বার্তা ডেক্সঃজগন্নাথপুরে নলুয়ার ফসল তোলার যাতায়াত সড়ক নিজেদের টাকায় পাকা করছেন কৃষকরা। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর সরকারি সহায়তা না পেয়ে কৃষকদের টাকায় গত পাঁচ বছর ধরে সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও বৃহস্পতিবার থেকে কাজ শুরু হয়েছে। স্থানীয় কৃষকরা জানান, জগন্নাথপুর পৌরসভার শেরপুর এলাকা থেকে নলুয়ার হাওরের হরতাজপুর (ত্রিশ নামের) সড়কটি পাকাকরণের জন্য এলাকাবাসি দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসলেও সড়ক নির্মাণে কেউ কোন উদ্যোগ নেননি। বাধ্য হয়ে কৃষকরা নিজেদের অর্থ দিয়ে সড়ক পাকাকরণ কাজ শুরু করেন।

৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কে ২০১৭ সালে তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩০০ ফুট পাকাকরণ কাজ হয়, ২০১৮ সালে সাত লাখ টাকা ব্যয়ে ৬০০ ফুট, ২০১৯ সালে সাড়ে সাত লাখ টাকা ব্যয়ে ৭০০ ফুট, ২০২০ সালে ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে এক কিলোমিটার ও চলতি বছর সাড়ে সাত লাখ টাকা ব্যয়ে ৬০০ ফুট নির্মাণ কাজ করা হবে। শুক্রবার থেকে ওই সড়কের এলাকায় কাজ শুরু হয়।

এলাকাবাসী জানান, পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের ইকড়ছই, ছিলিমপুর, বলবল, ভবানীপুর, শেরপুর-যাত্রাপাশা, খালিকনগরসহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের প্রায় দুই হাজার কৃষক পরিবার শেরপুর- হরতাজপুর সড়ক দিয়ে নলুয়া হাওরের বোরো ফসল বাড়িতে নিয়ে যান। বোরো মৌসুমকালে ফসল তোলার সময় সড়কটি কর্দমাক্ত থাকে। এতে করে যাতায়াতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন কৃষকরা।

এ থেকে পরিত্রাণ পেয়ে স্থানীয়রা সরকারি সহায়তার দাবি জানিয়ে আসলেও কোনো সুফল মিলেনি। শেষে ফসলরক্ষায় পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর এই তিন ওয়ার্ডের কৃষকদের অর্থায়নে ২০১৭ সালে সড়কে পাকাকরণের কাজ শুরু হয়। সেই থেকে প্রতিবছর এই মৌসুমে কাজ শুরু হয়। গতকাল ওই সড়কের ত্রিশনামক এলাকায় কাজ শুরু হয়েছে।

পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর শেরপুর এলাকার বাসিন্দা লুৎফুর রহমান জানান, এ সড়ক দিয়ে নলুয়ার হাওরের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বোরো জমির ধান উত্তোলন হয়। সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কটি কাদাযুক্ত হয়ে সব ধরনের যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

তিনি বলেন, এলাকার কৃষকরা দীর্ঘদিন ধরে সড়ক পাকাকরণ কাজের জন্য দাবি জানিয়ে আসছেন। ২০১৯ সালের তৎকালিন জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সড়কের কাজ পরিদর্শন করে এ বছর কমপক্ষে এক কিলোমিটার কাজ করার ঘোষণা দেন। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি।

যাত্রাপাশার কৃষক বকুল গোপ বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি পাকা না থাকায় প্রতি বছর বৈশাখ মাসে ধান তুলতে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। যে কারণে অনেক কৃষক জমি অনাবাদি রেখেছেন। প্রতি বছর ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধের জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও ধান উত্তোলনের সড়ক নির্মাণে কোন পদক্ষেপ না নেওয়া দুঃখজনক।

শেরপুরের বাসিন্দা কাউন্সিলর ছমির উদ্দিন, হাওরের ফসল ওঠার পর বর্ষাকালে ডুবে যাওয়া কৃষকের জমি ফিসারির জন্য স্থানীয় কৃষককের লিজ দেওয়া হয়। আর ওই লিজের টাকায় প্রতিবছর সড়কে সামান্য সামান্য স্থান পাকা করা হচ্ছে। গত ৫ বছরে প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়ক কৃষকের অর্থ পাকা হয়েছে। এভাবে কাজ হলে কবে শেষ হবে তা বলা যাচ্ছে না।

স্থানীয় সরকার বভিাগরে জগন্নাথপুর উপজেলা কার্যালয়ের প্রকৌশলী গোলাম সারোয়ার বলেন, সড়কটি পৌরসভার অংশে রয়েছে। এটি এলজিইডির আইডিবিহীন সড়ক। তবে সড়কটি গেজেট হলে আমরা নির্মাণ করতে পারব। জগন্নাথপুর পৌরসভার মেয়র মেয়র আক্তার হোসেন বলেন, সড়কটি পৌরসভার আওতাধীন কিনা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখব। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে উদ্যোগ নেব আমরা।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn