শেখ জাহাঙ্গীর আলম- শহীদ বুদ্ধিজীবী সেলিনা পারভীনের ছেলে সুমন জাহিদকে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তার পরিবারের। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে তার বড় ভায়েরা এটিএম এমদাদুল হক বুলবুল বলেছেন, ‘সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কে বা কারা তাকে উত্তর শাজাহানপুরের বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপরই রেললাইনের পাশে তার লাশ পাওয়ার খবর শোনা যায়। সুতরাং তাকে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এটিএম এমদাদুল হক বুলবুল বলেন, ‘আজ সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে অফিসে চলে যাই। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১০টার দিকে সুমন জাহিদের স্ত্রী টুইসির ফোন পেয়ে দ্রুত ছুটে যাই তাদের বাসায়। তার পরিবারের কাছ থেকে যতটুকু শুনেছি, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তাকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় বাইরে।’ শহীদ সিরাজউদ্দিনের ছেলে তৌহিদ রেজা নূর বলেন,  ‘আট বছর বয়স থেকে সুমন জাহিদের সামনে তার মা সেলিনা পারভীনকে আল বদররা ধরে নিয়ে গিয়েছিল। তারপর থেকে দেখেছি তার সংগ্রামী জীবন। স্কুটার চালিয়ে লেখাপড়া করেছেন। শত সংগ্রামের পথ পেরিয়ে তিনি একটা পর্যায়ে এসেছিলেন। সেই সুমন জাহিদের আত্মহত্যা করার প্রশ্নই ওঠে না।’ তিনি বলেন,  ‘সুমন জাহিদ খুব সচেতন মানুষ ছিলেন। বাসা থেকে তিনি সবসময় মোটরসাইকেল নিয়ে বের হতেন। কিন্তু আজ তার সঙ্গে মোটরসাইকেল ছিল না। তার মতো একজন সচেতন মানুষের সামনে এত বড় ট্রেন আসবে আর তিনি ট্রেনে কাটা পড়বেন, এটা হতেই পারে না।’

তৌহিদ রেজা নূর বলেন, ‘রাজাকার গোলাম আজমের বিরুদ্ধে যখন গণআন্দোলন গড়ে উঠে তখনকার গণআদালতের অন্যতম সাক্ষী ছিলেন সুমন জাহিদ। বর্তমান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেরও সাক্ষী তিনি। তার ওপর বিভিন্ন হুমকি ছিল। তিনি বিষয়গুলো পুলিশকেও জানিয়েছিলেন।’ তিনি বলেন, ‘সুমন জাহিদের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ট্রেনে কাটা পড়লে শরীর থেকে মাথা এভাবে বিচ্ছিন্ন হত না। গলা ছিন্নভিন্ন হয়ে যেতো, মুখে আরও আঘাতের চিহ্ন থাকতো। ধারনা করছি, তার গলায় ধারালো কোনও অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন ‘কয়েকদিন আগে শাহজাহান বাচ্চুকে খুন করা হয়েছে, এর আগে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের ভাইকে খুন করা হয়েছিল। আমি বিশ্বাস করি, স্বাধীনতা বিরোধী কোনও চক্র আবার জেগে উঠেছে, সুমন জাহিদও বিরোধী শক্তির হাতেই খুন হয়েছেন। এটা আমাদের জন্য খুব এলার্মিং একটা বিষয়।’ তিনি বলেন, ‘এটি সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। কারা, কীভাবে এবং কেন এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।’পরিবারের পক্ষ থেকে বড় ভায়েরার দাবি, ‘তাকে এর আগেও বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হয়েছে। দুই বছর ধরে তিনি অনেকবার হুমকি পেয়েছেন। তাই আমরা ধারণা করছি, পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে।’ যদিও পুলিশের ধারণা, ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু হয়েছে সুমন জাহিদের। কারণ বৃহস্পতিবার (১৪ জুন) সকালে খিলগাঁওয়ের বাগিচা মসজিদ সংলগ্ন রেললাইন ঘেঁষে তার লাশ পাওয়া যায়।

ঘটনাস্থল থেকে সুমন জাহিদের মরদেহ উদ্ধার করে রেলওয়ে হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। ঢাকা রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াসিন ফারুক বলেন, ‘সুমন জাহিদের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি, ট্রেনে কাটা পড়ে তার মৃত্যু হয়েছে।’ময়নাতদন্তের জন্য সুমন জাহিদের লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। লাশ নিয়ে ঢামেক হাসপাতালের মর্গে যান রেলওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘আনুমানিক সকাল ১০টার দিকে আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। রেললাইন ঘেঁষেই সুমন জাহিদের লাশ পড়ে ছিল। আমরা ধারণা করছি, ট্রেনের চাকা তার গলার ওপর দিয়ে গেছে। তবে কোন ট্রেন তা আমরা এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি।’মৃতের শ্যালক সারোয়ার  জানান, সুমন জাহিদ ফারমার্স ব্যাংকের শান্তিনগর শাখার সেকেন্ড অফিসার ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি ফেনী। সুমন জাহিদের দুই সন্তান। তাদের মধ্যে স্মরণ টিঅ্যান্ডটি কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। আরেক ছেলে সুমন্দ্র আইডিয়াল স্কুলে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn