- সুনামগঞ্জ বার্তা - http://sunamganjbarta.com -

৯ বছর পর বাইক্কা বিলে পরিযায়ী পাখির মেলা

বাইক্কা বিলে এবছর ৩৯ প্রজাতির পরিযায়ী ও দেশীয় জলচর পাখি এসেছে। এর মধ্যে ১৯ প্রজাতির পরিযায়ী ও ২০ প্রজাতির দেশীয় জলচর পাখি। ২০১০ সালের পর এবছরই এত বেশি সংখ্যক পাখির এসেছে বিলে। পাখিশুমারি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।  ২৮ ও ২৯ জানুয়ারি শ্রীমঙ্গলে বাইক্কা বিল হাইল হাওরের পাখি গণনা করেন পাখি বিশেষজ্ঞ ড.পল থম্পসন। এশিয়ান ওয়াটার বার্ড সেনসাস-এর অধীনে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব বাইক্কাবিলে এই পাখি শুমারি করেন। ড.পল থম্পসন জানান, ২০১০ সালে এ বিলে ৪০ প্রজাতির ১২ হাজার ২৫০টি পাখির দেখা মিলেছিল। ২০১৮ সালে ৩৮ প্রজাতির ৫৪১৮টি পাখির দেখা মিলেছিল। শুমারি  জলাভূমির সূচক অনুযায়ী শুধু জলচর পাখিই গণনা করা হয়। বাইক্কা বিলে দেশীয় ও পরিযায়ী জলচর পাখি কম-বেশির কারণ জানতে চাইলে পল থম্পসন বলেন, ‘বাইক্কা বিল অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণার পর সেখানে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়েছে। এর মধ্যে হিজল, করচের বাগান  ও বিল খনন করা হয়। এ কাজগুলো সাধারণত শুকনা মৌসুমে করা হয়। এটা বিবেচনা করা যে পরিযায়ী পাখিরা আসার আগে তাদের আবাসস্থলটি নিরাপদ করা কিনা।’

তিনি বলেন,এ বছর বাইক্কা বিলে খয়রা কাস্তেচরা নামের পরিযায়ী জলচর পাখি বেশি এসেছে। ৪/৫ বছর আগে বাংলাদেশে এ প্রজাতির পাখির দেখা মেলেনি। এবছর বাইক্কা বিলে ২৮৮টি এ পাখির দেখা মেলে। তবে সবচেয়ে বেশি এসেছে গেওয়ালা বাটান পাখি। এবছর ২২৮০টি এ পাখির দেখা মেলেছে। এ পাখির সংখ্যা প্রতিবছরই বাড়ছে। এছাড়া পাতি তিলি হাঁস ২২২০টি,উত্তুরে ল্যাঞ্জা হাঁস ৯২১,রাজ শরালী ৩৯৮টি,পাতি শরালী  ৮৬০টি দেখা গেছে। বিলে বিপন্ন ৫ প্রজাতির পাখির দেখা মিলেছে। সেগুলো হলো, বড়গুটি ঈগল,পালসি কুড়া ঈগল,উদয়ী গয়ার,কালা মাথা কাস্তেচড়া ও মরচেং ভূতিহাঁস। প্রতিবছরের জানুয়ারিতে পাখি শুমারি করা হয়। বাংলাদেশের নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় এ শুমারি হয়। এ মধ্যে শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওর, কুলাউড়ার হাকালুকি হাওর, সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর, উপকূলীয় অঞ্চলের নিঝুম দ্বীপ, উপকূলীয় দ্বীপ, সোনাদিয়া, সন্দ্বীপসহ বেশ কিছু জায়গায় পাখি শুমারি হয়। শুমারি নিয়ে পল থম্পসন বলেন, বাইক্কা বিলে যেভাবে মাছের খামার করা হচ্ছে তাতে উন্মুক্ত জলাভূমির ব্যপ্তি সংকুচিত হয়ে আসছে। ফলে মাছের বিচরণ ক্ষেত্রের পাশাপাশি হাওর এলাকায় প্রজনন ক্ষেত্রও হারিয়ে যাচ্ছে। এমনকি দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে। এছাড়া জীব বৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। তবে কিছু সংখ্যক বিত্তশালী লোক তাদের প্রভাব প্রতিপত্তি খাটিয়ে সম্পদের পরিমাণ বাড়িয়ে তুলছে। যদি সরকার এবং স্থানীয় জনসাধারণ একসঙ্গে কাজ করেন তাহলেই কেবল প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ করা সম্ভব। পাখিগুলো আসে কোথা থেকে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাইবেরিয়া, চীন, মধ্য এশিয়া ও আসাম থেকে। শীতের সময়ই পরিযায়ী পাখি বাইক্কা বিলে আসে।গত মৌসুমে বাইক্কা বিলে অনেক শাপলা,শালুক,পদ্ম ফুল ফুঁটে। সেকারণে পাখির সংখ্যা বেড়েছে। এ বছর বিলে পানির নির্দিষ্ট পরিমাণে থাকার ফলে পাখিরা অবাধে বিচরণ করতে পারে। বিলে নানা প্রজাতির উদ্ভিদ, মাছ, পোকামাকরের একেই সঙ্গে অবস্থানে থাকায় এ বছর পাখির পরিমাণ বেড়েছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on Facebook [১]Share on Google+ [২]Tweet about this on Twitter [৩]Email this to someone [৪]Share on LinkedIn [৫]