সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের জেষ্ঠ্য বিচারপতি আব্দুল ওয়াহাব মিয়াকে অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি করে গেজেট প্রকাশ করেছে আইন মন্ত্রণালয়।আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক সোমবার রাত পৌনে ১২টায়  এ তথ্য জানিয়েছেন। সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে গেজেটটি প্রকাশ করা হয়। এর আগে রবিবার বিকেল ৩টার দিকে এক মাসের ছুটি জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বরাবর চিঠি পাঠান প্রধান বিচারপতি। সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতির ছুটিকালীন রাষ্ট্রপতি একজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেন। সেই দিক থেকে আপিল ডিভিশনের জেষ্ঠ্যতার ভিত্তিকে আব্দুল ওয়াহাব মিয়াকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিয়ে গেজেট প্রকাশ করা হলো।
প্রধান বিচারপতির আকস্মিক এই লম্বা ছুটির বিষয়ে সোমবার বিকেলে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, ‘অসুস্থতার কারণে প্রধান বিচারপতি ছুটিতে গেছেন। প্রধান বিচারপতি নিজের ছুটি নিজেই মঞ্জুর করেন। যেহেতু আমাদেরকে ছুটি বিষয়ে তিনি একটি ইনটিমিশন দিয়েছেন, তাই ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করতে হবে। এখন সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি একজন অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেবেন।’এ বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এক মাসের ছুটির কথা জানিয়ে রাষ্ট্রপতিকে জ্ঞাত করেছেন। ফলে আগামীকাল উনি আপিল বিভাগের বেঞ্চে বসবেন না। অন্য বিচারপতি যারা আছেন তারা বিচারকার্য পরিচালনা করবেন।’ দীর্ঘ অবকাশের পর আবার কেন এক মাসের ছুটির আবেদন করলেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘উনি রাষ্ট্রপতির কাছে কি লিখেছেন সেটাতো আমি দেখিনি। তবে সাংবিধানিক পোস্টে যারা থাকেন তাদের বলার প্রয়োজন পড়ে না। তিনি ছুটিতে যাবেন এটা জ্ঞাত করানোই এক্ষেত্রে যথেষ্ট- যাতে সরকার পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারে।’
কোনও ধরনের চাপের মুখে প্রধান বিচারপতি এ ছুটির আবেদন করেছেন কি না জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের হালকা মেজাজে বলেন, ‘এটা সঠিক কথা না। যিনি সাংবিধানিক পদ হোল্ড করেন তিনি নিজেই সব সময় সরকারকে জ্ঞাত করেন।’ ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের কারণে বা তার কোনও প্রভাব এই ছুটির নেপথ্যে আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ষোড়শ সংশোধনীর রায় তো তিনি একা দেননি। অন্যান্য বিচারপতিরাও ছিলেন। এমনকি এটা সর্বসম্মত রায়। সুতরাং এখানে রায়ের জন্য প্রধান বিচারপতিকে একা দায়ী করা হবে কেন। এটা ঠিক কথা না।’ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ছুটি নেয়ায় আপিল ডিভিশনে এখন যে ৫ জন বিচারপতি রয়েছেন তাঁদের মধ্যে জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি আব্দুল ওয়াহাব মিয়া। বেঞ্চের অপর চার জন হলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।
সম্প্রতি বিচারপতি নিয়োগের ক্ষমতা সংসদের কাছ থেকে আদালতের হাতে পুনর্বহাল করে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে প্রধান বিচারপতির দেয়া রায়কে অযৌক্তিক, আবেগী ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করে সংসদীয় কমিটি। এ রায়কে বিতর্কিত বলেও উল্লেখ করেন সরকারের এমপি-মন্ত্রীরা ও সরকারপন্থি আইনজীবীরা। তারা প্রধান বিচারপতির পদত্যাগেরও দাবি তোলেন। বিপরীতে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়কে শুরু থেকেই ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়ে আসছে বিএনপি। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার পূর্ণাঙ্গ রায় গত ১ আগস্ট প্রকাশিত হয়। ওই দিনই পূর্ণাঙ্গ রায়টি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn