রফিকুল ইসলাম কামাল ::
সিলেট সিটি করপোরেশনের বিগত নির্বাচনে আগে নগরীর ফুটপাত দখলমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আরিফুল হক চৌধুরী। হেভিওয়েট প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে পরাজিত করে মেয়রের চেয়ারে বসার পর সে লক্ষ্যে কাজও শুরু করেছিলেন আরিফ। তাঁর ফুটপাত দখলমুক্তকরণ অভিযানের সুফল পেয়েছিলেন নগরবাসী। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যার ঘটনায় দুটি মামলায় অভিযুক্ত হয়ে আরিফ কারান্তরীণ হওয়ার পর পুরনো চেহারা ফিরে পায় নগরীর ফুটপাত; ফের দখলে চলে যায় হকার ও ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের।

চলতি বছরের মে মাসে আদালতের এক নির্দেশের পর পুনরায় অ্যাকশন শুরু করেন মেয়র আরিফ। নগরীর জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, কোর্টপয়েন্টসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি এলাকার ফুটপাত থেকে উচ্ছেদ করা হয় হকারদের। কিন্তু পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে উচ্ছেদের খড়গ নেমে আসায় ক্ষুব্দ হকাররা। গত রমজান মাস থেকেই এ নিয়ে আন্দোলনে হকাররা। এদিকে হকারদের দাবিতে তাদের পুনর্বাসনের জন্য নগরীর বন্দরবাজারস্থ হকার্স মার্কেটের দুটি ব্লক ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু সেখানকার ব্যবসায়ীরা মার্কেট ভাঙার বিরোধীতা করছেন। একদিকে হকারদের পুনর্বাসনের জোরালো দাবি, অন্যদিকে যেখানে পুনর্বাসন করা হবে, সেখানকার ব্যবসায়ীদের বিরোধীতা-এসব বিষয় মেয়র আরিফের জন্য যেন উভয় সংকট হয়ে দেখা দিয়েছে।

সিলেট মহানগরীর অন্যতম প্রধান সমস্যা হচ্ছে ফুটপাত। হকার, ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী, মৌসুমী ব্যবসায়ী, এমনকি স্থায়ী ব্যবসায়ীরা পণ্যের পসরা সাজিয়ে দখল করে নেন ফুটপাত। ফলে চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হয় নগরবাসীকে। আরিফ মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁর তৎপরতায় দীর্ঘদিনের এ সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পেয়েছিলেন নগরবাসী। তবে তিনি কারান্তরীণ হওয়ার পর অবস্থা যেই-সেই হয়ে যায়। চলতি বছরের শুরুর দিকে আইনী লড়াইয়ে মুক্তি পান আরিফ। মেয়রের চেয়ার ফিরে পেয়ে কিছুটা থিতু হতে না হতেই ফুটপাত নিয়ে পান আদালতের নোটিশ।

গত ১৭ মে ফুটপাত নিয়ে আদালতে একটি আবেদন করেন সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হোসেন আহমদ। সিলেট মুখ্য মহানগর হাকিম সাইফুজ্জামান হিরো ২৫ মে ফুটপাতের দখলদার ও দখলদারদের নেপথ্যের প্রভাবশালীদের নাম জানানোর নির্দেশ দেন মেয়র আরিফকে। এর প্রেক্ষিতে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকেন আরিফ। ২৮ মে অনুষ্ঠিত সে বৈঠকে ফুটপাত দখলমুক্ত করতে গঠন করা হয় একটি কমিটি। সে কমিটি ফুটপাতের দখল ছাড়তে হকারদের তিনদিনের সময় বেঁধে দেয়। ওই সময়ের মধ্যে দখল না ছাড়ায় ২ জুন থেকে অ্যাকশন শুরু করেন মেয়র আরিফ। পুলিশ ও সিসিকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে সে অ্যাকশনে দখলমুক্ত করেন কয়েকটি ফুটপাত।

ফুটপাত থেকে উচ্ছেদ হয়ে আন্দোলনে নামে হকাররা। দ্রুততার সাথে তাদের পুনর্বাসনের দাবি জানায় তারা। গত রমজানে এ নিয়ে শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচীও পালন করে হকাররা। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে তাদেরকে পুনর্বাসনের আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু সে আশ্বাসের বাস্তবায়ন না হওয়ায় গতকাল রবিবার আবারও রাজপথে কর্মসূচী পালন করে হকাররা। কর্মসূচী থেকে মেয়রকে তিনদিনের সময় দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় হরতাল, ঘেরাওয়ের মতো কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করার হুশিয়ারি দিয়েছে তারা।

এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর সর্বস্তরের হকার্স ঐক্য পরিষদের আহবায়ক রকিব আলী বলেন, ‘আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমাদেরকে বারবার পুনর্বাসনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তা করা হয়নি। বাধ্য হয়ে রাজপথে নেমেছি আমরা।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের পুনর্বাসনে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে প্রয়োজনে হরতাল, ডিসি অফিস ও সিটি করপোরেশন অফিস ঘেরাওয়ের কর্মসূচী দেব আমরা।’

হকারদের পুনর্বাসনের বিষয়ে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘হকারদের জন্য নগরীতে হকার্স মার্কেট করা হয়েছিল। কিন্তু হকাররা সেখানে থাকেনি। পুরনো হকার মার্কেটের বি ও ডি ব্লক ভেঙে নতুন পরিকল্পনা মার্কেট নির্মাণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেখানে হকারদের পুনর্বাসন করা হবে। রবিবার থেকে মার্কেট ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। দুই মাসের মধ্যে এ কাজ শেষ হবে। প্রাথমিকভাবে পুরনো মার্কেটের কিছু জায়গায় শেড নির্মাণ করে হকারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।’

এদিকে, হকার্স মার্কেটের বি ও ডি ব্লক ভাঙায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই হঠাৎ করে মার্কেট ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। ব্যবসায়ী আবুল লেইছ ও আবুল হোসেন বলেন, ‘হকার মার্কেট ভাঙার ব্যাপারে আমাদেরকে কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি। রবিবার হঠাৎ করে মার্কেট ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। এতে আমরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। আমরা নিরীহ ব্যবসায়ীরা কোথায় যাবো।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির এক নেতা বলেন, ‘মার্কেট ভাঙার ব্যাপারে ব্যবসায়ীরা বৈঠকে বসে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn