নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপে ১১ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এতে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের মতো বিষয়গুলো রয়েছে।এর আগে আজ বুধবার (১৮ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ২১ সদস্যের প্রতিনিধিদল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে যান।সেখানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) খান মোহাম্মদ (কে এম) নুরুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংলাপে ভোটের বিষয়ে দলীয় অবস্থান জানান ওবায়দুল কাদের।

আওয়ামী লীগের ওই ১১ দফা প্রস্তাব হুবহু তুলে ধরা হলো :

১. ইংরেজি ভাষায় প্রণীত ‘The Representation of the people of the order 1972’ ও ‘The Dilimitation of constituencies ordinance 1976’-এর বাংলা সংস্করণ প্রণয়নের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সমর্থন থাকবে (RPO এর অনুচ্ছেদ ৯৪/এ অনুসরণযোগ্য)।

২. নির্বাচনে অবৈধ অর্থ এবং পেশিশক্তির ব্যবহার রোধকল্পে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে বর্ণিত নির্বাচনসংক্রান্ত নির্দেশনা এবং বিদ্যমান নির্বাচনী আইন ও বিধিমালা নিরপেক্ষ ও কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা।

৩. প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত এবং নির্বাচনী দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার অপেশাদার ও দায়িত্বহীন আচরণের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সংস্থার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ।

৪. নির্বাচন পরিচালনায় কেবলমাত্র প্রজাতন্ত্রের দায়িত্বশীল কর্মচারীদের মধ্য থেকে যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার পদে নিয়োগ করা।

৫. তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণে আগ্রহী প্রার্থীদের বাছাই করে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থী চূড়ান্ত করা।

৬. নির্বাচন পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে দেশি ও বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও সতর্কতা অবলম্বন করা। কোনোভাবেই কোনো বিশেষ দল বা ব্যক্তির প্রতি আনুগত্যশীল হিসেবে পরিচিত বা চিহ্নিত ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সংস্থাকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে দায়িত্ব প্রদান না করা।

৭. নির্বাচনের দিন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াসহ গণমাধ্যমকর্মীদের নির্বাচনী বিধি-বিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে দায়িত্ব পালনের জন্য কার্যকর নির্দেশনা প্রদান। গণমাধ্যমকর্মীদের উপযুক্ত পরিচয়পত্র ও তাঁদের দায়িত্ব কর্ম এলাকা নির্ধারণ করা।

৮. নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থীসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়োজিত পোলিং এজেন্টদের তালিকা ছবি ও এনআইডিসহ (কেন্দ্রভিত্তিক) নির্বাচন অনুষ্ঠানের কমপক্ষে তিনদিন পূর্বে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের নিকট প্রদান নিশ্চিত করা এবং প্রিসাইডিং অফিসার কর্তৃক তাদের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে ভোটকক্ষে প্রবেশ ও নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত অবস্থানের অনুমতি প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করা।

৯. সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য বর্তমানে বিরাজমান সকল বিধিবিধানের সাথে জনমানুষের ভোটাধিকার সুনিশ্চিত করার স্বার্থে আধুনিক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহের ন্যায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘ইভিএম’-এর মাধ্যমে ভোটদান প্রবর্তন করা।

১০. নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর হতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিন এবং নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত নির্বাচন-পরবর্তী সময়ের জন্য প্রতিটি নির্বাচনী এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর ন্যস্ত থাকবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে কোনো পরিস্থিতিতে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যের নিয়োগ করা যাবে ১৮৯৮ সালে প্রণীত ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৯-১৩১ ধারায় এবং সেনা বিধিমালায় In aid civil power শিরোনামে সুস্পষ্টভাবে তার উল্লেখ রয়েছে।

১১. Delimitation বিষয়টি বিশেষ করে আদমশুমারির সাথে সম্পর্কিত। সর্বশেষ ২০১১ সালে আদমশুমারির ওপর ভিত্তি করে (যা ২০১৩ সালে প্রকাশিত) ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে Delimitation করা হয়েছে। নতুন আদমশুমারি ব্যতীত পুনরায় Delimitation কার্যক্রম গ্রহণ করা হলে বিভিন্ন আইনগত জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। বিজ্ঞ কমিশন নিশ্চয়ই অবগত রয়েছেন, ২০১৮ সালের শেষ দিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এমতাবস্থায় ৩০০ আসনের Delimitation-এর মতো একটি জটিল কার্যক্রম সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে যেসব আইনানুগ পদক্ষেপ গৃহীত হয়ে থাকে; তথা খসড়া থেকে আপিল নিষ্পত্তি পর্যন্ত যে মহা কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করতে হয়, তা সময়স্বল্পতার কারণে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে কি না, সে বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া অত্যাবশ্যক। কমিশনের সামনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছাড়াও স্থানীয় সরকারের অনেকগুলো নির্বাচন রয়েছে। সব দিক ভেবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অনুরোধ করছি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn