রফিকুল ইসলাম কামাল :: পেশায় তিনি ডাক্তার। কিন্তু অপ্রকাশ্যে তিনি ছিলেন ‘কন্ট্রাক্ট কিলার’! যুক্তরাজ্যে থাকা এক ব্যক্তির কাছ থেকে সিলেট অঞ্চলের এক সংসদ সদস্যকে খুন করার কন্ট্রাক্ট নিয়েছিলেন তিনি। সেই জাহিদুল আলম কাদিরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। এই ‘কন্ট্রাক্ট কিলার’ গ্রেফতার হলেও প্রাণনাশের আতঙ্কে রয়েছেন সিলেটে জাতীয় পার্টির দুই সংসদ সদস্য। তাঁরা হলেন সিলেট-২ আসনের সাংসদ ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া ও সিলেট-৫ আসনের সাংসদ সেলিম উদ্দিন। উভয়ই জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতা। যোগাযোগ করা হলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া সিলেটভিউকে বলেন, ‘কয়েক মাস আগে থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমাকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে আসছিল। আমার নিরাপত্তা জোরদারের কথাও বলেছিল তারা। কিন্তু বিষয়টি আমলে নেইনি। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করিনি, কারণ তাতে আমার স্বজনদের মাঝে আতঙ্ক ছড়াতে পারে। তবে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার পরামর্শে গত কিছুদিন আমি খুব বেশি কর্মসূচিতে অংশ নেইনি। তবে আমাকে এটাও বলা হয়েছিল, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কেউ কিছু ঘটাতে চাইলে তাকে ধরা যাবে।’ ঠিক কি কারণে কেউ আপনাকে খুন করাতে চাইবে বা এই খুনের পরিকল্পনার পেছনে কারা থাকতে পারে-এমন প্রশ্নে সাংসদ এহিয়া বলেন, ‘যারা আমার ক্ষতিতে লাভবান হবে, তারাই হয়তো এর পেছনে আছে।’ সংসদ সদস্য সেলিম উদ্দিনও তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের বিষয়টি সিলেটভিউকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এর আগেও দেশে ও লন্ডনে আমাকে হত্যার ষড়যন্ত্র হয়েছে। এখন জাহিদ নামের কিলার সিলেটের কোনোও এক এমপিকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছে জেনে আমি শঙ্কিত।’ ডা. জাহিদুল গ্রেফতার হলেও আতঙ্কের পেছনে রয়েছে তার সহযোগিরা। পুলিশের ভাষ্যমতে, সিলেট ও সুনামগঞ্জ অঞ্চলে জাহিদুল আলম কাদিরের কয়েকজন সহযোগি রয়েছে। ডা. জাহিদ তার সহযোগিদের কি নির্দেশনা দিয়ে রেখেছেন, সে বিষয়ে নিশ্চিত নয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এজন্য তাকে আরো জিজ্ঞাসাবাদের কথা জানিয়েছে পুলিশ।

জানা যায়, গত ১৫ মে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে ডা. জাহিদুল আলমকে দুটি পিস্তল আর আট রাউন্ড গুলিসহ গ্রেফতার করা হয়। তার বাড়ি কুষ্টিয়ার পোড়াদহের বাবুপাড়ায়। তার বিরুদ্ধে মামলা হয় অস্ত্র আইনে। পরে গত ৩ জুন ঢাকার গাবতলী থেকে তার স্ত্রী মাসুমা আক্তারকে বিদেশি পিস্তল ও চার রাউন্ড গুলিসহ গ্রেফতার করা হয়। মাসুমাকে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে জাহিদুলের অবৈধ অস্ত্রের মজুদের বিষয়টি। পুলিশ তাদেরকে রিমান্ডে নেয়। তাদের তথ্যানুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার (৭ জুন) ভোরে ময়মনসিংহের বাঘমারা এলাকায় জাহিদুলের ফ্ল্যাট থেকে ১২টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১৬১০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে ডা. জাহিদুলের বিষয়ে নানা তথ্য জানান পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সিলেট অঞ্চলের এক সাংসদকে খুন করার জন্য লন্ডনে থাকা এক ব্যক্তির সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন জাহিদুল আলম কাদির। তবে লন্ডনের সেই ব্যক্তি কিংবা সিলেটের কোন এমপিকে খুনের পরিকল্পনা হয়েছিল, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ বিষয়ে পুলিশ কাজ করছে।’ ডা. জাহিদুল আলম এর আগে বেশকিছু খুনে অংশ নিয়েছেন উল্লেখ করে পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম জানান, পেশাদার খুনিদের কাছে যেসব অস্ত্র পাওয়া যায়, জাহিদুলের কাছে সেরকম অস্ত্র পাওয়া গেছে। জাহিদুল লাইসেন্সবিহীন বিদেশি অস্ত্র সংগ্রহ করে উচ্চমূল্যে বিক্রি করতেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn