সজীব ওয়াজেদ জয়- ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা যখন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন, তখন তিনি দেশ থেকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধ দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং এখন পর্যন্ত তিনি সেই কাজটি নিরলসভাবে করে যাচ্ছেন। অথচ বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ক্রমাগতভাবে সরকারের ঘাড়ে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বলপ্রয়োগে গুম করার দোষ চাপিয়ে চলেছে। কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থাও বিএনপির এই সুরে কথা বলছে। কিন্তু তাতে সত্যের কিছু যায়-আসে না, সেটা অপরিবর্তিতই থাকছে। তাদের দাবি সোজাসাপ্টা ভাষায়- অসত্য।বাংলাদেশের পুলিশ প্রতিটি গুমের অভিযোগ তদন্ত করছে। তারা কোনোটাতেই সরকারের সম্পৃক্ততার সূত্র খুঁজে পায়নি। উল্টো তারা দেখেছে অনেক গুমের ঘটনার নেপথ্যের কারণগুলো এমন ছিল যে, কথিত গুম হওয়া ব্যক্তি বড় ধরনের অপরাধের বিচার এড়ানোর জন্যই স্বেচ্ছায় লুকিয়ে থেকেছেন। বাংলাদেশের ৪৭ বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, দেশে রাজনৈতিক স্বার্থে মাত্রাতিরিক্ত সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশিরা ‘বলপূর্বক গুমে’র ধারণার সঙ্গে পরিচিতও বটে। এর আগে সামরিক শাসক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলো এই কৌশল অবলম্বন করত। এভাবে অপরাধগুলো সংঘটিত হতে হতে জনমনে ভয় ও সন্দেহ গেঁথে যায়। বিএনপির অভিযোগের মধ্যে সেটারই প্রতিধ্বনি শোনা যায়।

বিএনপির ধ্বংসাত্মক রাজনীতি নতুন কিছু নয়। ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার পরিবর্তে তারা দেশজুড়ে হরতাল-অবরোধের প্ররোচনা দিয়েছিল। বিএনপি নেতৃত্ব ও তাদের সহযোগীরা হাজার হাজার বাড়ি, গাড়ি, বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আগুন দিয়েছে, লুট করেছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষতিসাধন করেছে, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার ২০ জন কর্মকর্তাকে পর্যন্ত হত্যা করেছে। নির্বাচনের দিন তারা ভোট কেন্দ্রগুলোয় বোমা মেরেছে। তাদের আক্রমণে সর্বমোট ২৩১ ব্যক্তি নিহত ও ১১৮০ জন আহত হয়েছেন। বিএনপি নেতৃত্ব যা আশা করেছিল, সেই আশা ভঙ্গ হয়েছে। সরকার সহিংসতা বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োগ করেছে ও নাটেরগুরুদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগ জাতিকে প্রগতিশীল, ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক ধারায় এগিয়ে নিয়ে চলেছে। বিএনপির পক্ষে জনমত নেমে গেছে নিচে। ২০ ব্যক্তির প্রাণহানি ঘটেছিল যে গ্রেনেড হামলায়, সেটার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ এসেছে দলটির নেতা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে। তিনি এখন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। পুলিশের তালিকায় থাকা বিএনপির বেশকিছু নেতা আত্মগোপনে গিয়েছিলেন, দলীয় অন্যরা এই আত্মগোপনকে গুম আখ্যা দিয়ে এই ধারণাটি বদ্ধমূল করতে চাইছে যে, এসবের পেছনে সরকারের হাত রয়েছে। তথাকথিত গুমের ঘটনাগুলো অপরাধ কিংবা মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়। বরং এগুলো অভিযুক্ত অপরাধীদের জবাবদিহিতা ও বিচার এড়ানোর কাল্পনিক অভিযোগ। বিএনপির তাত্ত্বিক নেতা সালাউদ্দিন আহমেদের কথাই ধরা যাক। ২০১৫ সালে তিনি নিখোঁজ হয়েছিলেন এবং বিএনপি প্রচার চালিয়েছিল যে, বাংলাদেশের পুলিশ তাকে অপহরণ করেছে। অথচ, দুই মাস পর তিনি ভারতে আবিষ্কৃত হন। রিপোর্ট অনুযায়ী, পুলিশ তাকে আমুদে অবস্থায় দেখতে পায়। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ পুরো ঘটনাটিকে নিজ দেশে বিচার এড়ানোর লক্ষ্যে সাজানো নাটক আখ্যা দিয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে।

২০১৭ সালে মনে করা হয়েছিল ফরহাদ মজহার গুম হয়েছেন। কিন্তু মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাকে ঢাকাগামী একটি বাসে দেখা গেছে। তাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে তুলে নেয়া হয়েছে এমন কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণই পাওয়া যায়নি। বস্তুত ফরহাদ মজহার যেদিন নিখোঁজ হয়েছিলেন, সেদিনই বিকালে নিরাপত্তা ফুটেজে দেখা গেছে খুলনার নিউমার্কেটে স্বাধীন ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন তিনি। ২০১৭ সালের আগস্টে সৈয়দ সাদাত আহমেদ, যিনি একটি অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুলিশের নথিভুক্ত ছিলেন, তিনি নিখোঁজ রয়েছেন বলে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল। ওই বছরেরই ডিসেম্বরে তিনিও অক্ষত অবস্থায় ফিরে এসেছেন। অপরাধের বিচার এড়ানোর লক্ষ্যে বিএনপির অপপ্রচারের এগুলো কয়েকটি উদাহরণ মাত্র। অত্যন্ত দুঃখজনক, এসব মিথ্যা রিপোর্টের কারণে দেশে-বিদেশে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। এটা ভ্রান্তি বৈ অন্য কিছু নয়। বাংলাদেশের পুলিশ প্রতি ক্ষেত্রেই আন্তর্জাতিক ও দেশের নিজস্ব আইনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই তার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ১৯৮৪ সালে নির্যাতন, নিষ্ঠুরতা, অমানবিকতা ইত্যাদি বিষয়ে জাতিসংঘের কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী বাংলাদেশ তার নিজস্ব আইনকে সেভাবেই সুসমঞ্জস রেখেছে।

উপরন্তু, বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে : কোনো ব্যক্তির প্রতিই নির্যাতনমূলক, নিষ্ঠুর, অমানবিক অথবা অবমাননাকর আচরণ করা যাবে না। একইভাবে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩৩০ ধারায় স্বীকারোক্তি কিংবা তথ্য আদায়ে কারও কোনো ক্ষেত্রে ক্ষতি করা যাবে না মর্মে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার আইনের শাসন মেনে চলার প্রশ্নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এটা মাথায় রেখেই পুলিশ ও আইন প্রয়োগকারী অন্যান্য সংস্থার ওপর নজর রাখছে সরকার। বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে প্রকাশ্য অপহরণ করে তাদের পার পাওয়ার কোনো সুযোগই নেই। এককথায় বাংলাদেশের মতো একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিরোধী রাজনীতিকদের গুম করার কোনো কারণই থাকতে পারে না।

দ্য ওয়াশিংটন টাইমসে ৪ জুন প্রকাশিত, ইংরেজি থেকে অনূদিত : মাহবুব কামাল

সজীব ওয়াজেদ জয় : বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা ও প্রধানমন্ত্রীর ছেলে

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn