পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য এবারও শিক্ষার্থীদের দেশের নানা প্রান্তে দৌড়াতে হবে। একই ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ বা সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। ফলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আর্থিক ও শারীরিক ভোগান্তি কমছে না। প্রসঙ্গত, গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার রোডম্যাপ তৈরির লক্ষ্যে ছয় মাস আগে কমিটি গঠন করে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু সেই কমিটি বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কোনো প্রতিবেদন দিতে পারেনি। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের জানান, ‘আমি দায়িত্ব গ্রহণের পরই ২০০৯ সালে গুচ্ছপদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার উদ্যোগ নিই। নানা কারণে তা হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপে কমিটি করে দিয়েছি। ওই কমিটির কাজ শেষ হয়নি। ফলে এবারও আগের মতোই ভর্তি পরীক্ষা হবে। তবে আগামী বছর গুচ্ছ পদ্ধতিতে এই পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হবে।’ ১৪ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যানকে প্রধান করে ওই কমিটি গঠন করা হয়। এ প্রসঙ্গে ইউজিসি চেয়ারম্যান যুগান্তরকে বলেন, ‘সমন্বিত ভর্তির কাজটি মূলত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই করবে। আমাদের (কমিটি) কাজ ছিল তাদের সহায়তা করা। তবে কাজটি এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ একটি কমিটি গঠন করেছে। সেই কমিটি কাজ অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছে। আমরা আশা করছি, আগামী বছর থেকে অভিন্ন পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কাজ সম্পন্ন করা যাবে।’ দেশের সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ। গত বছরের ডিসেম্বরে পরিষদ অভিন্ন ভর্তি কার্যক্রমের ব্যাপারে একটি কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির প্রধানের দায়িত্বে আছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ। এ ব্যাপারে তিনি যুগান্তরকে বলেন, ৪০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এগুলোর আবার নানা ক্যারেক্টর (বৈশিষ্ট্য) আছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলাদা গ্রুপে ভাগ করে আলোচনা করে কাজ এগিয়ে নিয়েছি। এ বছর চাইলে হয়তো গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা যেত। কিন্তু কাজটি তাড়াহুড়োর নয়। কেননা সামান্য ভুলে বড় বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে। তাই ধীরেসুস্থে আগানো হচ্ছে। আশা করছি, আগামী বছর থেকে গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা সম্ভব হবে। শিগগিরই আমরা এ সংক্রান্ত কৌশল ঘোষণা করব।’
জানা গেছে, গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা আয়োজনের লক্ষ্যে ইউজিসি দেশের বিভিন্ন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে একটি বৈঠক করেছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের কমিটির সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে বৈঠকে সংশ্লিষ্ট ভিসিরা পরামর্শ দেন। এ ব্যাপারে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি যুগান্তরকে বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন বিষয়ে অনার্স চালু আছে। সেগুলোকে সমন্বয় করা, প্রশ্নপত্র প্রণয়নে জটিলতা ও গোপনীয়তা, মাইগ্রেশন পদ্ধতি কিভাবে থাকবে সেগুলো বিবেচনায় আনার জন্য প্রথমত একটি স্বচ্ছ নীতিমালা প্রয়োজন। সেটা এখনও হয়নি। তাই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও এই শিক্ষাবর্ষ থেকে ভর্তি করা সম্ভব নয়। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সমন্বিত বা গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি নিয়ে ২০০৮ সাল থেকে আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু এর কোনো সমাধান নেই। বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনাগ্রহেই আটকে আছে এ পদ্ধতি। মূলত ভর্তি পরীক্ষাকেন্দ্রিক বিশাল আয় আছে। সেই আয়ই এ ক্ষেত্রে বড় বাধা। বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা ভর্তি পরীক্ষার ওপর সম্প্রতি গবেষণা চালায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত উচ্চশিক্ষা মানোন্নয়ন প্রকল্প (হেকেপ)। ওই গবেষণায় বলা হয়, প্রতি ভর্তি মৌসুমে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেয়া, ভর্তি কোচিংসহ আনুষঙ্গিক খাতে একজন শিক্ষার্থীর গড়ে ৯৬ হাজার টাকা খরচ হয়। অনেক দরিদ্র শিক্ষার্থীর পক্ষে এ অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হয় না। এ প্রকল্পের অধীনে তৈরি ২০ বছর মেয়াদি উচ্চশিক্ষার কৌশলপত্র এবং ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রস্তাবিত অপর কৌশলপত্রেও এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা আছে।