আলোচিত সাত খুনের পাঁচ বছর: ফাঁসি কার্যকরের অপেক্ষায় পনের জন
ফাঁসি ১৫ জনের
হাইকোর্টের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলো প্রধান আসামী নূর হোসেন, র্যাবের চাকুরীচ্যুত কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাসুদ রানা (এমএম রানা), হাবিলদার এমদাদুল হক, ল্যান্সনায়েক বেলাল হোসেন, সিপাহী আবু তৈয়্যব, কনস্টেবল মো: শিহাব উদ্দিন, এসআই পুর্নেন্দ বালা, সৈনিক আবদুল আলীম, ল্যান্সনায়েক হীরা মিয়া, আরওজি-১ আরিফ হোসেন, সৈনিক মহিউদ্দিন মুন্সী (পলাতক), সৈনিক আলামিন শরিফ (পলাতক) ও সৈনিক তাজুল ইসলাম (পলাতক)।
যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত ১১ জন
১১ জনকে নারায়ণগঞ্জের নিম্ন আদালত মৃত্যুদণ্ড দিলেও হাইকোর্ট যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করে। তারা হলো, র্যাবের সদস্য আসাদুজ্জামান নূর, আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দিপু, রহম আলী, আবুল বাশার, নূর হোসেনের সহযোগী মোর্তুজা জামান চার্চিল, নূর হোসেনের সহযোগি সেলিম, জামালউদ্দিন, এনামুল কবীর, সানাউল্লাহ সানা (পলাতক), শাহজাহান (পলাতক)।
কারাদণ্ড ৯ জনের
নারায়ণগঞ্জের আদালত ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করেন। যাদের রায় হাইকোর্ট বহাল রেখেছে। অপহরণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে করপোরাল রুহুল আমিনের ১০ বছর, এএসআই বজলুর রহমানের ৭ বছর, হাবিলদার নাসির উদ্দিনের ৭ বছর, এএসআই আবুল কালাম আজাদের ১০ বছর, সৈনিক নুরুজ্জামানের ১০ বছর, কনস্টেবল বাবুল হাসানের ১০ বছর কারাদণ্ড হয়েছে। পলাতক আসামিদের মধ্যে হাবিবুর রহমানের ১৭ বছর, কামাল হোসেনের ১০ বছর ও মোখলেসুর রহমানের ১০ বছর কারাদণ্ড হয়েছে। হাইকোর্ট তাদের নিম্ন আদালতের রায় বহাল রেখেছে।
সেই ঘটনা
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল দুপুরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের সামনে থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ পাঁচজনকে অপহরণ করা হয়। একই সময়ে একই স্থানে আরেকটি গাড়িতে থাকা নারায়ণগঞ্জ আদালতের প্রবীণ আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার চালককে অপহরণ করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর বন্দর উপজেলা শান্তির চর এলাকায় শীতলক্ষ্যা থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় সাত জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। প্র্রত্যেকের পেটে ছিল আঘাতের চিহ্ন; প্রতিটি লাশ ইটভর্তি দুটি করে বস্তায় বেঁধে নদীতে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ওই ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের দুই নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম লিটন, নজরুলের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহিম। তিন জন তদন্তকারী কর্মকর্তার ১১ মাসের দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল ভারতের কলকাতায় গ্রেপ্তার নূর হোসেন, র্যাবের চাকরিচ্যুত তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। এজাহারভুক্ত ৫ আসামি অব্যাহতির আবেদন করা হয়। মামলায় ১২৭ জনকে সাক্ষী করা হয়। ১৬২ ধরনের আলামত উদ্ধার দেখানো হয়েছে। ২০১৪ সালের ১৪ জুন রাতে কলকাতার দমদম বিমানবন্দরের অদূরে কৈখালি এলাকার একটি বাড়ি থেকে নূর হোসেন ও তাঁর দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে বাগুইআটি থানার পুলিশ।
পরে ওই বছরের ১৮ আগস্ট নূর হোসেন, ওহাদুজ্জামান শামীম ও খান সুমনের বিরুদ্ধে ভারতে অনুপ্রবেশের অভিযোগে বারাসাত আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় বাগুইআটি থানা পুলিশ। ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ দমদম কারাগার কর্তৃপক্ষ নূর হোসেনকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করতে সে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয়। ১৩ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ আদালতে উপস্থাপন করা হয় নূর হোসেনকে। গ্রেপ্তারকৃত ২৩ জনের উপস্থিতিতে ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালতে চার্জ গঠন সম্পন্ন হয়। শুনানীর সময়ে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা ২৩ জনের অব্যাহতি আবেদন করলেও আদালতে সেটা নাকচ করে দেন। পলাতক ১২ জন সহ সাত খুনের দুটি মামলায় অভিযুক্ত ৩৫ জনের সকলের বিরুদ্ধেই আদালতে চার্জ গঠন করা হয়। ফলে ১২জনের অনুপস্থিতিতেই মামলার বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে ১২ জনের পক্ষে ৫জন আইনজীবী নিযুক্ত করেন রাষ্ট্রপক্ষ।