উপজেলা পরিষদ নির্বাচন : প্রার্থিতা নিয়ে আ.লীগে বিশৃঙ্খলা
সুনামগঞ্জের ১০টি উপজেলায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থিতা নিয়ে হ-য-ব-র-ল অবস্থা আ.লীগে। প্রতি উপজেলায় অর্ধ ডজনের বেশি প্রার্থী হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন জেলা নেতৃবৃন্দ। এছাড়া উপজেলাকে ডিঙিয়ে জেলা নেতৃবৃন্দের কাছে জীবনবৃত্তান্ত দেয়ারও অভিযোগ উঠেছে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা উপজেলায় না গিয়ে চূড়ান্ত তালিকায় স্থান পেতে জেলার দুই শীর্ষ নেতার কাছে ধরণা দিতে ঢাকায় ছুটছেন। আ.লীগ সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিটি উপজেলায় ইউনিট কমিটির বর্ধিত সভা করে প্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত জমা নেয়ার কথা। কিন্তু দু’একটি বাদে অধিকাংশ উপজেলায় বর্ধিত সভা দূরে থাক সাধারণ সভা হয়নি আসন্ন নির্বাচন নিয়ে। এর মধ্যে দলে অভ্যন্তরীণ তীব্র কোন্দল থাকায় সম্ভাব্য প্রার্থীরা উপজেলা কমিটিকে মানতে চাইছেন না। প্রতি ইউনিটে চূড়ান্তভাবে তিনজনের নাম দেয়ার কথা থাকলেও অর্ধডজনের বেশি প্রার্থী হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরেই আ.লীগের দুটি করে কমিটি। এই দুটি ইউনিটে একাধিক তালিকা করে প্রার্থীদের নাম জমা দিয়েছেন সভাপতি, আহ্বায়ক দাবিদার নেতারা। প্রার্থিতার নাম দেয়ার ক্ষেত্রে এসব ইউনিটে বর্ধিত সভা হয়নি। নিজেদের বলয়ের প্রার্থীদের নাম প্রথমে রেখে প্রতিপক্ষ গ্রুপের নাম শেষদিকে জুড়ে দেয়া হয়েছে।
ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা নিজেরাই প্রার্থী। তারা নিজেরা জীবনবৃত্তান্ত জমা দেয়ার পাশাপাশি অন্যদেরটাও জমা নেন। কিন্তু চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে আগ্রহী অন্যদের নাম জেলা কমিটিতে জমা হবে কিনা তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় একই অবস্থায়। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় গোপন ভোট আয়োজন নেতাদের বিশৃঙ্খলার কারণে প- হয়ে গেছে। ফলে প্রায় একডজন প্রার্থীর নাম নিয়ে ঢাকা গেছেন উপজেলা আ.লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। সদর উপজেলার প্রার্থিতার বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ।
দিরাই ও শাল্লা উপজেলায় স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. জয়া সেনগুপ্তা ও জেলা আ.লীগের সভাপতি মতিউর রহমানের অনুসারীরা পৃথকভাবেই কর্মসূচি পালন করেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে কোন্দল চরম আকার ধারণ করেছে। দুই নেতার অনুসারীরা পৃথকভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন নির্বাচনের জন্য। নির্বাচনে দুই উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থীর আশঙ্কা করছেন নেতাকর্মীরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে দিরাই গণমিলনায়তনে মতিউর রহমান অনুসারী জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সিনিয়র সদস্য ও দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি চেয়ারম্যান প্রার্থী আলতাব উদ্দিনের সমর্থনে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক সিলেট জজ কোর্টের এডিশনাল পিপি অ্যাডভোকেট সামছুল ইসলাম।
মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, আওয়ামী লীগ টিকিয়ে রাখতে হলে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আলতাব উদ্দিনের উপরই আস্থা রাখছেন তৃণমূল আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। দক্ষিণ সুনামগঞ্জে দলীয় সমর্থনের আশায় সম্ভাব্য প্রার্থীরা পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানের পেছনে ছুটছেন। এলাকায় না থেকে তারা পরিকল্পনারমন্ত্রীর দোয়া নিয়ে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিচ্ছেন জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে। জেলা আ.লীগের কোষাধ্যক্ষ ইশতিয়াক আহমদ শামীম বলেন, প্রতিটি উপজেলা থেকে তিন জনের নাম দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রতিটি উপজেলায় ৫জনেরও বেশি প্রার্থী। ফলে সবার নামই গ্রহণ করছেন জেলা নেতৃবৃন্দ। সব উপজেলার নাম এখনো জমা হয়নি জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে। এ ব্যাপারে জানতে জেলা আ.লীগের সভাপতি মতিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবীর ইমনের মুঠোফোনে বারবার ফোন করা হলেও তারা কল রিসিভ করেননি।