করোনাকালে অনলাইন এবং সামাজিক যোগাযোগেমাধ্যমে নারীদের হয়রানি ও যৌন হয়রানির ঘটনা বেড়েছে। জাতিসংঘের রিপোর্টে উঠে এসেছে এই তথ্য। করোনাকালে অনলাইন এবং সামাজিক যোগাযোগেমাধ্যমে নারীদের হয়রানি ও যৌন হয়রানির ঘটনা বেড়েছে। জাতিসংঘের রিপোর্টে উঠে এসেছে এই তথ্য। থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনে সম্প্রতি এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে অনলাইনে হয়রানির যেসব ঘটনা উঠে এসেছে তা ভয়াবহ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতের মুম্বইয়ের এক তরুণী জানিয়েছেন, তার প্রেমিক তার নগ্ন একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। তরুণী এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রেমিক জানায়, এই ছবি দেখে সব পুরুষরা মেয়েটিকে কামনা করবে কিন্তু পাবে না। কারণ তরুণী কেবল প্রেমিকের। এই কথায় মেয়েটি আশ্বস্ত হলেও পরে তার উপলব্ধি হয় তাকে ছেলেটি যৌনকর্মীর পর্যায়ে নামিয়েছে।
করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করলে অনেক দেশেই লকডাউন আর কড়াকড়ি বাড়ানো হয়। বেশিরভাগ মানুষ ঘরে বসে কাজ করা শুরু করেন বা সময় কাটাতে শুরু করেন। আর সময় কাটানোর প্রধান মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায় মোবাইল আর ল্যাপটপ। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব ফাউন্ডেশনের জ্যেষ্ঠ গবেষক আজমিনা ধ্রোডিয়া জানিয়েছেন, নারীদের প্রতি ডিজিটাল হয়রানির ঘটনা অনেক বেড়েছে এ সময়। করোনার আগের তুলনায় অনলাইনে নারীদের হয়রানির ঘটনা করোনাকালে দ্বিগুণ হয়েছে বলে জানান তিনি। কোন নারীর অনুমতি ছাড়া ছবি, ভিডিও এবং ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ারের ঘটনা অনেক বেড়েছে লকডাউনে।
একটি নারী অধিকার সংস্থা জানায়, সব বয়সি নারীরাই এ ধরনের হয়রানির শিকার হয়েছেন, বাদ যায়নি ৮ বছরের মেয়েও। প্রতি পাঁচজন নারীর একজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছেন বা ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছেন। সংস্থাটির চালানো এক জরিপে এক চতুর্থাংশ নারী জানিয়েছেন, তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। ইউএন উইমেন জানিয়েছে, করোনা সংক্রমণের পর নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা এত বেড়েছে যে আগের তুলনায় সাহায্য চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি ফোন এসেছে তাদের কাছে। শুধু তাই না, সাবেক প্রেমিক এবং হ্যাকাররা নারীদের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে ব্যক্তিগত ছবি ছড়িয়ে দিচ্ছে অনলাইনে।
নিউ ইয়র্কের আইনজীবী অখিলা কোলিশেঠি জানিয়েছেন, হোম অফিস করার ফলে এ ধরনের হয়রানির ঘটনা অনেক বেড়েছে। এমনকি কয়েকজন নারী জানিয়েছেন, তারা তাদের প্রেমিক বা স্বামীকে যদি পাসওয়ার্ড না জানান তবে তারা ধরে নেয় নারীটির সঙ্গে অন্য কারো সম্পর্ক আছে। নারী যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে যারা প্রচার চালান, তারা জানাচ্ছেন, এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লাভ হয় না। আর এ কারণেই এসব ঘটনা বেড়ে চলেছে।
ভারত, ক্যানাডা, ইংল্যান্ড, পাকিস্তান আর জার্মানিতে কেউ ব্যক্তিগত ছবি অনুমতি ছাড়া প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যায়। কিন্তু প্রযুক্তির অগ্রগতির কারণে এই আইন এখন আর যথেষ্ট নয়। গত বছরের নভেম্বরে বাংলাদেশ পুলিশ ‘পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন’ সেবার উদ্বোধন করে। এই সেবায় কাজ করা সব পুলিশ নারী। এর ফলে নারীরা তাদের অভিযোগ সহজেই জানাতে পারছেন তাদের কাছে। অনলাইনে যৌন হয়রানির ঘটনায় প্রতিদিন নারীদের হাজারো কল পাচ্ছেন তারা।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার এবং টিকটক থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে জানিয়েছে, তারা নারীদের হয়রানি বন্ধে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। করোনাকালে অফিস মিটিং-এর জন্য জুম ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। এসব ব্যবহারকারীদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, আমন্ত্রণ ছাড়া অপরিচিত অনেকেই এসব মিটিং এ ঢুকে পড়ছেন। টুইটার ব্যবহারকারী দুই তৃতীয়াংশ নারী জানিয়েছেন তারা অপরিচিত ব্যক্তিদের দ্বারা হয়রানির শিকার হয়েছেন।
জার্মান ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটের ফেলো কারোলিনে সিনডার্স বলেন, ‘‘যা ঘটছে তা আসলেই ভয়াবহ। এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে এ ধরনের ঘটনাগুলোর প্রতি আরও গুরুত্ব ও মনোযোগ দেয়া উচিত।” তবে এজন্য তিনি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহারকারীদের আরো সচেতন হতে বলেছেন। বলেছেন, যাতে ঘটনার সাথে সাথে তারা পুলিশের কাছে এবং ওই মাধ্যমে রিপোর্ট করে। তবে করোনাকাল দীর্ঘায়িত হওয়ায় এই সংকট মোকাবেলা সব দেশের জন্যই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সূত্র: ডয়েচে ভেলে।-পূর্বপশ্চিমবিডি
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
১০৮ বার