বুধবার রাতে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৩ জন শিক্ষক গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছেন। শিক্ষকদের এই বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর কোটা সংস্কার আন্দোলন নতুন দিকমাত্রা পেয়েছে। অবশ্য আন্দোলনকারীদের মতো আমরাও কোটা সংস্কারের পক্ষে, বিলোপের পক্ষে নই। কারণ, পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীকে (যেমন আদিবাসী) উন্নয়নের ধারায় আনতে কোটার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ঘিরে যা ঘটেছে, তা নিয়ে আমরা ক্ষুব্ধ ও উদ্বিগ্ন। আমরা মনে করি, শিক্ষার্থীদের দাবির যৌক্তিকতা ছিল। কারণ, কোনও পরিস্থিতিতেই কোটা সংরক্ষণ মোট আসনের শতকরা ৫৬ ভাগ হতে পারে না। এই ন্যায্য ও যৌক্তিক আন্দোলন থেকে উত্থাপিত দাবি বিবেচনা না করে, সরকার প্রথমত উপেক্ষা ও দ্বিতীয়ত দমন ও পীড়নের নীতি গ্রহণ করেছে, অবশেষে আন্দোলন তীব্র হলে দাবি মানতে বাধ্য হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, রবিবার দিনে ও দিবাগত রাতে আন্দোলনকারীদের অহিংস ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ব্যাপকভাবে পুলিশি হামলা ও নির্যাতন করা হয়। অন্যদিকে, পুলিশের পাশাপাশি বহিরাগত সন্ত্রাসীরা দফায় দফায় আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করে। আন্দোলন এরপর বেগবান হয়ে সারাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ে। অন্যদিকে, রবিবার রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসায় হামলা হয় এবং ব্যাপকভাবে ভাঙচুর করা হয়, যা অত্যন্ত নিন্দনীয় একটি ঘটনা। এরকম পরিস্থিতিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষক কেউই নিরাপদ নয়।পুরো ঘটনা নিয়ে আমাদের সক্রিয় পর্যবেক্ষণ রয়েছে এবং কিছু দাবি রয়েছে। আমাদের পর্যবেক্ষণ ও দাবিগুলো হলো—

১. শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটার যৌক্তিক সংস্কার করতে হবে। সংবিধানের আলোকে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে কোটা সংস্কারের রূপ নির্ধারণ করতে হবে। কোটা বিলোপ সংবিধানপরিপন্থী সিদ্ধান্ত হবে বলে আমরা মনে করি। 

২. শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিনা উস্কানিতে পুলিশি হামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

৩. উপাচার্যের বাসভবনে নিন্দনীয় হামলার পরে উপাচার্য মহোদয় নিজেই জানিয়েছেন— এই হামলার পেছনে প্রশিক্ষিত দুষ্কৃতিকারীরা যুক্ত ছিল।নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এই হামলাকে কেন্দ্র করে পুরো আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা মনে করি, এটি প্রকৃত অর্থেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। এজন্যই ওই হামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত আমরা দাবি করছি।পাশাপাশি চারুকলা অনুষদের অভ্যন্তরে পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতিমূলক সরঞ্জামাদি ভাঙচুরের নিন্দাও জানাই।

৪.রবিবার ও সোমবার রাতে সশস্ত্র বহিরাগত সন্ত্রাসীদের ক্যাম্পাসে অনুপ্রবেশ ও ত্রাস সৃষ্টির ঘটনার প্রতি আমরা তীব্র নিন্দা জানাই এবং আর কোনও বহিরাগত যেন ক্যাম্পাসে ঢুকতে না পারে, সে ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ প্রশাসনকে পদক্ষেপ নিতে হবে।

৫. শিক্ষার্থীরা যাতে নিরাপদে ছাত্রাবাসে থাকতে পারে, সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ছাত্রাবাসগুলোতে আসন বরাদ্দ প্রক্রিয়া ছাত্র সংগঠনের হাত থেকে নিয়ে ছাত্রাবাস প্রশাসনকে পুরোপুরি গ্রহণ করতে হবে।

৬. জাহাঙ্গীরনগর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ায় যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তা অভিনন্দনযোগ্য। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিও দলীয় আনুগত্যের ঊর্ধ্বে উঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত স্বার্থসংশ্লিষ্ট ভূমিকা রাখবে এই দাবি আমাদের। শিক্ষক সমিতিগুলোর কোনোটি প্রথম থেকে এবং কোনোটি বিলম্বে আন্দোলনকে সমর্থন দিয়েছে। শিক্ষক সমিতিগুলো এভাবে সবসময় দলীয় স্বার্থের বাইরে এসে জনস্বার্থ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থকে সমুন্নত রাখবে,এই প্রত্যাশা আমরা করি।

৭. যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা ও নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে, সেসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এছাড়া সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অ্যাকাডেমিক পরিসর ও ছাত্রাবাসে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

স্বাক্ষর প্রদানকারী ৩৩ শিক্ষক হলেন— জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী অর্ক রহমান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সৌম্য সরকার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক কাজী মসিউর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নেহাল করিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ফাহমিদুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুনাসির কামাল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজ্জাদ এইচ সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. আনওয়ার হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. খায়রুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দেবাশীষ কুন্ডু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সায়মা আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মান্নান, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজীববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অভিনু কিবরিয়া, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহমুদুল সুমন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আইনুন নাহার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মানস চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফাহিমা আল ফারাবি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বখতিয়ার আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচ্যকলা বিভাগের প্রভাষক দীপ্তি দত্ত, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক স্বাধীন সেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাবিবা রহমান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. তানভীর আহসান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পারভীন জলী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুকান্ত বিশ্বাস।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn