাকি আছে। মাঝে কিছু পরিবর্তন হয়েছে। কিছু বিষয় পূরণ হওয়ায় পরিবর্তন করতে হয়েছে। স্বপ্ন যা দেখেছি, তার চেয়ে স্বপ্নের সীমা অনেক বেশি অতিক্রম করেছে। সে কারণে আমার খুব তৃপ্তি। স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়না তা আমার বিশ্বাস হয় না।’

‘স্বপ্নের অনেক ব্যাপ্তি হয়েছে। এটাই এখন তৃপ্তির। আমার সৌভাগ্য যে যেভাবে জীবন শুরু হয়েছে তার চেয়ে ভালোভাবে শেষ হচ্ছে। তৃপ্তি নিয়ে বিদায় হওয়ার চেয়ে বড় পাওয়া আর নেই। এটা সম্ভব করে তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’ যে কারণে মনে হয় সার্থকতা আসছে, তার মৌলিক বিষয় হচ্ছে জনকল্যাণে নিবেদন। শেখ হাসিনা সরকারের একটি মাত্র লক্ষ্য-সেটি হচ্ছে জনকল্যাণ। সেই কল্যাণ বিভিন্নভাবে রূপ পায়। তার সরকার সব শক্তি সেখানেই ব্যয় করছে। স্বপ্নের বাস্তবায়ন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে একটু নিচু মানের হতে পারে। তবে উচ্চ লক্ষ্যমাত্রার দিকে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এটাই আমার অসম্ভব তৃপ্তি। সমষ্টিগত তৃপ্তির বিষয়টাও ভালো লাগছে। এ তৃপ্তির মধ্য দিয়ে আমার জীবন শেষ হলে আর পাওয়ার কিছু নেই।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মানসিক চিন্তার বড় পরিবর্তন হয়েছে। দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সরকার বিদেশিদের ওপর নির্ভরশীল নয়। প্রতিটি খাতেই বিনিয়োগ বাড়ছে। বিনিয়োগের একটি বড় অংশ পুঁজিবাজারের মাধ্যমেই আসা উচিত। আর এটা অবশ্যই আসবে বলেও আশা প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী। বিএমবিএ’র সভাপতি সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. খায়রুল হোসেনসহ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn