এরশাদ ও সরকারের আপিলের শুনানি দ্বৈত বেঞ্চে
দুর্নীতির মামলায় সাজার রায়ের বিরুদ্ধে সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ ও সরকারের তিনটি আপিলের উপর শুনানি হবে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে। বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীস্মদেব চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটি শুনানির জন্য পাঠিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। গত বৃহস্পতিবার এই বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস এই তিনটি আপিল প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠিয়েছিলেন। এরপরই প্রধান বিচারপতি মামলাটি শুনানির জন্য ওই বেঞ্চে পাঠান।
একটি দুর্নীতির মামলায় বিচারিক আদালত সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদকে তিন বছরের দণ্ড দিয়েছিলো। এই সাজার রায় বাতিলের জন্য হাইকোর্টে আপিল করেন তিনি। অপরদিকে তৎলীন সরকার নিন্ম আদালতের দেয়া সাজা বৃদ্ধির জন্য দুটি আপিল করে। তিনটি আপিলই দুই যুগ ধরে বিচারাধীন। সম্প্রতি এরশাদের আপিলের ওপর শুনানি গ্রহণ করে গত বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য ছিলো। কিন্তু রায় হয়নি। হাইকোর্ট বলেন, মামলার নথিপত্রে দেখা যাচ্ছে যে ১৯৯২ সালেই সাজা বৃদ্ধির জন্য সরকার দুটি আপিল করেছিলো। একটি রায় থেকে তিনটি আপিলের উদ্ভব হয়েছে। এগুলোর একসঙ্গে শুনানি হওয়া উচিত। এ অবস্থায় ন্যায় বিচারের স্বার্থে প্রয়োজনীয় আদেশ দানের জন্য তিনটি আপিলসহ মামলার নথি প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো হলো। বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুসের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেন।
আদেশের পর দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, এরশাদের সাজা বাড়ানোর জন্য রাষ্ট্রপক্ষ ওই আপিল দুটি করেছিল। ওই দুটি আপিল আদালতের নজরে এসেছে। সেটি আমাদের (দুদকের) জানার কথা নয়। আমরা এর পক্ষভুক্তও ছিলাম না। ১৯৯৬ সালে ওই দুটি আপিলের সঙ্গে এরশাদের আপিলটির শুনানি করতে হাইকোর্টের একটি আদেশ ছিল। সেটিও আদালতের নজরে এসেছে। ফলে আদালত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন আলাদা করে একটি আপিলের রায় দিতে গেলে সাংঘর্ষিক হতে পারে। কাজেই ন্যায় বিচারের স্বার্থে তিনটা আপিলের নথিই প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো হলো। এখন প্রধান বিচারপতি এই তিনটা আপিল যে বেঞ্চে পাঠাবেন সেখানেই শুনানি ও নিষ্পত্তি হবে।
এরশাদের আইনজীবী শেখ সিরাজুল ইসলাম বলেন, এইচএম এরশাদ সম্পূর্ণভাবে নির্দোষ। আমরা আশা করি, এ মামলা থেকে তিনি খালাস পাবেন। রাষ্ট্রপতি থাকাকালে পাওয়া বিভিন্ন উপহার সামগ্রী রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা না দেওয়া ও জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ থাকার অভিযোগে ১৯৯১ সালের ৮ জানুয়ারি তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো এরশাদের বিরুদ্ধে ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি দুর্নীতির মামলা দায়ের করে। মামলায় ২ কোটি ৯৪ লাখ ৮৬ হাজার ৭৬৫ টাকার আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়েছিলো। এই মামলায় ১৯৯২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি নিন্ম আদালত এরশাদকে তিন বছরের সাজা দেয়। এই সাজার রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরই আপিল করেন এরশাদ। পাশাপাশি নিন্ম আদালতের দেয়া সাজা পর্যাপ্ত নয় মর্মে হাইকোর্টে ওই বছরই আরও দুটি আপিল করে সরকার। তিনটি আপিলটি দুই যুগ ধরে হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। গতবছর দুদক এই মামলায় পক্ষভুক্ত হয়ে দ্রুত শুনানির জন্য আবেদন জানায়। এরপরই এরশাদের আপিলের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। গত ৯ মার্চ হাইকোর্ট শুনানি শেষে ২৩ মার্চ রায়ের জন্য দিন ধার্য করে দেন। কিন্তু রায় হয়নি।