ইয়াহ্ইয়া মারুফ-সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) নির্বাচনের আর মাত্র আট দিন বাকি। প্রার্থীদের নিয়ে ভোটারদের মধ্যে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। তবে সবকিছু ছাপিয়ে গতবারের মতো এবারও আলোচনায় উঠে এসেছে হেফাজতে ইসলাম। সিলেটে ভোটের মাঠে বড় ধরনের ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে অরাজনৈতিক এই সংগঠনটি। সিলেটের রাজনীতিবিদদের মতে, ২০১৩ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত তৃতীয় সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের পরাজয়ে বিশেষ ভ‚মিকা ছিল হেফাজতের। ওই বছরের ৫ মে ঢাকার শাপলা চত্বরের ঘটনায় সিসিক নির্বাচনে বিরূপ প্রভাব পড়ে। এরপর হেফাজতের নেতাকর্মীরা কোমর বেঁধে বিএনপি প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর পক্ষে কাজ করেন। এতে প্রায় ৩৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে কামরানকে পরাজিত করেন তিনি। তবে এবার নির্বাচন প্রশ্নে এখনও নীরব সংগঠনটি। সিলেটে হেফাজতের নেতাকর্মীরা বলছেন, এবার হেফাজত কারও পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচারণায় নামবে না। যদি কেউ কোনো প্রার্থীর সঙ্গে প্রচারণায় নামেন বা তাকে ভোট দেন সেটা তার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। তবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান ও বিএনপির মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী দু’জনই দাবি করছেন হেফাজতসহ ইসলামী দলগুলো তাদের সমর্থন দিয়েছেন। বুধবার হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরীর নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা নগরীর বিভিন্ন স্থানে ধানের শীষের পক্ষে গণসংযোগ করেন। এ ব্যাপারে মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী  বলেন, হেফাজতে ইসলাম ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম দুটির কেন্দ্রীয় নেতা আমি। হেফাজত অরাজনৈতিক সংগঠন। তাই আমরা জমিয়তের পক্ষে ২০ দলীয় জোটের শরিক হিসেবে প্রচারণা চালিয়েছি।

জানা যায়, নগরীর সুবহানীঘাটের আমকুনী হুজুরের মাদ্রাসা, কাজীরবাজারে প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমানের মাদ্রাসা ও শাহজালালের (রহ.) দরগাসংলগ্ন গাছবাড়ী হুজুরের বড় তিনটি আবাসিক মাদ্রাসা রয়েছে। ওই তিন প্রতিষ্ঠান ছাড়াও তাদের নিয়ন্ত্রিত বহু আবাসিক মাদ্রাসা রয়েছে সিলেট নগরের ২৭টি ওয়ার্ডে। যার ফলে সিলেটের ভোটের মাঠে তাদের অবস্থান শক্তিশালী। হেফাজতে ইসলাম সিলেট জেলা সভাপতি মুহিবুল হক (গাছবাড়ি হুজুর)  বলেন, হেফাজত কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়। আমরা কোনো ধরনের রাজনীতি করি না। ইসলামের পক্ষে কাজ করি। ভোটের ব্যাপারে আমাদের কোনো নির্দেশনা নেই। হেফাজতে ইসলাম সিলেট মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মোস্তাক আহমদ খান  বলেন, এই সংগঠনটি কোনো দলের পক্ষে কাজ করে না। যদিও সিলেটের বিভিন্ন মাদ্রাসায় আমাদের অনুগত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা রয়েছে। তবে আমরা কারও পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচারণায় নামব না। তিনি বলেন, যদি কেউ কোনো প্রার্থীর সঙ্গে প্রচারণায় নামে কিংবা তাকে ভোট দেন এটা তার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। আমরা এতে কোনো হস্তক্ষেপ করব না। অনেকেই আমাদের কাছে টেনে নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এসব বিষয়ে আমরা সতর্ক রয়েছি। আগামী শুক্রবারে ভোটের ব্যাপারে বয়ান রাখব। হেফাজতে ইসলামের অনুসারী দরগাহ মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষক জানান, গত সিটি নির্বাচনে ঢাকার শাপলা চত্বরের ঘটনায় ভীত হয়ে বিএনপি প্রার্থী আরিফকে ভোট দিতে জোট বেঁধে কাজ করেছিলেন তারা। এবারের সিটি নির্বাচনে তাদের কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। তবে সময়মতো যথাযথ প্রার্থীকেই তারা ভোট দেবেন। তারা আরও জানান, কিছু কিছু এলাকায় তাদের সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন। এতে কাউকে নিষেধ করা হবে না। হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত সিলেটে হেফাজতের বড় একটি অংশ রয়েছে। মাওলানা হাবিবুর রহমান অসুস্থ হওয়ায় এই অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন তার ছেলে ও কাজিরবাজার মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা সামীউর রহমান মুছা। তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলাম একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। আমরা কোনো দলের পক্ষেও কাজ করি না। আমরা আল্লামা আহমদ শফী ও জুনাইদ বাবুনগরীর নির্দেশে ইসলামের পক্ষে কাজ করি। সিটি নির্বাচন শুধু নয়, কোনো ধরনের ভোটের রাজনীতির সঙ্গে হেফাজত জড়িত নয়। তবে আমার ধারণা, গতবারের মতো এবারও হেফাজত সমর্থকদের ভোট ধানের শীষে পড়তে পারে। এ ব্যাপারে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী  বলেন, সিলেটের উন্নয়নের স্বার্থেই গত নির্বাচনের মতো এবারও ভোটাররা আমাকে বিশাল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী করবেন। দল-মতের ঊর্ধ্বে আমি সিলেট নগরের জন্য কাজ করেছি। আমি বিএনপি থেকে নির্বাচনে অংশ নিলেও হেফাজতে ইসলামসহ ইসলামী দলগুলোর দোয়া আছে আমার ভোটব্যাংকে। তিনি বলেন, সিলেটের সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আলিম-উলামাদের দোয়ায় কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর সিলেটের উন্নয়নের জন্য নিরলস প্রচেষ্টা তাদের মনে জায়গা করে নিয়েছে। তারা আমাকে সমর্থন দেয়ার পাশাপাশি ভোট দেয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান যুগান্তরকে বলেন, সিলেটের সব আলিম-উলামারা আমাকে সমর্থন দিয়েছেন। সবার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, মানুষের সেবা করে আমি মরতে চাই। এই সিলেটের মানুষের জন্য আমি আজকের কামরান। শুধু হেফাজতই নয়, এবারের সিটি নির্বাচনে আমি ইসলামী দলগুলো থেকে সমর্থন পেয়েছি। এবার তারা আমাকে এই নগরের খাদেম হওয়ার জন্য সার্বিক সহযোগিতা করবেন বলেও কথা দিয়েছেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn