আল-হেলাল: সুনামগঞ্জে এক মুক্তিযোদ্ধার নামীয় ভাতা ভোগ করছে ২ ব্যক্তি। এদের দুজনের একজন পুরুষ অপরজন মহিলা। গত ৮/৫/২০১৬ইং জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে সংরক্ষিত তৎকালীন  সিলেট জেলার সুনামগঞ্জ থানার মুক্তিযোদ্ধাদের নামীয় তালিকায় (ভারতীয় তালিকায়) দেখা যায়,৬১ নং ক্রমিকে বর্ণিত মুক্তিযোদ্ধা হচ্ছেন ছয়দুর রহমান পিতা নাগবর আলী গ্রাম ডলুরা,ডাকঘর পলাশ,থানা সুনামগঞ্জ জেলা সিলেট। ভারতীয় তালিকার এই নামের সূত্র ধরে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এ নামের বিপরীতে ভাতা ভোগ করছেন বর্তমান বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার ধনপুর ইউনিয়নের কাইতকোনা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা (সাইদুর রহমান) ছয়দুর রহমান। যার জাতীয় পরিচয়পত্র নং ১৯৪৫৯০১১৮২০০০০০০৫,নাম সাইদুর রহমান,পিতামৃত নেকবর আলী,মাতামৃত আয়শা খাতুন,গ্রাম চিনাকান্দি,থানা বিশ^ম্ভরপুর,সুনামগঞ্জ। উল্লেখ্য পূর্বে তিনি সুনামগঞ্জ জেলার সদর থানার পলাশ ইউনিয়নের ডলুরা গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা ছিলেন। এবং এই গ্রাম থেকেই ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। দেশ স্বাধীন হবার পর তিনি জীবিকার তাগিদে ঢাকা শহরে চলে যান এবং রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। পরে আসেন মৌলভীবাজার ও সিলেট শহরে। ভারতীয় তালিকায় বর্ণিত এই গরীব মুক্তিযোদ্ধাকে অনুসন্ধান করে বিশ^ম্ভরপুর এনে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন সাবেক উপজেলা কমান্ডার আব্দুল হাশিম ওরফে হেকিম মাস্টার। গত ৮ বছর ধরে মুক্তিযোদ্ধা ছায়দুর রহমান বিশ^ম্ভরপুর উপজেলা সদরস্থ সোনালী ব্যাংক থেকে নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা ভাতা উত্তোলন করে স্বপরিবারে ভোগ করে যাচ্ছেন। মুক্তিযোদ্ধা ছায়দুর রহমানের স্ত্রী দুজন প্রথমজন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়নের ডলুরা গ্রামের রুপিয়া বেগম এবং দ্বিতীয় জন বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার ধনপুর ইউনিয়নের ছাতারকোনা গ্রামের মাজেদা বেগম। মুক্তিযোদ্ধা ছায়দুর রহমানের ৭ পুত্র ও ৩ কন্যার মধ্যে রয়েছেন রমজান মিয়া,তৈয়বুর রহমান,আতিবুর রহমান,মতিবুর রহমান,আজিজুর রহমান,হাফিজুর রহমান,রাফিজুর রহমান,আলেয়া বেগম,হনুফা বেগম ও রাফিজা বেগম। অন্যদিকে উক্ত জীবিত মুক্তিযোদ্ধা ছায়দুর রহমানকে মৃত দাবী করে কথিত মৃত মুক্তিযোদ্ধার উত্তরাধিকারী সেজে গত ২ বছর যাবৎ মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ভোগ করছেন মোছাঃ মনমালা বেগম নামের এক মহিলা। জাতীয় পরিচয়পত্র নং ১৯৭১৯০১৮৯৩৩৩৩৮৪৫৯ অনুযায়ী উক্ত মোছাঃ মনমালা বেগম এর পিতা হচ্ছেন উস্তার আলী,মাতার নাম আফতাব ফুল বিবি,স্বামী হানিফ মিয়া গ্রাম ডলুরা। ১৯৮৮ সালে তার বিবাহের কাবিননামায়ও পিতার নাম উস্তার আলী লেখা আছে। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা আদায়ের লক্ষে উক্ত মনমালা বেগমের নামে তার স্বামী হানিফ মিয়া গত ৭/৫/২০১৬ইং তারিখে সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার মোঃ মনসুর আলী ও সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল কাদিরের সীল স্বাক্ষর গ্রহনের মাধ্যমে স্ত্রী মনমালা বেগমকে একমাত্র উত্তরাধিকারী সাজিয়ে একটি যোগাযোগীমূলক ওয়ারিশান সনদপত্র গ্রহন করেন। ২৬/৮/২০১৬ইং তারিখে জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার মোঃ আব্দুল মালেক এর কাছ থেকে জীবিত মুক্তিযোদ্ধা ছায়দুর রহমানকে মৃত দাবী করে একটি প্রত্যয়ন সনদপত্র গ্রহন করেন। অত;পর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সদর উপজেলা কমান্ডের কমান্ডার আব্দুল মজিদের সহায়তায় সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের ডলুরা গ্রামের মৃত মুক্তিযোদ্ধা ছয়দুর রহমানের একমাত্র উত্তরাধিকারী কন্যা হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা ভোগ করে যাচ্ছেন। জেলা হিসাব রক্ষণ অফিসার মোঃ তোফাজ্জল হোসেন স্বাক্ষরিত ভাতা বহি নং ৬৬৯ তাং ১৪/১২/২০১৭ইং। মাসিক ১০ হাজার টাকা হিসেবে উক্ত মনমালা বেগম সুনামগঞ্জ সোনালী ব্যাংক শাখা থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ২ লক্ষ টাকা ভাতা আদায় করেছেন। জীবিত ভাতাভোগীকে মৃত উল্লেখ করে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধার একমাত্র উত্তরাধিকারী সেজে কেন প্রতারনার আশ্রয়ে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ভোগ করছেন সরজমিনে মোছাঃ মনমালা বেগমের বাড়ীতে গিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,কে আমার পিতা মাতা আমি জানিনা। আমি ছোট থাকতেই তারা মারা গেছেন। আমার পালিত পিতা উস্তার আলী আমাকে বিয়ে দিয়েছেন। আমি ভাতার ব্যাপারেও কিছুই জানিনা সবি আমার স্বামী হানিফ মিয়া,মুক্তিযোদ্ধা মিছির আলী ও থানা কমান্ডাররা জানেন। আমি শুধু ভাতা আনার জন্য ব্যাংকে যাই এবং টিপসহী দেই। অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ডলুরা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মিছির আলী বলেন,আমি ভাতা বিতরন কমিটির কোন সদস্য নই। তাই কাউকে অন্যায়ভাবে মুক্তিযোদ্ধার কন্যা বানিয়ে ভাতা দেওয়ার প্রশ্নই আসেনা। তিনি বলেন,মনমালা বেগম উস্তার আলীর পালিত নয় বরং ঔরষজাত কন্যা। জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের বর্তমান মেম্বার মোঃ আব্দুল মালেক ও সাবেক মেম্বার মোঃ মনসুর আলী বলেন,মুক্তিযোদ্ধার ভূয়া কন্যা সেজে এবং জীবিতকে মৃত লিখে উত্তরাধিকার সনদ ও প্রত্যয়নপত্র নিয়ে মোছাঃ মনমালা বেগম ও তার স্বামী হানিফ মিয়া আমাদেরকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রতারিত করেছে। তারা লিখিতভাবে তাদের ইস্যুকৃত ওয়ারিশান সনদ ও প্রত্যয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা (সাইদুর রহমান) ছয়দুর রহমান বলেন,আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের উপ-ব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন,ভারতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকার ৩নং খন্ডে ২৪,৬৪৮ নং ক্রমিকে (সিলেট জেলার সুনামগঞ্জ সদর থানার ক্রমিক নং ৬১) বর্ণিত ছয়দুর রহমান নামটি আমার মর্মে আমাকে প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন। আমি গত ৮ বছর ধরে আমার ভাতা ভোগ করে যাচ্ছি। মোছাঃ মনমালা বেগম নামে আমার কোন মেয়ে নেই। মনমালা বেগম এর মাতা অর্থাৎ আফতাব ফুল বিবি নামে কোন মহিলাকে আমি বিবাহ করিনি। আমাকে মৃত বানিয়ে ঐ মহিলা ও তার স্বামী বেআইনীভাবে ভাতা ভোগ করে সরকারের সাথে প্রতারনা করে যাচ্ছে। আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করছি। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সুনামগঞ্জ জেলা ইউনিট কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার ও রঙ্গারচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোকশেদ আলী বলেন, একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তার জীবদ্ধশায় যেখানে নিজে ভাতা ভোগ করছে সেখানে ঐ জীবিত মুক্তিযোদ্ধাকে মৃত বানিয়ে তার ভূয়া উত্তরাধিকারী সেজে একজন মহিলা কর্তৃক ভাতা গ্রহন মস্ত বড় অপরাধ। এই অপরাধের মাধ্যমে সরকারকে ঠকিয়ে সরকারের টাকা অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করা হয়েছে। আমি এই অপরাধের সাথে জড়িত সমস্ত প্রতারক সিন্ডিকেট এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
 

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn