মাহবুব শরীফ:: গত ১৬ বছর ধরে ইরা-ইনফোটেক লিমিটেড আর্থিক সেবার সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরণের সফটওয়্যার সল্যুশন তৈরি করে যাচ্ছে। তাদের তৈরি বিভিন্ন ফিন্যান্সিয়াল সফটওয়্যার সল্যুশনের মধ্যে সাধারণ ও ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের জন্য কোর ব্যাংকিং সল্যুশন,অটোমেটেড চেক প্রসেসিং, ইএফটি, অটোমেটেড রিস্ক-বেজড ক্যাপিটাল ক্যালকুলেশন (ব্যাজেল ফ্রেমওয়ার্ক), অটোমেটেড লোন প্রসেসিং সিস্টেম (ওকাস্), ইনভেনটরি ম্যানেজমেন্ট, ফিক্সড অ্যাসেটস ম্যানেজমেন্ট, এইচআর অ্যান্ড পেরোল ম্যানেজমেন্ট, ই-রিক্রুটমেন্ট, এজেন্ট ব্যাংকিং সল্যুশন, মাইক্রোফিন্যান্স ম্যানেজমেন্ট সল্যুশন প্রভৃতি। দুইটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ ১৯টি ব্যাংক ছাড়াও স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন এবং সমবায় মন্ত্রণালয়ে ব্যবহূত হয়ে আসছে এসব সফটওয়্যার। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন সফটওয়্যার ডেভেলপ করেছে। আর্থিক লেনদেনের নতুন এই সফটওয়্যার নিয়ে কথা হয়েছে ইরা-ইনফোটেকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহা. সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে।
ইরা-ইনফোটেকের নতুন ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন সফটওয়্যার প্রসঙ্গে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন সফটওয়্যার এর প্রধান কাজ হলো—নন-ব্যাংকিং জনগণের জন্য ব্যাংকিং সেবা সহজলভ্য করা। প্রচলিত ব্যাংকের যে স্ট্রাকচার তাতে সাধারণ মানুষ এতে কম আসে। আমাদের ডেভেলপ করা সফটওয়্যারের মাধ্যমে আর্থিক সেবা বঞ্চিত ব্যাপক জনগোষ্ঠি ব্যাংকের সেবা গ্রহণের সুযোগ পাবে। ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন সফটওয়্যার থাকাতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে একজন এজেন্ট একটি ল্যাপটপ ও একটি বায়োমেট্রিক ডিভাইস নিয়ে ব্যাংকিং সেবা দিতে পারছে। এজেন্ট ব্যাংকিং খাতে বায়োমেট্রিক এবং এনএফসি পদ্ধতির ব্যবহার শুরু হয়েছে ইরা-ইনফোটেকের হাত ধরেই। আর্থিক অর্ন্তভুক্তিকরণে প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণ কী ধরনের সুফল ভোগ করতে পারবেন ? এমন প্রশ্নের উত্তরে সিরাজুল ইসলাম বলেন,‘আর্থিক অর্ন্তভুক্তি করণের ফলে আগের চেয়ে অধিক লোকজন ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করতে পারবে। ব্যাংকিং লেনদেন হবে নিরাপদ। সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাংকিং সম্পর্কে ধারণা বাড়বে যাকে আমরা আর্থিক শিক্ষা বলতে পারি। শুধু তাই নয়, দেশে উদ্যোক্তার পরিমাণও বাড়তে থাকবে। যারা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের এই মডেল ব্যবহার করছে তারা আবার সাব এজেন্ট নিয়োগ দিতে পারছে। উদাহারণ হিসেবে বলা যায়, শুধুমাত্র ব্যাংক এশিয়ারই ৩০০০ এর বেশি এজেন্ট রয়েছে। তারা কিছু সাব এজেন্ট নিয়োগ করেছে যাদের অধিকাংশই স্থানীয়। এতে পরস্পর পরস্পরকে চিনছে ও জানছে এবং বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে মহিলারা খুব সহজে ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহণ করতে পারছেন। অন্যদিকে, সঞ্চয় প্রবণতা বাড়ছে, আর্থিক প্রবাহ বৃদ্ধি, আর্থিক পরিকল্পনা প্রণয়নে সক্ষমতা বাড়ছে, যা জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এছাড়াও, আর্থিক লেনদেনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে।’
তিনি আরও বলেন,‘সারাদেশে ‘সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের’ আওতায় প্রতিবন্ধি, বিধবা, মুক্তিযোদ্ধা ও বয়স্কভাতা প্রদান করা নিরাপদ দ্রুত ও সহজ হয়েছে। আর্থিক লেনদেনের ১০-১৫% খরচের অপচয় কমেছে। এর অন্যতম কারণ হলো-ভূয়া নামের বা তথ্যের ভিত্তিতে এখন আর কোনো ভাতা তোলা সম্ভব হচ্ছে না। ডিজিটাল লেনদেনের মধ্য দিয়ে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখছি।’এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে নতুন এই মাত্রা যুক্ত করতে কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে সিরাজুল ইসলাম বলেন,‘ডিজিটাল ডকুমেন্ট ব্যবহার পলিসি প্রণয়ন প্রয়োজন। ই-কেওয়াইসি কেন্দ্রীয়ভাবে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। এ কাজে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রধান ভূমিকা রাখতে পারে। জাতীয় পরিচয়পত্রকে প্রাধান্য দিয়ে বিভিন্ন কাজে এর ব্যবহার ও যাচাই পদ্ধতির সহজিকরণ করতে হবে। ব্যাংকিং বা নন-ব্যাংকিংয়ে ই-কেওয়াইসি পলিসির প্রয়োজন। আর একটি বিষয় হলো- অ্যাকাউন্ট ওয়াইজ এক্সাইজ ডিউটি নির্ধারণ না করে কাস্টমার ওয়াইজ ডিউটি নির্ধারণ করলে ভালো হয়।’
মার্চেন্ট ব্যাংকিং সল্যুশনের বিষয়ে সিরাজুল ইসলাম বলেন,‘প্রতিটি গ্রামেই মার্চেন্ট ব্যাংকিং প্রয়োজন। এতে করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে দ্রুত আর্থিক লেনদেন করা সম্ভব হবে। শহর পর্যায়ে এ সেবা গ্রহণ করা গেলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে সাধারণ জনগণ। সরকার চাইলে মাইক্রো মার্চেন্ট কার্যক্রমে নজর দিতে পারে। এ কাজের সহযোগীতায় বিটিআরসির উচিত্ অর্থমন্ত্রণালয়, আইসিটি মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করা। প্রত্যেকের আলাদা ফাইন্যান্স সাপোর্ট সেলের প্রয়োজন রয়েছে।’ তিনি এজেন্ট ব্যাংক সম্পর্কে আরো বলেন,‘অনেক এলাকাতে একাধিক ব্যাংকের এজেন্টব্যাংকিং রয়েছে। এ বিষয়ে সেন্ট্রাল ব্যাংকের নজর দেওয়া প্রয়োজন। কারণ, একই এলাকাতে একাধিক এজেন্টব্যাংকিং থাকলে স্থানীয় উদ্যোক্তা তথা তরুণদেও মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগীতার সৃষ্টি হতে পারে।’ তরুণ উদ্যোক্তাদের উত্সাহ প্রদান ও মূল্যায়ণের বিষয়ে সিরাজুল ইসলাম বলেন,‘বর্তমানে আর্থিক ও ডিজিটাল বিপস্নব হচ্ছে একাধারে। এ উদ্যোগের জন্য উদ্যোক্তাদের প্রনোদনা দেওয়া প্রয়োজন। ভালো উদ্যোক্তাদের চিহ্নিত করে তাদের সম্মানিত করাও প্রয়োজন। এতে করে সংশ্লিষ্ট খাতে শিক্ষিত বেকার যুবকদের আগ্রহ বাড়বে।ব্যাংকগুলিতে আর্থিক অর্ন্তভুক্তিকরণে অধিকতর ভূমিকা রাখার জন্য প্রণোদনা প্রদান দেওয়া যেতে পারে।পাশাপাশি ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন আটোমেশনে ইনোভেটিভ ও কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য আইটি/সফটওয়্যার কোম্পানিকে পুরস্কৃত করা উচিত।’