তিন তিনটি পুরনো গাড়ি সিলেট সিটি করপোরেশনের সামনে প্রহরাধীন অবস্থায় গায়েব হয়ে যাওয়ায় বেকায়দায় পড়েছেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কে কার কাঁধে দোষ চাপাবেন এ নিয়ে শুরু হয়েছে দলাদলি। সিটি করপোরেশনের পরিবহন শাখা ও সংরক্ষণ শাখা এ নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে পড়েছে। কিছুদিন ধরে সিলেট নগরভবনে চোর ঢুকেছে। একের পর এক চুরি হয়ে যাচ্ছে গাড়ি, টেলিভিশন, চেয়ার-টেবিল, পানি উত্তোলনের শক্তিশালী পাম্প। এ ব্যাপারে থানায় জিডি করা হয়। এতে বলা হয়, এক মাস আগে নগর ভবনের সীমানার ভেতর থেকে ‘চুরি’ হয়ে গেছে ৩টি গাড়ি। জিডিতে চুরির কথা উল্লেখ করা হলেও সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে চুরি নয় পেছনে রয়েছে অন্য গল্প। সূত্রগুলো বলছে, প্রথম থেকেই গাড়ি গায়েবের বিষয়টি মেয়র, চিফ ইঞ্জিনিয়ারের জানা থাকলেও তারা বিষয়টিকে পাত্তা দেননি। তবে সমস্যা তৈরি হয় বিষয়টি গোয়েন্দা পুলিশের কানে গেলে। গোয়েন্দাদের মাঠে নামার খবরে তড়িঘড়ি করে জিডি করা হয় থানায়। জিডির তদন্তের অনুমতির জন্য কোতোয়ালি থানা থেকে সিলেটের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করা হয়। ২রা নভেম্বর তদন্ত কর্মকর্তা বেণুচন্দ্র এ আবেদন করেন। সোমবার সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম তদন্তের সময় প্রার্থনায় বিলম্বের কারণে দর্শাতে বলেন তদন্ত কর্মকর্তাকে। মঙ্গলবার তদন্ত কর্মকর্তা বেণুচন্দ্র আদালতকে জানান, ভিআইপি ডিউটিতে ব্যস্ত থাকায় তদন্তের সময় প্রার্থনায় বিলম্ব হয়। গতকাল বুধবার এক আদেশে আদালত আগামী ১৫ই নভেম্বরের মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তাকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। ‘গাড়ি নিখোঁজে’র ঘটনায় থানায় জিডিও হয়তো হতো না যদি না লাল দীঘিরপাড়ে ব্যবসায়ীদের রোষের মুখে না পড়তো সিটি করপোরেশনের একটি এসক্যাভেটর।

ব্যবসায়ীদের হামলায় এসক্যাভেটরটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে কোতোয়ালি থানায় জিডি করতে যান সিলেট সিটি করপোরেশনের পরিবহন শাখার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. জাবেরুল ইসলাম। তখনই জানতে পারেন গাড়ি ‘হাওয়া হয়ে যাওয়া’র বিষয়টি নিয়ে নাড়াচাড়া করছে গোয়েন্দা পুলিশ। তড়িঘড়ি করে ফিরে এসে থানায় জিডি করেন তিনি। ২৪শে অক্টোবর করা সে জিডিতে (নং: ১৯৪৯) উল্লেখ করা হয়, পীর হবিবুর রহমান পাঠাগারে সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী কার্যালয়ে গেটের পাশে রাখা তিনটি গাড়ি ২৭শে সেপ্টেম্বর থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। জিডি’র ভাষ্যমতে, এ একমাস ধরে কেবলই গাড়িগুলো খোঁজাখুঁজি করেছে সিটি করপোরেশন। ৩১শে অক্টোবর সিটি এসবি দল কথা বলে করপোরেশনের পরিবহন শাখার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. জাবেরুল ইসলামের সাথে। তার কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে। সূত্র বলছে, থানায় জিডি’র বিষয়টি জানাজানি হলে গাড়ি গায়েবের পেছনের কারিগররা গাড়িগুলোর খণ্ডাংশ সিটি কর্পোরেশনের ডাম্পিং গ্রাউন্ডে এনে ফেলে রাখে। জিডিতে চুরির বিষয় উল্লেখ করা হলেও ওই সময় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা শরীফ ও আবদুল্লাহ বলছেন, ওই রাতে কোনো চুরির ঘটনা ঘটেনি। একটি সূত্র বলছে, ঘটনা ছিলো অন্য কিছু-কাউকে ফাঁসানো। আর গাড়ি গায়েবের পেছনের কারিগর হিসেবে উঠে আসে করপোরেশনের সংরক্ষণ কর্মকর্তা হানিফুর রহমানের নাম। সিটি করপোরেশনের নিরাপত্তার দায়িত্বে বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার কর্মচারীরা জানান, ২৭শে সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক ১টার দিকে হানিফুর রহমানের নেতৃত্বে মামেদ, সায়মন, বুলবুল, সেলিম ও মুরাদ গাড়িগুলো গ্যাসকাটার দিয়ে টুকরো টুকরো করে বাইরের ২টি ট্রাকে করে নিয়ে যেতে দেখেছেন তারা। একটি সূত্রে জানা গেছে, গাড়িগুলো বিক্রির জন্য দক্ষিণ সুরমার এক ভাঙাড়ি দোকানের সঙ্গে রফা হয়।

মধ্যস্থতা করেন কুমারপাড়া ঝর্ণারপাড়ের বাসিন্দা জনৈক মুরাদ আহমদ। গাড়ি নিখোঁজের সঙ্গে হানিফুর রহমানের সম্পৃক্ততা নিয়ে কানাকানি শুরু হলে হানিফুর রহমান তা অস্বীকার করেন। করপোরেশন সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, পরে বিষয়টি নিয়ে জল গড়াতে থাকলে গাড়িগুলোর মূল্য ধরে সিটি করপোরেশন বরাবরে একটি চালান জমা দেয়ার প্রস্তাব দেন হানিফুর রহমান। সিটি করপোরেশন থেকে চুরির ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগে ২০১৪ সালে গাজীপুরে মেরামত করতে নিয়ে যাওয়ার পথে ৩০ লাখ টাকা মূল্যের ৩টি শক্তিশালী পানির পাম্প গায়েব হয়ে যায়। এ ঘটনায় একটি জিডি করেই দায়িত্ব থেকে নিজেদের খালাস করে নেয় সিটি করপোরেশন। এছাড়া সাম্প্রতিক চুরির তালিকায় রয়েছে নগর ভবনের ওয়েটিং রুমের টেলিভিশন। হঠাৎ করেই হাওয়া হয়ে গেছে ভোলানন্দ নৈশ বিদ্যালয়ে রক্ষিত ৭০/৮০টি চেয়ারও।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn