জুয়েল রাজ –
কয়েকদিন ধরে দেশে-বিদেশে আলোচনা বাংলাদেশ সম্পর্কে, দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং সেনাপ্রধান নিয়ে আল জাজিরার ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস ম্যান’ একঘণ্টার দীর্ঘ ডকুমেন্টারি। যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায় ‘সবাই প্রধানমন্ত্রীর লোক’। এটা আসলে সংবাদ বা প্রতিবেদনের কোন সংজ্ঞায়ই পড়ে না। বিষয়টি তিনজন মানুষের প্রবাস জীবনের কিছু খণ্ডিত চিত্র। যেখানে রঙ মাখিয়ে সেনাপ্রধান আর প্রধানমন্ত্রীকে জোড়া লাগিয়ে একটা উন্মাদনা তৈরির প্রচেষ্টা মাত্র। আমি খুব কষ্ট করে ধৈর্য নিয়ে পুরো ডকুমেন্টারিটি দেখেছি।
শিরোনাম দেখে এবং বিষয়বস্তুর গুরুত্ব ভেবে আসলে দেখতে বাধ্য হয়েছিলাম। দেখে মনে হয়েছে সুন্দর একটি ওয়েব সিরিজ দেখলাম! সবকিছুই ঠিক ছিল, হারিস, আনিস, জোসেফ মিথ্যা নয়, সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ, কিংবা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ ঘটনার সিনেমাটিক ধারাবাহিকতা সুন্দর। এবার আসি আল জাজিরা কারা; প্রথমেই আল জাজিরা সম্পর্কে একটা ধারণা দেয়া দরকার তাহলে পাঠকের জন্য সুবিধা হবে বিশ্লেষণ করতে। ১৯৯৬ সালে মূলত বিবিসির আরবি বিভাগের ১৫০ জন চাকরিচ্যুত সাংবাদিকদের নিয়ে একটি টেলিভিশন চ্যানেল। শুরু করেছিল ক্যাবল টিভি হিসাবে এখন পৃথিবীর ৮০টির মত দেশে তাদের সম্প্রচার আছে।
সৌদি আরবসহ মিসর ও সংযুক্ত আরব আমিরাত আল জাজিরাকে প্রোপাগান্ডা চালানোর একটি যন্ত্র বলে মনে করে, যেটি নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রচারের চেষ্টা করছে। শুধুমাত্র আরব নয়, কেনিয়া, সোমালিয়ার মত আফ্রিকার বহু দেশে নিষিদ্ধ হয়েছিল আল জাজিরা, ভারতে ও নিষিদ্ধ ছিল এক সময় চ্যানেলটি। আল জাজিরা মূলত বিশ্বব্যাপী মৌলবাদীদের মুখপাত্র। ওসামা বিন লাদেন থেকে শুরু করে বিতর্কিত ধর্মবিষয়ক তাত্ত্বিক ইউসুফ আল-কারাদাবির বক্তব্য প্রচার করেছিল চ্যানেলটি। কারাদাবি নিয়মিত তাদের টক শোতে অংশ নিয়েছেন। চারজন ইসরায়েলি নাগরিককে হত্যা করা এক ব্যক্তির জন্মদিন নিয়েও সরাসরি অনুষ্ঠান সম্প্রচার করেছিল চ্যানেলটি। বৈরুতে থাকা আল জাজিরার ব্যুরো প্রধান ওই অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছিলেন। যুদ্ধ নিয়ে যেসব প্রতিবেদন চ্যানেলটি প্রচার করেছিল, তা ছিল অনেকটা আগুনে ফুঁক দেওয়ার মতো।
থিংক ট্যাংক হিসেবে কাজ করা আরব গালফ স্টেটস ইন্সটিটিউটের হুসেইন ইবিশ বলেন, ‘এটি সহিংসতার খবর এমনভাবে প্রচার করত, যাতে মনে হতো তারা এর প্রতি ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট।’ পশ্চিমা বিশ্বের অনেকেই আল জাজিরার ইংরেজি সংস্করণকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ বলে মনে করেন। ইরাকের সাদ্দাম হোসেন নিয়ে এখনো অনেকে হাহাকার করেন, ইরাকের মতো সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের একটি দেশকে শ্মশান বানিয়ে দিয়েছে আল জাজিরা। তারাই প্রথম সাদ্দাম হোসেনকে ‘স্বৈরাচারী’ হিসেবে অভিহিত করেছিল, আবার ইসরায়েলের বিভিন্ন খবরও একই সময়ে তারা সম্প্রচার করত।
আল জাজিরার প্রতিবেদন নিয়ে আনন্দিত কিংবা উদ্বেলিত হওয়ার কিছু নেই। শুধুমাত্র শেখ হাসিনা কিংবা আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করা আর আল জাজিরাকে সমর্থন দিয়ে বাংলাদেশের বিরোধিতা করা এক বিষয় নয়। আল জাজিরা কখনো বাংলাদেশের শুভাকাঙ্ক্ষী নয়। বাংলাদেশকে আরেকটি আফগানিস্তান, সিরিয়া, লিবিয়া বানানোর কারিগর এরা। এর ধারাবাহিকতাই সম্প্রতি বাংলাদেশ ও সেনাবাহিনী নিয়ে নির্মিত ধারাবাহিক নাটকের প্রথম পর্ব। আরও প্রতিবেদন অপেক্ষা করছে। কিন্তু বাংলাদেশ নিয়ে যে বার্তাটি দিতে চেয়েছে আল জাজিরা কিংবা তাসনিম খলিল ও ডেভিড বার্গম্যান অথবা ডকুমেন্টারির প্রযোজক যারা যাদের বিশাল অর্থায়নে ডকুমেন্টারিটি তৈরি হয়েছে তারা ভুল করেছেন বলেই মনে হয়েছে।
আল জাজিরার কোন দায় পড়েনি, মিলিয়ন মিলিয়ন পাউন্ড খরচ করে এই গাঁজাখুরি গল্পের সিনেমা বানানো। তারা পয়সা পেয়েছে প্রচার করেছে, ব্যাস। আর যদি ধরেও নিই আল জাজিরা নিজের খেয়েই এই সিনেমাটি বানিয়েছে, তাহলে চ্যানেলটির একজন সাবেক প্রতিবেদক আকথাম সুলিমানের ২০১২ সালের মন্তব্যটি স্মরণে নেয়া দরকার। তিনি বলেছিলেন, ‘চ্যানেলটি সাংবাদিকতার দৃষ্টিভঙ্গিতে নয়, বরং কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্বার্থের ভিত্তিতে গুরুত্বের বিষয় ঠিক করে।
আল জাজিরা খুব পুরাতন কোন টেলিভিশন না। সারা পৃথিবীতে এই যে ইসলাম ফোবিয়া বলে-বলে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে আল জাজিরা এর মুখপাত্র। কাতার সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ও অর্থায়নে পরিচালিত একটি সংবাদ সংস্থা আল জাজিরা। আল জাজিরা এবং ডেভিড বার্গম্যানকে নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হচ্ছে বিভিন্ন চ্যানেল, পত্রিকায়, তাই চর্বিত চর্বণের দিকে যাচ্ছি না।
আমরা যারা প্রবাসে থাকি হারিস-আনিসের মত শত-শত মানুষকে আমরা চিনি, কয়দিন আগেও শুধুমাত্র রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রী-এমপি এবং আমলাদের সাথে ছবি দেখিয়ে কাজী জাবের নামের এক ব্যক্তি ব্যবসার কথা বলে লন্ডনের এক ব্যবসায়ীর দুই কোটি টাকা হজম করে ফেলেছে। সাহেদ কিংবা নবাব পরিবারের পরিচয়ে প্রতারণার খবর তো সারা দেশের মানুষই জানেন।
ইউরোপ আমেরিকায় ও এমন বাংলাদেশির অভাব নাই। আর বাংলাদেশের সব কর্মকর্তা মন্ত্রী-এমপি যে দুধে ধোয়া তুলসীপাতা সেটি ভাবারও কোন কারণ নাই। তাদের দুর্নীতির নানা চিত্র বাংলাদেশের গণমাধ্যমেই প্রচারিত হচ্ছে। এইসব নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু আল জাজিরা যে বিশাল অর্থায়নে নয়-ছয় করে জোড়াতালি দিয়ে একটি কাহিনী দাঁড় করিয়েছে তাদের মিথ্যাচার ধরতে ইনভেস্টিগেশনের প্রয়োজন নেই। তাদের দেওয়া ভাষ্য এবং যে সব উপাদান তারা দেখিয়েছে এর মধ্যেই সেই সব মিথ্যাচারের প্রমাণ আছে।
আল জাজিরা কোথাও প্রমাণ করতে পারেনি প্রধানমন্ত্রী কিংবা সেনাপ্রধান কোন ব্যবসা হারিসগংদের দিয়েছেন। একতরফা শুধু তাদের বক্তব্যই প্রচার করেছে। সেনাপ্রধান বিদেশে কোথাও তার ভাইদের নিয়ে ব্যবসায়ীক মিটিং করেছেন সেই প্রমাণ নেই। যে পাসপোর্ট দেখিয়েছে কিংবা যে প্রক্রিয়ায় পুরো পার্সেল প্যাকেটটি তাদের হাতে পৌঁছেছে তা পুরোটাই ভুয়া। যারা এইসব গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র পার্সেল করেন তারা জানেন যে ব্যক্তির নামে পার্সেলটি আসে তাকে স্বাক্ষর করে আইডি দেখিয়ে পার্সেলটি গ্রহণ করতে হয়। বারবার প্রেরকের নাম মেজর রশীদ দেখিয়েছেন ডেভিড বার্গম্যান কিন্তু একবারের জন্যও প্রাপকের নাম ঠিকানা দেখালেন না! বললেন নামবদল করে নতুন পাসপোর্ট বানিয়েছেন হাসান, অথচ সেই পাসপোর্টই বিভিন্ন দেশের ভিসা লাগানো! হাঙ্গেরির বুলেট ভাল সেনাবাহিনী কিনবে নিশ্চয় সেই ঠিকাদারি পাইয়ে দেওয়ার প্রস্তাব ৫ বছরের গবেষণায় শুধু প্রস্তাব পর্যন্তই। সেনাবাহিনী সেটি কিনেছে কি না, আর কিনলে ঠিকাদার কোম্পানিকে ছিল এর কোন প্রমাণ ডকুমেন্টারিতে নেই। সবচেয়ে বড় প্রতারণাটা করেছে আল জাজিরা যার বয়ানে এই ডকুমেন্টারিটি এগিয়ে গেছে সেই স্যামি বা সামিউল। তার পরিচয় কী, ব্যাকগ্রাউন্ড কী? সে কোন কারণে তার ব্যবসায়ীক অংশীদারদের ব্যক্তিগত আলাপচারিতা ব্যবসায়ী মিটিং ভিডিওরেকর্ড করলো? অন্তত লন্ডন হাইকমিশনের বক্তব্য নেয়ার সুযোগ ছিল আল জাজিরার আদৌ হাসান ওরফে হারিসের সাথে তাদের কোন যোগাযোগ আছে কি না।
ডকুমেন্টারির এই জাতীয় প্রচুর গরমিল একদম সাদাচোখেই ধরা পড়ে। বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত ডেভিড বার্গম্যান আসলে তার অপমানের জ্বালা ভুলতে পারছেন না। আল জাজিরার কাঁধে ভর করে সেই প্রতিশোধের জন্য মরিয়া হয়ে আবোলতাবোল বকছেন এখন। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বাংলাদেশের যে সব দেশপ্রেমিক আবেগে আপ্লুত হয়েছেন, যাদের চোখের জলে অনলাইন ভেসে গেছে, বাংলাদেশে সূর্য উঠে কেন? সব অন্ধ!
তাদের কাছে সবিনয় জিজ্ঞাসা ২০১৪ সালে আল জাজিরা যখন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মিথ্যাচার করেছিল, সেদিন কি অন্ধ হয়ে ছিলেন? ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের তাণ্ডব শেষে আল জাজিরা যেদিন বনানী কবরস্থানে এক বোবা মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়ে হাজার-হাজার লাশের গল্প প্রচার করেছিল। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে যখন শহীদুল আলমদের দিয়ে ধর্ষণ আর লাশের গল্প ফেঁদেছিলো সেদিন কি বাংলাদেশে সূর্য ওঠেছিল। আপনি কি সেদিন অন্ধ ছিলেন, বধির ছিলেন?
বিষয় আসলে এসবের কিছুই না। মূল লক্ষবস্তু বাংলাদেশের সরকারের পতন। একে একে রাজনীতির মাঠ থেকে ওয়াকওভার দিয়ে যখন সাজঘরে ফিরে গেছেন সব স্থানীয় খেলোয়াড়গণ। তখন মাঠে নেমেছে এইসব আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়গণ। দেশের ক্লান্ত শ্রান্ত খেলোয়াড়গণ শয়নে, স্বপনে, নিশি জাগরণে কিংবা দিবাস্বপ্নে বিভোর হয়ে ভাবেন সেনাবাহিনী এসে তাদের সাথে খেলায় নামবে, এবং উনারা জিতিয়ে দেবেন।
বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের একজন-একজন করে জিজ্ঞেস করে দেখুন, তারা কিসের আশায়, কিসের অপেক্ষায় রাজনীতি করছে এখন। আমি যাদের সাথে কথা বলেছি বিভিন্ন সময় তাদের দুইটা ধারণা হয় বাংলাদেশে একটা ইসলামী বিপ্লব ঘটবে না হয় সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করবে। তাহরির স্কয়ারে আমরা শুনেছিলাম ‘লং লিভ আল জাজিরা’ স্লোগান। সেই স্বপ্ন আল জাজিরা হয়তো বাংলাদেশেও দেখছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ সম্পর্কে আল জাজিরার খুব একটা ধারণা আছে বলে আমার মনে হয় না। আল জাজিরা বাংলাদেশে হেফাজত দিয়ে ট্রাই করেছে, বারবার করছে, এবার ইসরায়েল ইস্যু এবং সেনাবাহিনী এই দুই ইস্যুকে একসাথে নিয়ে মাঠে নেমেছে যদি একটাও কাজ করে।
সেনাবাহিনীর প্রধান নিয়োগ দেয় সরকার এবং রাষ্ট্রপ্রধান, এবং সেখানে রাজনৈতিক সরকার হিসাবে সেনাপ্রধান নির্বাচনে রাজনৈতিক হিসাবনিকাশ থাকে। যতদিন আজিজ সেনাপ্রধান থাকবেন ততদিন তাদের উসকানি কিংবা সেনাবাহিনী নিয়ে নোংরামি করার সুযোগ নেই। তাই আজিজ খেদাও আন্দোলনের অংশ বিশেষ এই ডকুমেন্টারি।
আল জাজিরা মূলত যে গুজবটা বাজারে দিতে চায় সেটি ডকুমেন্টারি প্রচারের পরের দিন আলাদা করে আবার সংবাদ করেছে, যা সেই ডকুমেন্টারির ডামাডোলে অনেকের চোখ এড়িয়ে গেছে হয়তো। সংবাদটির মূল ভাষ্য হচ্ছে আল জাজিরার তদন্তে দেখা গেছে বাংলাদেশ ইসরায়েলে তৈরি নজরদারি সরঞ্জাম কিনেছে যা একসাথে কয়েকশ লোকের মোবাইল ফোন পর্যবেক্ষণ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। মাঠ পর্যায়ে তাদের লাখো কর্মী প্রস্তুত, ধর্মীয় সম্মেলনের নামে রাজনৈতিক নেতাগণ প্রস্তুত প্রতিটা ওয়াজ মাহফিলে রঙ মাখিয়ে এসব প্রচার করবে তারা। সরকার কীভাবে ইসরায়েলের ইহুদিদের যন্ত্র দিয়ে দেশের মুসলমানদের নিয়ন্ত্রণ করছে।
আল জাজিরা শুধু যে এখানেই থেমে থাকবে তা না সিরিজ আকারে তারা ডকুমেন্টারি তৈরি করেছে বলে ধারণা করা যায়। কারণ ডকুমেন্টারিতে পিছনে যাদের কণ্ঠ ব্যবহার করা হয়েছে তারা লন্ডনের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নাট্যকর্মী ও বিভিন্ন পেশার মানুষ। নানা সূত্রে যতটুকু জেনেছি সেখানেও প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে আল জাজিরা। তাদেরকে পুরো ডকুমেন্টারির বিষয়বস্তু জানতে দেওয়া হয়নি। একেকজনকে একেক অংশের স্ক্রিপ্ট দিয়ে তাদের ভয়েজ ওভার নিয়েছে। সেই থেকে ধারণা করা হচ্ছে আল জাজিরা ধারাবাহিক ভাবে প্রচারের জন্য বাংলাদেশ সংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছে, এবং এদের ১০০ থেকে ২৫০ পাউন্ড পর্যন্ত পারিশ্রামিক দেয়া হয়েছে।
এখন যত যেভাবেই আল জাজিরাকে প্রশ্নবিদ্ধ করিনা কেন তাদের চরিত্র ও উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা করি না কেন, কিছু বিষয় চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে তারা। সেনাপ্রধানের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার যে নাজুক অবস্থা। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিয়ে তখন প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। সেনাপ্রধানের উপর তৃতীয় পক্ষ যেভাবে নজরদারি করেছে তার ব্যক্তিগত জীবনের ভিডিও পাচার হয়েছে, সেটি ভাবার বিষয়। নাকি সেনাবাহিনীতে কর্মরত সেনাপ্রধানের কাছের কেউ এই ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত সেটিও দেখার বিষয়।
রাজনীতিতে হাল ছেড়ে দেওয়া বিএনপি-জামায়াত তাকিয়ে আছে সেনাবাহিনীর দিকে। লন্ডনে বাংলাদেশের রাজনীতি কোন কোন ক্ষেত্রে বলা চলে বাংলাদেশের চেয়েও গতিশীল এবং এর বিভিন্ন আনুষঙ্গিক কারণও বিদ্যমান। সেনাবাহিনী নিয়ে গুজব ছড়িয়ে এক ধরনের পুলক অনুভব করেন। বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত আমার এক বন্ধু কয়েক মাসে দুই তিনবার আমাকে ফোন করে জানতে চেয়েছে বাংলাদেশে মনে হয় কিছু একটা ঘটে যাচ্ছে। এবং সেটা সেনাবাহিনী সংক্রান্ত! আমি তাকে বিমানের টিকেট কেটে শান্তিমত ঘুমাতে বলি, কিছু হলে ঘুম থেকে ওঠে বাংলাদেশে চলে যাবে। অযথা ঘুমের ক্ষতি করার দরকার নাই। আমার মনে হয় দিনের পর দিন এইসব গুজব ছড়িয়ে তারা আসলে একটি ক্ষেত্র তৈরি করতে চেয়েছে।
আরও অবাক করার বিষয় হলো, আল জাজিরার নির্মিত এই ডকুমেন্টারিটি তাদের টেলিভিশনে প্রচারের আগেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে টাকা দিয়ে সেটির প্রচার চালানো হয়, এবং এই প্রচারটি চালিয়েছেন বিরোধী পক্ষ। টেলিভিশনে প্রচারের আগেই তাদের হাতে এই ভিডিওটি পৌঁছালো কী করে? এই প্রশ্নটা কি কেউ করেছেন? আল জাজিরা কেন এবং কাদের হাতে ভিডিওটি তুলে দিয়েছে, উদ্দেশ্য কী?
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিতান্তই একটা দায়সারা গোছের প্রতিবাদলিপি পাঠিয়েছে। লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশন রাতেই সেই কপিটি সাংবাদিকদের ইমেইল করেছেন। ডকুমেন্টারিতে লন্ডন হাইকমিশনকে জড়িয়ে যে বক্তব্য এসেছে হাইকমিশন সেই বক্তব্যের প্রতিবাদ এবং আল জাজিরার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পদক্ষেপ সম্পর্কে কোন মন্তব্য করেননি। লন্ডন হাইকমিশনের উচিত যদি হাসানের সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতা না থাকে আল জাজিরার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া।
একতরফা বক্তব্যের এই ডকুমেন্টারির সাংবাদিকতার ধরণ, মান এবং বিষয়বস্তুর বিতর্ক নিয়ে ডয়েচে ভ্যালে এবং বিবিসিও প্রতিবেদন করেছে। পাশাপাশি তারা হারিস-আনিস-জোসেফ নিয়েও প্রশ্ন রেখে গেছে। সেনাপ্রধানের ছেলের বিয়েতে কোন পলাতক আসামি এইভাবে উপস্থিত থাকার বিষয়টি নৈতিক কি না, এই বিষয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে নিশ্চয়। মানবিক কারণ দেখিয়ে আত্মীয়তা দেখিয়ে হয়তো তর্কের সুযোগ আছে।
জুয়েল রাজ, ব্রিটেন প্রবাসী সাংবাদিক
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sunamganjbarta.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sunamganjbarta.comআইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
১১৪ বার